লালনবাদের ভেদ অভেদ

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ০৩ ২০১৯, ১৫:৩১

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

রবীন্দ্রনাথরে পয়গম্বর বানাইছিল এদেশের একদল বাঙালি জাতিবাদী। এরপরে আরেকদল লালন সাঁইরে পয়গম্বর বানাইয়া সর্বজনবাদী সাজবার চায়। আসলে লালনবাদীরা ছুপা বাঙালি জাতিবাদী ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ লালনবাদ বাংলার বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক (এক্ষেত্রে নদীয়া-কুষ্টিয়া) অপরিণত (নন-আর্টিক্যুলেটেড) জীবনবিমুখ বৈরাগ্যধর্মী (মতান্তরে বাউলধর্মী) মরমী গীতিকাব্য ও গায়ন ধারার একটি, এর বেশি কিছু নয়।

আন্দালুসিয়া থেকে মিন্দানা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখন্ডে বিকশিত ইসলামের সমৃদ্ধ ও উৎকৃষ্ট টেক্সচুয়াল ডিসকার্সিভ ট্রাডিশনই বলি বা ওরাল মিস্টিক্যাল ট্রাডিশনই বলি এর কোনোটির সঙ্গেই গুণে মানে তুলনীয় নয় লালনবাদ নামক এই লোকাল ফেনোমেনা। কাজেই লালনবাদ ও লালনকে ভজার নামে আমাদেরকে বৈশ্বিক সর্বজনীন ইসলামী চেতনা ও পরিচয় থেকে আবারো আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতির চোরাবালিতে ডোবানোর চেষ্টা হচ্ছে একথা বলা যেতেই পারে।

লক্ষ করেছেন নিশ্চয়ই যে লালনবাদের প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদের এই আন্তর্জাতিক ও সুপরিণত ইসলামী চেতনাকে উল্টো “জাতিবাদী” ও “সাম্প্রদায়িক” ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। রবীন্দ্র-নির্ভর বাঙালি জাতিবাদ যেমন পূর্ব বাংলায় আজ প্রশ্নবিদ্ধ, ঠিক তেমনি লালন-নির্ভর এই ছুপা বাঙালি জাতিবাদও এদেশে ভবিষ্যতে আর ভাত পাবে না। এটি আসলে মুঘল সম্রাট আকবরের সমন্বয়বাদী খিচুড়ি মার্কা দ্বীন-ই-ইলাহীর মত অজস্র সিনক্রেটিস্ট লিটিল ট্রাডিশনের একটি বাঙালি আঞ্চলিক নদিয়াবি সংস্করণ। এর কিছু মূল্য বাংলা লোকজ কাব্যগীতি বা সঙ্গীতের আঙিনায় আছে বটে, কিন্তু একে এর চাইতে বেশি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন ও চেতনা হিশেবে গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই।