শহীদ আরমান দিবস আজ :নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনে আরমান প্রেরণা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ৩০ ২০১৯, ১৪:০৭

এহসান বিন মুজাহির

আজ ৩০ জুন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস ঘোষিত শহীদ আরমান দিবস। নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৯৪ সালের ৩০ জুন কিশোরগঞ্জের রাজপথে পুলশের গুলিতে ইসলামী ছাত্র মজলিসের কর্মী কিশোর আরমান শাহাদতবরণ করেন। আজ ৩০ জুন তার ২৫ তম শাহাদত বার্ষিকী। উল্লেখ্য যে, শহীদ শহীদ আরমান আহমদ ছাত্র মজলিসের ১ম শহীদ। শহীদ আরমান ইসলামী সমাজ বিপ্লবের কর্মীদের জন্য একটি চেতনা ও প্রেরণার নাম। শহীদ আরমানের শাহাদত নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের অনুপ্রেরণাকে আরো শানিত করেছে।

পথ চলতে চলতে যখন নানা মোহ, ভীতি, আশঙ্কা আমাদের পথ আগলে দেয় তখন হৃদয়ের মাঝে অমর হয়ে থাকা শহীদ ভাইদের স্মৃতি আমাদের মনে আশার আলো জ্বাালায়। আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করা বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। এ বিষয়ে আল্লাপাক ইরশাদ করেন,‘আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারাই জীবিত, কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না’। (সূরা বাকারা : ১৫৪)

জীবন-মৃত্যুর মালিক আলাহ এবং মৃত্যুর ফয়সালা আসমানে হয়, জমিনে নয়। আল্লাহ এরশাদ করেন, কোন আত্মার মৃত্যু হয় না আলাহর নির্দেশ ছাড়া যা তার জন্য লিপিবদ্ধ। (সূরা আল ইমরান : ১৪৫)

ঘটনার সুত্রপাত: ১৯৯৪ সালের ৩০ জুন বৃহস্পতিবার, কুখ্যাত নারীবাদী লেখিকা নাস্তিক মুরতাদ তাসলিমা- নাসরিনের শাস্তির দাবীতে হরতালে সারাদেশ উত্তাল। মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীম অবমাননার প্রতিবাদে দেশব্যাপী আহুত হরতালের অংশ হিসেবে সে দিন কিশোরগঞ্জের রাজপথে কুরআন প্রেমিক তাওহীদি জনতা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআন কারীমের ইজ্জত রার আন্দোলনে সারাদেশে কুরআন প্রেমিক অগণিত লোক অংশ গ্রহণ করেন। তাদের জামাতে আরমানও ছিলেন একজন।

৩০ জুন। সারাদেশের মত কিশোরগঞ্জের রাজপথেও কুরআনের ইজ্জত রার আন্দোলনে বিাক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে কিশোরগঞ্জের রাজপথও। কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে ডাকা দেশব্যাপী হরতাল সফর করতে কুরআন প্রেমিক সৈনীকেরা রাজপথে নেমেছেন। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সর্বস্থরের জনগণ। দুপুর ঘনিয়ে বিকেল আসছে। কিশোরগঞ্জের রাজপথে কুরআন প্রেমিক জনতার ঢল নামতে শুরুকরেছে। প্রতিশোধের আগুন তাঁদের অন্তরে দাউদাউ করছে। যে কোন কিছুর মূল্যেই হোক হরতাল সফলে তাঁরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

নারায়ে তাকবীর, আল্লাহ আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠেছে আকাশ-বাতাস। ছাত্র মজলিসের কর্মী, স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আরমান আহমদ কিশোরগঞ্জের শহরের কর্মাশিয়াল এলাকায় নিজ বাসায়। তাঁর বাসার সামনে দিয়ে ধর্মপ্রাণ জনতা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । তার দৃষ্টি শুধু মিছিলের দিকে। তখন আরমান পড়ার টেবিলে বসা। কিন্তু মনযোগ নেই পড়ার দিকে। তার দৃষ্টি এখন রাজপথের মিছিলে। যেভাবেই হোক সে মিছিলের কাফেলার সাথে শরিক হওয়ার ইচ্ছে তার। কিন্তু মা-বাবার কাছ থেকে মিছিলে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়ায় তার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সে আর মিছিলে যেতে পারছে না। কিন্তু সে তো দৃপ্ত অঙ্গিকারবদ্ধ যেভাবেই হোক মা-বার কাছে থেকে অনুমতি নিয়েই কুরআনের ইজ্জত রার মিছিলে শরীক হবে। সে তার মা-বার কাছে গিয়ে কুখ্যাত নারীবাদী মুরতাদ তাসলিমা নাসরীনের বক্তব্য ‘সেকালের কুরআন পরিবর্তন করতে হবে’ তা শুনাতে লাগলো। সে বলতে শুরু করলো;মা পৃথিবীতে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিয়ে কী হবে! যে দেশে কোটি কোটি ইসলাম ও কুরআন প্রেমিক জনতা এখনো বেঁচে আছে অথচ গুটি কয়েক মুরতাদ কুরআনের অবমাননা করবে আর আমরা এর প্রতিবাদ করবো না তা কিভাবে হয়? তখন সে তার বাবাকে বললো, বাবা, গতকাল আপনার সাথে যখন আছরের নামাজে মসজিদে গিয়েছিলাম তখন ইমাম সাহেব কী বলেছিলেন আপনি কী ভুলে গেলেন? মাগো আপনি কী জানেন ইমাম সাহেব কী বলেছিলেন? হুজুর বলেছিলেন আল কুরআনের ইজ্জত রায় যারা জীবন দিবে, তাঁরা শহীদ। আর শহীদের কোন মৃত্যু নেই, তার মরেও অমর। তাদের লাশ পঁচে না, লাশে কোন দুর্গন্ধ থাকে না। যে কাপড়ে মারা যাবে সে কাপড়েই তাকে দাফন করা হবে। বিনা হিসেবে সে জান্নাত লাভ করবে। তার মান মর্যাদা সবার ওপরে। কাজেই আপনারা কী চান শহীদের সন্তান হিসেবে কিয়ামতের দিনে পরিচয় দিতে? তাহলে আমাকে ঈমান রার আন্দোলনে যাওয়ার অনুমতি দিন এবং দোয়া করুন যেন মাহাদতের মরণ হয। তখন আরমানের মা তাকে হালকা খাবার এনেিি দয়ে বললেন বাবা তুমি এগুলো খাও। আমি অনুমতি লিাম মিছিলে যাওয়ার। দোয়া করি আল্লাহ যেন তোমরা আশা পূরণ করেন। আরমান কালবিলম্ব না করে পড়ার টেবিলে গিয়ে ডায়েরি-কলম হাতে নিয়ে ডায়েরির পাতায় লিখেন-‘এ দেশ মুসলমাদের, এ দেশে ইসলামের জয় হোক’। এ কথাটি ডায়েরিতে লিখে সে কুরআন প্রেমিক জনতার মিছিলে গিয়ে শরীক হলো। হাজারো তাওহিদী জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল চলতে থাকলো। মিছিলটি শহরের প্রধান রাস্তাগুলো অতিক্রম করতে লাগলো। মিছিলে ছিল না কোন উচ্ছৃঙ্খলতা। কিন্তু তাদের এই শান্তিপূর্ণ মিছিল হঠাৎ করেই সরকারের পেঠুয়া বাহিনী দল থামিয়ে দিল। কুরআন রার মিছিলকে তারা আর সামনে আগাতে দিবে না। মিছিল আর সামনে আগাচ্ছে না। তবে কিশোর আরমান ‘নারায়ে তাকবীরের’ ধ্বনী দিয়ে মিছিলকে সামনে নিয়ে যেতে চাইলো। এমতাবস্থায় পুলিশ মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে বুলেট, গুলি ছুড়তে লাগলো। মুহুর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে তাওহীদি জনতাদের মাঝে। কুরআন প্রেমিক জনতা তাকবীরের মাধ্যমে আরও আগাতে চাইলো কিন্তু পুলিশ তখন তাদের ওপর টিয়ারশেল, ও গুলি ছুড়তেই লাগলো। পুলশের নির্বচারের গুলিতে আহত হলেন অনেক। এর মধ্যে আমাদের প্রিয় ভাই কিশোর আরমানও ছিলেন। তাঁর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তার বুকে গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। রক্তরণ শুরু হচ্ছে। রক্তাক্ত অবস্থায় আরমান জমিনে লুটিয়ে পড়ে। চোখের সামনেই ঢলে পড়েন আরও বেশ কয়েকজন কুরআন প্রেমিক জনতা । দ্রুত রিক্সায় তোলা হলো আহতদের। কিন্তু মেডিকেল যেতে না যেতেই মহান প্রভূর সান্নিধ্যে চলে গেলেন কিশোর আরমান। রাজপথেই শাহাদতের অমিয় সূধা পান করনে তিনি। ইন্নালিল্লাাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

কিশোর বয়সেই ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের শহীদি কাফেলায় নাম লিখালেন আরমান। শহীদ আরমান ইসলামী ছাত্র মজলিসের প্রথম শহীদ। তার শাহাদতের মাধ্যমেই ছাত্র মজলিস শহীদি কাফেলা হিসেবে রুপ নিলো। নাস্তিক মুরতাদমুক্ত হোক এদেশ। মুসলমানদের দেশে ইসলামের জয় হোক, হোক ইসলামী রাষ্ট্র এটাই ছিল শহীদ আরমানের লালিত স্বপ্ন। শহীদের রক্তের প্রতি ফোঁটা দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজও আমাদের অনুপ্রেরণাকে আরও শাণিত করছে। শহীদ আরমান আমাদের চেতনা, আমাদের প্রেরণা । নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনে কুরআন প্রেমিকদের শাহাদত আমাদের প্রেরণা উৎস হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরমানের শাহাদতকে কবুল করুন। আমাদের জীবনকেও আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক