সত্য লিখলেই সাংবাদিকের উপর হামলা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ০৫ ২০১৯, ১৮:৫৯

বদরুল বিন আফরোজ
সাংবাদিকতা যতোটা না পেশা তার চেয়ে অনেক বেশি নেশা, ভালোলাগা। এই নেশাটা হচ্ছে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করার নেশা। একজন চিকিৎসক যেভাবে মানুষের সেবা করতে পারেন তার চেয়ে অনেক বেশি সেবা করতে পারেন একজন সাংবাদিক।

সমাজ পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের খেসারতও কম দিতে হয়নি।
রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরতে গিয়ে দেশের অনেকে খ্যাতিমান সাংবাদিক ভাইয়ের প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিনিয়ত ফ্যাসিবাদী সরকারের হামলা মামলা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনাও কম নয়। তারপরও আপোষহীন সাংবাদিকতার চর্চা কমেনি।

ফ্যাসিবাদী সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে ভয়াবহ কালো আইন পাস করেছে সরকার। এ আইনের প্রতিটি লাইনে বাকস্বাধীনতা হরণের মতো অন্যায় নির্দেশনা রয়েছে। দেশের সংবিধান পরিপন্থী এ আইনে মুক্ত সংবাদমাধ্যম যেমন স্বাধীনতা হারিয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষেরও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সরকার যেন সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে… ।

সাংবাদিকরা যখন সরকার বা সরকার দলীয় আতি নেতা পাতি নেতা যে কারো অপরাধের আসল চিত্র তুলে ধরেন তখন সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী সরকারের মিথ্যা মানহানির মামলা দিয়ে হয়রানি ও খুনের ঘটনা রয়েছে উল্লেখযোগ্য। নিরাপত্তা সংকটে এখন ‘আপোষহীন সাংবাদিকতা’ এড়িয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা।

সাংবাদিকরা এখন কেন আগের মতো সাহসী সাংবাদিকতা কম করছেন? কেন ঝুঁকি নিচ্ছেন না বা কম নিচ্ছেন? এ ব্যাপারে দেশের অনেকে সিনিয়র সাংবাদিকেরা বলে সাংবাদিকতার ঝুঁকি কমেনি। আগের মতোই ঝুঁকি আছে। আগে সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেদন লিখতেন। বর্তমানেও সাংবাদিকতায় ঝুঁকি আছে। কিন্তু সাংবাদিকরা ঝুঁকি এড়িয়ে যান। হামলা, মামলা খুনে ভয়ে সাহসী সাংবাদিকতা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেককে।’

দেশের সাংবাদিকরা মনে করেন,আপোষহীন সাংবাদিকতার কারণে অনেক সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া প্রত্যেক সচেতন ও স্বাধীনচেতা নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের মাথার ওপরও অদৃশ্য খাঁড়ার মতো ঝুলে রয়েছে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার ভয়। কিন্তু সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়া এবং হামলার ঘটনায় বিচার না হওয়ার সংস্কৃতির কারণে সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিচ্ছে কম।’সাংবাদিকরা নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছেন। এক কথায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকরা গুটিয়ে চলছেন অনেকাংশে।

বাংলাদেশর প্রবীণ অনেক সাংবাদিকরা বলেন, ‘সাহসী কত সাংবাদিক হত্যার বিচার আজও হয়নি। দুর্বৃত্তদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। তারা মনে করে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করলে কিছু হয় না। অর্থাৎ সাংবাদিক হত্যা কিংবা নির্যাতনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি! এটাই সত্য। এজন্য বর্তমানে সাংবাদিকরা নিজেদের নিরাপত্তা বজায় রেখেই সাংবাদিকতা করছে।’সহকর্মীহত্যা অন্যায় অবিচার মিথ্যা মামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিতে চাননা। উল্টো সাংবাদিক নিজেরাই এখন ভয়ের মধ্যে থাকি।

আমাদের দেশে প্রতিবছর দু-চারজন করে সাংবাদিক খুন হচ্ছেন না বটে, কিন্তু তাই বলে আমরা মুক্তমনে স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে পারছি—এ কথা বলার উপায় নেই। সাংবাদিকদের মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে, প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। একই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একযোগে ষাট-সত্তরটা মামলা দায়ের করার মতো ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটে বৈকি। দৃষ্টান্ত ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সম্পাদক নঈম নিজাম প্রমুখ। এ ছাড়া বিভিন্ন সংবাদপ্রতিষ্ঠানের অনেক জেলা প্রতিনিধির বিরুদ্ধে হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।সাংবাদিকরা যাতে সত্য নিউজ প্রকাশ করতে না পারে। সরকারের বিরুদ্ধে যেন না লিখতে পারে।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের না হলে মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকতা আরো সংকুচিত হয়ে যাবে বলে মনে করেন দেশের বুদ্ধিজীবী ও খ্যাতিমান সাংবাদিকরা।