‘শিক্ষা’ ছেড়ে তাবলীগ ইস্যুতে বেফাক; সংকট আরো ঘনীভুত হচ্ছে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ৩১ ২০১৯, ১৮:০৭

খতীব তাজুল ইসলাম: বড়রা যা করেন ভালর জন্যই করেন। এই যুক্তি তখন খাটে যখন কোন অভিভাবক তার শিশু কিশোর সন্তানের সাথে কথা বলেন। রাজনীতি শিক্ষাবোর্ড দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বের আসনে বসা চেহারা গুলো যদি দলের বাহির কিংবা ভিতরের অধিনস্থদের লোকদের উদ্দেশ্যে এমন কথা বলেন তখন সেখানে নির্বুদ্ধিতা বাচালতা আর স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের চিত্র খুব নগ্ন ভাবে ফুটে উঠে বৈকি। বাংলাদেশের কওমি ঘরানার আলেম উলামাদের হালজামানার কিছু কর্মকান্ড দেখে এমনই আমরা হতবাক হচ্ছি। কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়েও দেখেছি বাজে পরিস্থিতি। যখন দেখেছেন অন্য কেউ স্বীকৃতি নিয়েই ছাড়বে তখন একপ্রকার নাকে খতদিয়ে দেড়শত বছরের পুরানা উসুলে হাস্তেগানার কাল্পনিক মানদন্ডে তা গ্রহন করেছেন। মানে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের মত। কাল্পনিক এজন্য বললাম যে, কোথায় ১৮৬৬ আর কোথায় ২০১৮ সাল। নৌকা যখন ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয় তখন সম্বিত হয় আমাদের। বর্তমান সমস্যায় জর্জরিত তাবলীগের বিষয়টাই দেখুন। তাবলীগ সম্পুর্ণ আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান।

আমি নিজে সাক্ষী হাজার হাজার উলামা আছেন যারা এখানো শরয়ী মানদন্ডে প্রচলিত তাবলীগকে সর্বান্তকরণে মেনে নিতে নারাজ। মন্দের ভাল হিসাবে বিরোধিতা করছেন না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন পুরা তাবলীগ সিস্টেমে জং ধরেছে। তাবলীগ খোদ একটা অথরিটি এখন বনেগেছে। প্রচলিত তাবলীগ জামাতই ইসলাম এমন ধারনা বেশ প্রবল। এই পরিস্থিতিতে তাবলীগের ভিতর তাদের মাঝে বিবাদ শুরু হয়। বিবাদটা কিন্তু তাবলীগে প্রচলিত ভুল বিষয়গুলো নিয়ে নয়।  মাওলানা সা‘দ কান্দলভী নিজে নিজে আমীর ঘোষণার পর থেকে তার শুরু। আলমি শুরু একদিকে আর স্বঘোষিত আমীর অন্যদিকে। পুরা দু’টুকরো এখন তাবলীগ। তাদের মসনদি লড়াইটা বর্তমানে আক্বীদার লড়াইয়ে রূপান্তরীত হয়েছে। কারণ সা‘দ সাহেবের গোমরাহি কথাবার্তা আগেও ছিলো। তখন তারা তাকে ফায়সাল হিসাবে মানতেন। কিন্তু যখন আমীর হলেন তখন সমস্যা দানাবাধে। বোঝাগেল তিনি স্বঘোষিত আমীর না হলে তার গোমরাহি অনৈসলামিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্চ কেউ করতোনা।

কিন্তু তাবলীগের ভিতরের বিবাদ আর ঘরে থাকেনি। রাস্তায় চলে আসে।  দখল পাল্টা দখল আর হামলা মামলা পর্যন্ত গিয়ে গাড়ায়। দেওবন্দের ফতোয়া আসার পর বাংলাদেশের আলেমগণ একটু নড়ে চড়ে বসেন। সুযোগ বুঝে আলমি শুরুপন্থীগণ আলেম উলামাদের স্বারস্থ হন। আরম্ভ হলো ওজাহাতি জোড়। খোললো আরেক ফিতনার দরজা। হেয়ায়েতের বদলে প্রবাহিত হতে থাকে ফিতনার জোয়ার। যার ফলশ্রুতিতে ৩০ নভেম্বেরের রক্তারক্তি। আর তাতে এসে জড়িত হয়েছেন ডাইরেক্ট ময়দানি হজরতগণ। সেই সাথে লাইম লাইটে আসে বেফাক বা কওমি শিক্ষাবোর্ড।

বেফাক ইজতেমার বিষয়ে আবার মিটিং ডেকেছে। এর আগেও কিছু একটা করেছিলো। বেফাকের কি আর কোনো কাম কাজ নেই? তাইলে নিবন্ধন করে ভোটাভুটিতে চলে আসলে ষোলকলা তার পুরণ হবে কেমন? হাজার হাজার মাদরাসা থেকে সদস্য ফী আর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ফী নিয়ে বেফাক কি আমাদের ষাঁড় লড়াই শিখাবে? আগের মারদাংগা আর ফিতনায় মনে হচ্ছে বেফাকের টনক নড়েনি। গেল দুটি প্রাণের কোনো বিচার হয়েছে? আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব কি বেফাক গ্রহন করেছে?

শুকরানা মাহফিলে অর্ধকোটি তারা খরচ করেছেন। তাবলীগ সংকটের মিটিংয়ের নামে বেফাক এর আগে আরো ৫ লাখ খরচ করেছে। আগামি মিটিংগে হয়তো আরো ৫ লাখ যাবে। আমাদের জিজ্ঞাসা যে বেফাক ৩০ নভেম্বরের হামলায় আহত নিহতদের জন্য ইতোমধ্যে কত লাখ টাকা খরচ করেছে?

আমি কঠোর ভাবে অভিভাবকদের বলবো যে আপনাদের সন্তানদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিন। বেফাকের এসব ফাজলামি কর্মকান্ডের শরিক কোন শিক্ষার্থী হোক তা আমরা চাইনা। পারলে তারা তাদের সন্তানদের দিয়ে ঝগড়া ঝাটি করাক।

সিলেবাস শিক্ষা কারিক্যুলাম ক্যাম্পাসের মানোন্নয়ন শিক্ষক প্রশিক্ষণ এসবের খবর নাই। আগে ছিলো হেফাজত জ্বর এখন তাবলীগ জ্বরে পাইছে। বিশৃংখলা সৃষ্টি বা ফিতনায় ঘী ঢেলে লাভ কি? আপনারা শিক্ষা নিয়ে সীমিত থাকুন। বড়জোর উলামা কাউন্সিল ডেকে বোর্ডকে বাহিরে রেখে তাবলীগ নিয়ে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। দেওবন্দ ফতোয়া জারি করে যেমন হাত গুটিয়ে বসে আছে তেমনি আপনারা উলামাগণ ফতোয়া জারি করে উম্মাহকে সতর্ক করে বসে থাকলে চলেনা?

তাবলীগীদের উসকিয়ে দেবার কোনো মানে নেই। হিংসার বীজ আরো গভীরে নিয়ে যাবার দরকার কি? এ পর্যন্ত তাদের কতটুকু শোধরাতে পেরেছেন বলতে পারবেন? বরং দুটি দলের একটি উলাদের বগলের নীচে এসে ঢুকেছে। না, সেটা উলামাদের শান হতে পারেনা। দুটো পক্ষই যেন উলামাদের কাছে আসে। সমঝোতা ও সংশোধনের পথ খোলা রেখে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষাবোর্ড কোন যুক্তিতে তাবলীগ ইস্যুতে যোগ দেয় আমাদের তা বুঝে আসেনা। এমন হতে থাকলে বেফাক অচিরেই খান খান হয়ে যাবে। আপনারা নিজেদের কর্ম কৌশলের পাওয়ার কতটুকু আছে তা আগে একটু যাচাই করে নিবেন প্লিজ। নেপথ্যে থেকে কাজ করলে হয়তো ফিতনা ততটা হতোনা।

বর্তমান তাবলীগের উভয় দলই গেমরাহীতে লিপ্ত। সা’দ পন্থীরা তো সীমার বাহিরে। তাদের টপ টু বটম সবাই নিরেট মিথ্যা বলে। অধিকাংশ হারামে লিপ্ত। পারলে সা’দকে তারা তাদের নবী ঘোষণা দিত। ধর্মহীন কর্ম শিখলে যা হবার তাই হয়েছে। তাবলীগীদের পছন্দের ইসলাম হলো স্যাকুলার ইসলাম। কুফর জুলুমের সাথে ৬ উসুলের পথচলা তারা সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু যারা সা’দ বিরোধী তাদের ভুমিকা কি? কর্মহীন ধর্মশিক্ষার বিশাল বোঝা নিয়ে যা হবার তাই হচ্ছে। উসুলে হাশতেগানার গ্লানি টানতে হচ্ছে এই প্রজন্মকে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আজ মাদক ও ধর্ষণের অভয়ারণ্য। হিজাব বিরোধী ঈমান বিধ্বংসী পরিবেশ সেখানে বিরাজমান । শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বেফাকের উলামাগণ তাদের সাথে মতবিনিময় করতে পারেন। সরকারকে আদর্শহীন নৈতিকতাহীন শিক্ষার বিষয়ে সতর্কতা প্রদান করতে পারেন। গোটা শিক্ষার ময়দান তাগুতের দখলে দিয়ে তাবলীগ নিয়ে টানাটানি করে কি লাভ হবে বলুন?

তাই বলছি যে শিক্ষা রাজনীতি তাবলীগ সামাজিক কর্মকান্ড আলাদা রাখুন। একই চেহারা খেলাফতে আবার হেফাজতে আবার বেফাকে আবার তাবলীগে? দেউলিয়া হলে যা হয় আর কি!

-খতীব তাজুল ইসলাম,লেখক,চিন্তাবিদ।