শুরু হলো ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ ২০১৯’

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১৫ ২০১৯, ২৩:৫১

একুশে জার্নাল ডেস্ক

আপনার তথ্য থানায় জমা দিন, পুলিশকে সহায়তা করুন, নিজে নিরাপদ থাকুন অন্যকে নিরাপদে রাখুন। সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এবং অপরাধের হুমকি থেকে এই মহানগরীর মানুষকে সুরক্ষিত রাখুন। ঢাকা মহানগরে বসবাসরত সম্মানিত নগরবাসীর তথ্য সংগ্রহের জন্য শুরু হলো ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ ২০১৯’।

১৫ জুন থেকে শুরু হয়ে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ চলবে ২১ জুন পর্যন্ত। ডিএমপি’র ৫০টি থানার ৩০২টি বিট থেকে একযোগে সংগৃহীত হবে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ ও হালনাগাদ কার্যক্রম। এই নাগরিক তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছে ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম।

আজ (১৫ জুন) শনিবার বেলা ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ ২০১৯’ উদ্বোধনকালে নগরবাসীর প্রতি এমন আহবান জানান তিনি।

নাগরিক তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত শহরে নাগরিকদের তথ্য ডাটাবেজ সংগ্রহ করা হয়, নাগরিকদের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার জন্য, কোন অপরাধ প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং উদঘাটনের জন্য । বিলম্ব হলেও আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০১৬ সাল থেকে অফিসিয়ালি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছি। ইতোমধ্যে আমরা ২২ লাখ পরিবারের ৬৩ লাখ নাগরিকের তথ্য সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস্ (সিআইএমএস) এর সংরক্ষিত আছে। ১৩ জুন ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত সিআইএমএস সফটওয়ারে বাড়ীওয়ালা ২৪১৫০৭ জন, ভাড়াটিয়া ১৮২০০৯৪ জন, মেস সদস্য ১২১০৪০ জন, অন্যান্য ১১০০ জন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩১৬৬৮২১ জন ও ড্রাইভার/গৃহকর্মী ৮৮৩৯৮৪ জন সর্বমোট ৬২৩৪৫৪৭ জনের তথ্য সংরক্ষিত আছে। এই সিস্টেমে প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি ইউনিক ইনডেস্ক নম্বর দেয়া আছে। সেই নম্বর দিয়ে সিস্টেমে সার্চ দিলে কাঙ্খিত নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সিআইএমএস সফটওয়ারের মাধ্যমে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করার ফলে আমাদের এই সাফল্য এসেছে। হলি আর্টিসান হামলার পর থেকে ঢাকা শহরে নাগরিকের সঠিক তথ্য প্রদান ছাড়া কেউ বাসা ভাড়া নিতে পারে না।

প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিক তথ্য সংগ্রহ করতে হলে রাষ্ট্রের অনেক টাকা খরচ হতো জানিয়ে কমিশনার বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রের কোন রকম অর্থ ব্যয় ছাড়া পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে নগরবাসীর তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছে। আমরা নাগরিকদের কাছ থেকে গৃহীত তথ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করছি। ৩ বছরে কোন নাগরিকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে আমরা সচেষ্ট আছি। সিআইএমএস সফটওয়ারের মাধ্যমে আমাদের অপরাধ ডিটেকশনের হার অনেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও সিআইএমএস ব্যবহারের ফলে ট্রেডিশনাল ক্রাইম হ্রাস পেয়েছে। শুধু নাগরিক তথ্য সংগ্রহ নই, সিআইএমএস ভূমিকা রাখছে নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে। ঢাকা শহরের ৫০ থানায় ৩০২টি বিটের মাধ্যমে পুলিশের সাথে জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টি করে আমরা কাজ করছি।

নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহের গুরুত্ব সম্পর্কে কমিশনার বলেন, বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করছি অনেকে নাগরিক তথ্য দিতে গরিমষি করছে। নাগরিক তথ্য সংগ্রহ শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা আবারও নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ শুরু করছি। ১৫ থেকে ২১ জুন  প্রতিটি থানার বিটে বিট অফিসার ঐ এলাকার রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধি কমিউনিটি পুলিশের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে এলাকার প্রতিটি বাড়ি যাচাই করে দেখবে নাগরিক তথ্য প্রদানে কেউ বাদ পড়েছে কি না। কেউ বাদ পড়লে তাকে তথ্য ফরম দিয়ে সেই ফরমে তথ্য পুরণ করে ফেরত নিবে। এরপর ২১ জুন থেকে পরবর্তী ৭ দিন ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে গঠিত সার্ভিলেন্স টিম র‌্যামডম সিলেকশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসায় যাচাই করে দেখবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে কি না। এসময় কেউ বাদ গেলে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সিআইএমএস সফটওয়ারে অন্তর্ভূক্ত করা হবে। যাতে কেউ বাদ না যায়। আমরা চাই ঢাকা শহরের বসবাসরত প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য সিআইএমএস সফটওয়ারে অন্তর্ভূক্ত করতে।

সম্মানিত নগরবাসীকে অনুরোধ করে কমিশনার বলেন, আপনারা নিজে নিরাপদ থাকুন অন্যকে নিরাপদে রাখুন। সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এবং অপরাধের হুমকি থেকে এই মহানগরীর মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করুন। আমরা একটি নিরাপদ ঢাকা বিনির্মানের যে প্রচেষ্টা আছে, সে প্রচেষ্টায় আপনাদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন। আপনার গৃহকর্মী, ড্রাইভার ও ফ্যামিলি মেম্বারদের তথ্য দিয়ে সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সংবাদকর্মীরা তাদের লেখার ও প্রচারের মাধ্যমে নগরবাসীকে সচেতন করতে পারেন। তারা যাতে সঠিক তথ্য পূরণ করে পুলিশকে দেয়। আমরা সংবাদমাধ্যম, টেলিভিশন ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে নগরবাসীকে সঠিক তথ্য দিতে প্রচারণা চালাব। এ সময় ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।