বক্তাই যখন নাস্তিকতার সহায়ক – ড. আব্দুস সালাম আজাদী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২১ ২০১৯, ২০:৩৭

একুশে জার্নাল ডেস্ক: আমি সাধারণতঃ কারো নাম ধরে নেতিবাচক কিছু লিখিনা, সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সংশোধনের চেষ্টা করি, সম্ভব না হলে আমার সীমিত জ্ঞানের আলোকে ভুল তথ্য পেলে তা সংশোধনের চেষ্টা করি।

কিন্তু আজকে আমি হয়ত আমার চিরাচরিত নিয়ম খানিকটা ভাংবো। এবং তা ভাঙা আমার জন্য ফরদ্ব মনে করেই করছি।
এক বোন এবং আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন নিচের ভিডীওটা পাঠায়ে এই সম্পর্কে আমার বক্তব্য জানতে চাইলেন।

এই বক্তার নাম হলো সাইয়েদ নজ্রুল ইসলাম। এখন তিনি ডক্টর লেখেন। আগে তিনি বলতেন মদীনা বিশ্ব বিদ্যালয় পড়েছেন। এখন বলতেছেন আল আযহার পড়েছেন। এক বক্তৃতায় বলেছেন ক্বারী আব্দুল বাসিত নাকি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার দাবী ২২০০০ (বাইশ হাজার) হাদীসের হাফিয তিনি, তার দাবী অনুযায়ী ৬ বছরে তিনি কুরআনের হাফিয হয়েছেন মাত্র ৬ মাস পড়ে। তার আম্মা নাকি ছিলেন কুরআনের হাফিয, গোপালগঞ্জের মেয়ে ও দাওরাহ পাশ করা আলিমাহ।

তার দাবী মতে তিনি হজ্জ করেছেন ৩৪ বার, উমরাহ সহ হজ্জ হয়েছে ৮০/৯০ বার।

এই ভিডীওতে তার দাবি অনুযায়ী তার বয়স হয়েছে ৮৭ বছর। তার ফুফু নাকি বেঁচে ছিলো ১৪৫ বছর।

ভিডীওটা আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুনতে পারিনি, ২২ মিন ৪২ সেকেন্ড পর্যন্ত শুনে আমি রাগে থরথর করে কেঁপেছি। আমার ইয়াক্বীন হয়েছে যে নাস্তিকরা যা না করতে পেরেছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে এই সব জলজ্যান্ত দাজ্জালেরা।

কারণ নাস্তিকেরা আমাদের সমাজে তিনটা কাজ করেছেঃ
১- তারা কিছু শয়তানের চেলাদের আরো বড় শয়তান হতে সাহায্য করেছে।
২- তারা কিছু মুনাফিকদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে সংশয়িত করেছে।
৩- কিন্তু তারা সকল মত ও পথের সঠিক উলামা ও জন সাধারণকে ইসলামের ব্যাপারে ঐক্যের মঞ্চে এনেছে। যা দ্বীনের জন্য আরো উপকার ই প্রমানিত হয়ছে। ফলে দেশ থেকে পালানো ছাড়া দেশের সরকার ও তাদের রক্ষা করতে পারেনি।

কিন্তু এই তথাকথিত মাওলানারা দ্বীনের মূলে আঘাত করে মানুষকে শেষ করে যাচ্ছে এবং ইসলামের ব্যাপারে তরুণ প্রজন্মে দ্বিধান্বিত করে দিচ্ছে।

আমি তার সম্পর্কে লিখছি, কারণ ইসলামের ইতিহাসে এতো বড় দাজ্জাল ও কাযযাব তথা মহামিথ্যুক আজো কেও এসেছে বলে শুনিনি। প্রায় ২৩ মিনিট আলোচনায় আমি অনেক অনেক মারাত্মক বিষয় পেয়েছি যা আলোচনা করলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে আর্টিকেল।

তার গর্ব অহংকার, টিটকারী ফাজলামো, যৌন সুড়সুড়ি ও গালাগালি নিয়ে কথা না ই বললাম। তার ইতিহাসের মিথ্যাচার সম্পর্কে না ই তুলে ধরলাম। তার বিভিন্ন বিষয়ে মূর্খতা নিয়ে না হয় অন্য কেও কলম ধরবেন।

কিন্তু আমি তার কুরআন বানায়ে মানুষকে প্রতারণার কথাটা আজ শুধু জানাতে চাই। তিনি শত শত ওয়াজ মাহফিলে হাজার হাজার মানুষের সামনে এই ভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে্ন, আর মূর্খ সভাপতিরা পাশে বসে দেখেন কিভাবে মাথা নাড়াচ্ছে, কিংবা মূর্খ স্রোতা গুলো কিভাবে সুবহানাল্লাহ বলে যাচ্ছে।

তাজ্জবের বিষয় আমরা যখন বাংলাদেশে ছিলাম, দেখেছি কোন মাহফিলে এতো বোকা বানানো আলিম পাওয়া যেতোনা। মাহফিলে কেও না কেও হাফিয বা আলিম বা দ্বীনের সমঝদার থাকতোই। তাদের প্রতিবাদের কাছে এই ধরণের দাজ্জালরা পালাতো। কিন্তু আজ একি শুনছি?!

আমি আজকে আপনাদের শুধু তার কুরআন বানানোর সাহসিকতাকে তুলে ধরছি। তিনি ঐ আয়াত গুলো বানায়েছেন, এবং তিলাওয়াত করেছেন ক্বারীয়ানা সুরে ও স্বরে, এবং তথাকথিত আয়াত গুলো পড়ে হাও মাও করে কেঁদেছেন। এক পর্যায়ে একটা বানানো আয়াত পড়ে চিৎকার করে বলেছেনঃ ঐটা যদি তিনি মক্কা মদীনায় পড়তেন বা মিশরে পড়তেন তাাহলে নাকি মানুষ কেঁদে জারজার হয়ে যেতো।

তিনি যে আরবী বাক্য গুলো আয়াতের মত পড়ে কুরআনের আয়াত বুঝায়েছেন তার পাঠোদ্ধার করে আমি নিচে লিখছি।

১- ومن يخرج من بينهك….. ومن يخرج من بيتك ورسوله ثم أقتلنها وأنها لكبيرة
এই টা নাকি কুরআনের আয়াত। এইটা ক্বারীয়ানা সুর দিয়ে পড়ে বলেছেন, “কুরআন কিভাবে পড়তে হয় এই বুড়োর দিকে তাকা”। অথচ এটা কুরআনের কোন আয়াত নয়। বানানো আরবী, যার অর্থ করা যায়না। করা গেলেও অর্থ বোধক হয়না। এর শাব্দিক অর্থ হলোঃ যে তোমার ঘর ও রাসূল হতে বের হয়েছে, তার পরে তাকে (স্ত্রীবাচক সর্বনাম) আমি হত্যা করবো, আর নিশ্চয় এটা অনেক বড়।

২- এর পরে এই বক্তা আমাদের নবীর (সা) হিজরাতের সময় আবু বকর ছাড়া আর কেও ছিলো না সে সম্পর্কে আরেকটা আয়াত বানাচ্ছেনঃ
ولا دد تلا دل بك، صدورِكم، فلا تقمه في شيئا وجدلا، والله يؤتي من يشاء والله ذو فضل عظيم
তথাকথিত আয়াতটা সুন্দর সুর দিয়ে পড়ে বললেনঃ “আমার ঠোঁটের দিকে দেখে নে, কিভাবে কুরআন পড়তে হয়”। এই বাক্যটা কুরআন নয়, শেষের দুইটা বাক্য খন্ড কুরআনের আয়াত থেকে কেটে নেয়া যেটা সূরা আলইমরানে ১৭৪ আছে। কিন্তু প্রথম কয়েকটা শব্দ আরবী ভাষার ই না। পরের “সুদূরিকুম” এর কোন অর্থ এখানে হয়না, তার পরের বাক্যের আরবীর কোন অর্থ হয়না। পরে কুরআনের আয়াত কেটে যা আনা হয়েছে তা হলো আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দেন, আল্লাহ মহান কৃপার অধিকারী। এইভাবে ভুল আরবী বানায়ে তিনি কুরআন বলে চালিয়ে দিলেন।

৩- এরপরে বক্তা সাহেব ভালো সন্তান হতে ভালো মায়ের দরকারের উপর আরেকটা কুরআনের আয়াত বানালেন। সুর করে ক্বারীয়ানা ঢঙে পড়তেছেনঃ
فلا تقم دخبسي ولا مُقَلَّدْنَهُ يؤذرونهم بالله ما كانوا يحذرون
এর পরে গর্বোদ্ধত হয়ে বললেনঃ ইনশাআল্লাহ, কুরআন তো আমার দেখা লাগবেনা, কুরআন আমি উলটো ভাবেই পড়তে পারি সদর ভাবেও পড়তে পারি, হেসে বললেন, তরজমা সহ। (৬ঃ৫৮ মিন)

উল্লেখ্য শেষের “মা কানু ইয়াহযারুন” সূরার কাসাসের ৬ নম্বর আয়াতের শেষের অংশ। কিন্তু প্রথম তিনি যা বলেছেন তা অর্থপূর্ণ বাক্য নয়। এর পরেও তিনি দাবী করলেন এটা কুরআন, ও সুর দিয়ে গর্বে ফেটে পড়লেন।

৪- এর ই সাথে আরো একটা আয়াত বানালেনঃ
فلما تقم تو كم فيه شيئا، واتخذ من دونه شيئا

এর আরবীটাও ভীষণ রকমের দূর্বল। ফালাম্মা অর্থ যখন, কিন্তু তুক্বিম তু কুম এর কোন অর্থ হয়না। “তুক্বিম” মানে তুমি অবস্থান করো। তুকুমের কোন অর্থ নেই। শাইয়ান এর অর্থ কোন কিছুই। এর পরে বাক্যটার অর্থ সে ইহার পরে কিছু গ্রহন করলো। এর ও কোন অর্থ নেই।

এই আয়াতটা পড়েই নিজের গর্বে নিজেই কাঁপালেন। গোপালগঞ্জের প্রশংসা করেলেন। তার তিলাওয়াতের টেকনিক শুনে হাফেয সাহেবরাও নাকি বিস্মিত!!

৫- হিজরাতের আগে আমাদের নবী (সা)কে মারার পরিকল্পনার ব্যাপারে একটা আয়াত তিনি বানালেন; বানানো আয়াতটা শেষ করতে পরলেন না। সভাপতির হাত ধরে কেঁদে কুটে জারেজার হলেন। সেই বানানো আয়াতটা হলোঃ

صلَّتْكَ عَلَى فيك، سنلتقي في عذرة، ولئن أبنت تكون من دونه شيئا والله يوتي

বুঝা গেছে এর পরে তিনি আর বানাতে পারেননি। কারণ অনেক বেশি কান্নায় তিনি ভেঙে পড়েছেন। এই আরবী বাক্যটার অর্থ করলে যে কি দাঁড়াবে আল্লাহ মা’লুম। মনে হচ্ছে কয়েকটি আরবি শব্দ ছাড়া বাক্য তৈরির জ্ঞান খুব কম। এর অর্থ মোটা মুটি এমন হতে পারে সে তোমার মধ্যে উপরে মেয়েটা সালাত পড়েছে, আমরা গোবরের মধ্যে সাক্ষাত করবো। যদি আমি প্রকাশ করি, তাহলে তার পরে কিছু হবে, আল্লাহ দেন ………

৬- নজদের ওহাবীরা নাকি নবী (সা) কে মারার জন্য সিদ্ধান্ত দিলো। এসম্পর্কে তিনি আয়াত বানালেনঃ
لأقتلن بأيديهم فألقيهم إلى الدنيا
এর অর্থ কিছুটা এমন হবে আমি তাদের হাত দিয়ে হত্যা করবো, ফলে তাকে দুনিয়ায় ফেলায়ে দেবো। এই ধরণের আরবী বানায়ে কুরআনের আয়াত বলে চালায়ে দেয় যে বাংলাদেশে, সেখানে আমার বন্ধু ডঃ মানজুরে এলাহী, ডঃ আবু বকর যাকারিয়া, ডঃ সাইফুল্লাহ সহ শত শত আরবীবীদ ডক্টরেরা এখন বাস করেন ভাবতেই পারছিনা।

৭। হিজরাতের সময় আবু বকর (রা) আমাদের নবীর (সা) সাথে যে যাবেন, সে সম্পর্কেও তার বানানো আয়াত আছে। আবু বকর নাকি বলেছিলেনঃ
أنتم خيرها منكم، وعزيزي منه، ففيهم نزلا

এর অর্থ ও যে কি, কারণ ক্লাশ ফাইভ সিক্স এর ছেলে মেয়েরাও এমন বাক্য বানাতে পারে! টেনে টুনে এর অর্থ করা যায়ঃ “আপনি এ দের মধ্যে উত্তম আপনার চেয়ে। অতএব তাদের মধ্যে মেহমান”।

অথচ তিনি এর অনুবাদ করলেনঃ আবু বকর বলছেন, হুজুর মক্কা শরীফের মধ্যে আমি একজন হালকা পাতলা খাটো মানুষ, আমাকে মানুষ সবচাইতে খাটো মানুষ বলে, আমার স্বাস্থ্য বেশি মোটা না। আপনি যদি আমাকে আপনার বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে নেন, কেও যদি না যায়, আমি আবু বকর আপনার সাথে থাকতে রাজি আছি।

এর পরে আবার ও তার বানানো কুরআন পড়লেনঃ
أنبت فيها رسمكم منهم، فسيكفيكهم الله
এর ও অর্থ ফিরশ্তারাও করতে পারবেনা। কিছুটা এমন হবেঃ তার মধ্যে তাদের হতে আপনার ছবি জন্ম নিলো, কাজেই আল্লাহ আপনার জন্যই যথেষ্ঠ।

জানিনা এই সব আরবী সে কেন বানায়। কেন বা মানুষকে এই ভাবে ধোঁকা দিচ্ছে। এই সব মাহফিলে কি আরবী জানা কেও থাকেনা?

৮- কুরআন বানানো তার এগিয়ে যাচ্ছেঃ
فتلقى أذنت له من شركة منها والله ذو فضل العظيم

শেষের অংশটুকু ভুল হলেও কুরআনের একটা আয়াতের অংশ হিসেবে পাওয়া যায়, কিন্তু প্রথমে কী যে বলেছেন তিনি!! অর্থহীন বক্তব্য। অই বানানো আয়াত তেলাওয়তের পরে অনেক গর্ব ঝাড়লেন বক্তা। এর পরে আরেকটা আয়াত, যা শুনলে মুসায়লামা কাযযাব নামক ভন্ড নবীর বানানো কুরআনের চেয়ে জঘন্য মনে হয়। ক্বারীয়ানা করে পড়তেছেনঃ
وتايدنا يعذرا لكم فيك ذرية طيبة احذروها وما كانوا يحذرون.
শেষের অংশটুকু কুরআনের একটা আয়াতের শেষের কথা। প্রথম দিকে যা বলা হয়ছে তা নিরর্থক বক্তব্য।

৯- তার বানানো আরেকেটা আয়াত শুনেনঃ
فلا تماركم ذاتكم القلوب ويستحجلون شيئا ويخابرونهم بغو جدلا

বানানো এই আয়াতটা পড়ে যে কি কান্না কাটা করলেন শুনে দেখেন। অথচ আয়াত দূরে থাকুক এই রকম কোন আরবী বাক্য হতে পারে আমার জানা নাই।

১০- আরো একটা বানানো আয়াত দিয়ে আমি আজকে এখানে শেষ করতে চাই, তিনি বলেছেনঃ
بالغب تعجل لنا بينها وبينهما….. وأن أخرجتكم منه شيئا والله يحب المحسنين
তার বানানো এই আয়াতের প্রথম অংশের কোন অর্থ হয়না। দ্বিতীয় অংশের অর্থ এমন হয়ঃ আর তোমাদের সেখান থেকে বের করে দেয়া কিছু একটা হবে, আল্লাহ মুহসিনিনদের ভালোবাসেন।

এই শেষের এই কথাটা والله يحب المحسنين কুরআনের একটা অংশ। বাকি গুলো সব তার বানানো কুরআন।

বিশ্বাস করুন এর পরে তার বাকি ভিডিও শোনার ইচ্ছা আমার হয়নি। আপনারা তাকে পাগল বলে আমাকে হয়ত সময় নষ্ট কেন করেছি তার জন্য ধরতে পারেন। কিন্তু তার ভিডিও গুলো ইউ টিউবে দেখেন। কত লক্ষ মূর্খ ভাইবোন তা দেখে প্রতারিত হয়েছে দেখেন। তার উপর করা ভূয়সী প্রশংসা গুলো পড়ে সিদ্ধান্ত দেন কি বলবেন।

বাংলার জামিনে থাকা উলামায়ে কিরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বাংলাদেশ সরকারের। কারণ এক ভিডীওতে তিনি প্রধান মন্ত্রীকে নিজের আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়েছেন।

এই মিথ্যাবাদী বক্তার আলোচনা শুনতে ইউ টিউব দেখুন