সংগ্রামী মহানায়ক আল্লামা আজীজুল হক রহ. বৈচিত্রময় রাজনৈতিক জীবন। – মুফতি ওযায়ের অামীন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ২০ ২০১৮, ১৯:১৫

একুশে জার্নাল: খেলাফত মজলিস-ই শায়খের প্রকৃত অনুসারীদের ঠিকানা। আদর্শ ও উদ্দেশ্য ঠিক রেখে সফলতার লক্ষ্যে দল পরিবর্তন করা শায়খুল হাদীসের জীবনের অন্যতম শিক্ষা। এস্তেকামত কাজে, লক্ষ্যে ও আদর্শে হতে হবে, দলান্ধ হয়ে দলে এস্তেকামত জরুরী নয়।
দল যদি বিপ্লবের অনুপযোগী হয়ে যায়, আদর্শ বিচ্যুত হয়ে যায় ও গঠনতন্ত্র বাস্তবায়নে অপারগ হয়ে যায় তখন সে দলে থাকা জরুরী নয়। ক্ষেত্রবিশেষ সড়ে আসা জরুরী। বিপ্লবীরা এমনই করে থাকেন। এমনই হয়ে থাকেন। সফল বিপ্লবী এরদোগানের জীবনেও এ বৈচিত্রময়তা প্রতিভাত হয়। শায়খুল হাদীসের প্রকৃত অনুসারীদের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে নতুন করে।

ছাত্র রাজনীতি:
শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক ছাত্রজীবনেই প্রিয় শিক্ষক শামসুল হক ফরিদপুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তান গঠন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

নেজামে ইসলামে যোগদান
পাকিস্তান গঠনের পর মাওলানা আতহার আলী ও শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন আলেম ইসলামী বিধান বাস্তবায়নের জন্য নেজামে ইসলাম পার্টি গঠন করলে তিনি তার নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় দলের পক্ষে গণমত আদায়ের লক্ষ্যে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সফর করেন।

আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন:
পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান কুরআন-সুন্নাহবিরোধী পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করলে গোটা পাকিস্তানে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) হযরত শামসুল হক ফরিদপুরী এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবতীর্ণ হলে আল্লামা আজিজুল হক তার মুখপাত্র হিসেবে বিরাট ভূমিকা পালন করেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি নির্বাচিত:
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে আলেমসমাজের প্রথম রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ গঠিত হলে তিনি এর সভাপতি নির্বাচিত হন।

খেলাফত আন্দোলনে যোগদান ও
হাফেজ্জী হুজুরের প্রধান মুখপাত্র:
১৯৮১ সালে হাফেজ্জী হুজুর ইসলামি খেলাফত বাস্তবায়নের আন্দোলনের তাহরীকে খেলাফত বাংলাদেশ নামে দল গঠন করেন। আল্লামা আজিজুল হক তখন হাফেজ্জী হুজুরের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮২ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে হাফেজ্জী হুজুর এ দুটি দেশ সফর করে সাদ্দাম হোসেন ও আয়াতুল্লাহ খোমেনীর সাক্ষাৎ করেন। এই সফরেও তিনি হাফেজ্জী হুজুরের মুখপত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা:
১৯৮৭ সালে তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ । এ সময় তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন।

খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা ও
উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যন নির্বাচিত:
১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন। মাওলানা আবদুল গাফফার রহ. সভাপতি ও অধ্যক্ষ মাসুদ খান মহাসচিব নির্বাচিত হন।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান:
১৯৯১ সালে সমমনা কয়েকটি ইসলামী দল নিয়ে তিনি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেন। তিনি এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট সে বছর সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একটি আসন (সিলেট-৫) লাভ করে।

ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ লংমার্চ:
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং এর পরবর্তী মুসলিম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ২ জানুয়ারি ১৯৯৩ সালে আল্লামা আজিজুল হক ঢাকা থেকে অযোধ্যা অভিমুখে লংমার্চে বের হন। এ লংমার্চে তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন শ্রেণীর অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করে। লংমার্চ খুলনা সীমান্তে পৌঁছলে বাধা প্রাপ্ত হয় এবং সেখানে গুলিতে দু’জন নিহত হয়। ইসলামি বিশ্বে তাঁর এই পদক্ষেপ প্রশংসিত হয় এবং উপমহাদেশ এবং আরবের বিভিন্ন আলেম তাঁকে লংমার্চের জন্য অভিনন্দন জানান। তাঁর এই পদক্ষেপের কারণে সৌদি আরবের কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং গবেষক আলেম শেখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ তাঁকে আলমুজাহিদুল কাবীর আখ্যা দেন।

এছাড়া বাবরি মসজিদ ভাঙার পর তিনি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং বিমান বন্দর ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেন। ফলে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ৯ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে তাকে গ্রেফতার করে। তবে জনগণের বিক্ষোভের কারণে পরবর্তী ৮ মে তারিখে সরকার শায়খুল হাদিসকে মুক্ত করে দেয়।

২০০৫ এরপর অসুস্থতা জনিত কারণে তিনি খেলাফত মজলিসের আমির পদ থেকে অব্যহতি গ্রহন করেন।