শুধুমাত্র শাস্তি দিয়ে সমাজ থেকে অপরাধ মুক্ত করা যায় না: প্রধান বিচারপতি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ০৬ ২০২১, ২০:২৬

শুধুমাত্র শাস্তি দিয়ে সমাজ থেকে অপরাধ মুক্ত করা যায় না উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন ‘সাজা তথা ফাঁসি সমাজকে অপরাধ থেকে রক্ষা করতে পারে না।’

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল শুনানিতে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইন্ডিয়া থেকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো অংশেই খারাপ না। কিন্তু ইন্ডিয়াতে ২০১৯ সালে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ১২১ জনের। আর আমাদের এখানে হয়েছে ৩২৭ জনের।’

‘আমাদের এখানে স্ত্রী হত্যায় স্বামীর ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হচ্ছে। কিন্তু ফাঁসি বা যাবজ্জীবনের এই সাজায় কি স্ত্রী হত্যা কমেছে? কমেনি। সুতরাং এটা ভুল ধারণা যে, সাজা দিলেই আমরা অপরাধ মুক্ত হয়ে যাব।’

শাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে নিজ ছেলেকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাবা জসিমের জেল আপিলের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এ সব কথা বলেন।

আদালত নিজ ছেলেকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাবার সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একইসঙ্গে আসামি জসিমের সাজা খাটা ১০ বছর শেষ হয়ে থাকলে এবং তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকলে তাকে কারামুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আর আসামির পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জসিম রাড়ীকে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। যেহেতু তিনি ২০০৭ সাল থেকে জেলে আছেন তাই তার বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা না থাকলে (১০ বছর এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে) তাকে মুক্তি দিতে বলেছেন আদালত।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালে বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা জসিম রাড়ী ২০০৭ সালে শাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে নিজ সন্তানকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় বিচারিক আদালত সন্তান হত্যার দায়ে বাবা জসিম রাড়ীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই রায় ঘোষণা করেন। এরপর হাইকোর্টও তার সেই সাজা বহাল রেখে ২০১৩ সালে রায় দেন।

পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করলে আপিল বিভাগ আজ জসিমের সাজা কমিয়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন।