লন্ডনে উলামা ও কমিউনিটি প্রতিবাদ সভা উইঘুর মুসলমানরা জাতিসত্তা নির্মূলের নির্মম শিকার

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২১ ২০১৯, ০১:২৪

একুশে জার্নাল লন্ডন:গত ১৮ জানুয়ারী ২০১৯, শুক্রবার দেশে দেশে মুসলিম ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে
বৃটেনের সর্বদলীয় উলামা সংগঠন বাংলাদেশী মুসলিমস ইউকের উদ্যোগে পূর্ব লন্ডনের দারুল উম্মাহ কেয়ার হাউস মিলনায়তনে এক উলামা ও কমিউনিটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা জমশেদ আলীর সভাপতিত্বে এবং মাওলানা শাহ মিজানুল হক ও মাওলানা আবুল হাসনাত চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিম ও সংখ্যালঘু নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে চীনের উইঘুর মুসলমানদের জাতিসত্তা নির্মুল ও ধর্মান্তর করনের নির্মম বর্বরতা থেকে রক্ষা, বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার সহ তাদের নিজদেশে পূনবার্সন, আসামের মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নাগরিকত্ব হরণ আইন বাতিল এং ইয়ামেনে যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতি সংঘ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তড়িৎ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়।

সভায় উইঘুর পরিস্থিতির উপর বক্তব্য রাখেন উইঘুর কমিউনিটির প্রতিনিধি মানবাধিকার এক্টিভিস্ট সিস্টার রাহিমা মাহমুত।

আরও বক্তব্য রাখেন, ব্রিটেন শরীয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা আবু সাঈদ, ইস্ট লন্ডন মসজিদের খতিব শায়খ আবদুল কাইয়ুম, হেফাজতে ইসলাম ইউকের সভাপতি মাওলনা আব্দুল কাদির সালেহ, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক ফরিদ আহমদ রেজা, মারকাজুল উলুম লন্ডনের প্রিন্সিপাল মাওলানা শুয়াইব আহমদ, মাযাহিরুল উলুম লন্ডন এর প্রিন্সিপাল মাওলানা ইমদাদুর রহমান মাদানী, কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী, ইমাম ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমল মসরুর, লন্ডন হসপিস চাপলেইন, ইমাম মাওলানা রেজাউল করিম, বাইতুল মামুর মসজিদের খতীব হাফিজ মাওলানা আব্দুল কাদির ,
বিশিষ্ট টিভি ব্যাক্তিত্ব মুফতি আব্দুল মুনতাকিম, এডভোকেট লিয়াকত সরকার, আলহাজ্ব নূর বখশ প্রমুখ।

সভায় উইঘুর, রোহিঙ্গা, আসাম ও ইয়েমেন ইস্যুসহ বিশ্বের দেশে দেশে মুসলিম ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে নি¤েœাল্লেখিত পাঁচটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
১. আজকের এই সভা বিশ্বের সর্বত্র স্বৈর শাসকগোষ্ঠী দ্বারা ব্যাপক হারে মানবাধিকার লংঘন ও সংখ্যালঘু নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই সভা জাতিসংঘরে মানবাধিকার কমিশন, সংখ্যালঘু কমিশন ও বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা সমূহকে এসব নির্যাতন ও দমনপীড়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানানো হয়।
২. এই সভা সাম্প্রতিক সময়ে উইঘুর মুসলমানদের উপর চীন সরকারের অত্যাচার দমন ও নিপড়নের তীব্রনিন্দা জানানো হয়। সভায় বলা হয়, কেবল রাজনৈতিক কারণে চীন সরকার উইঘুর মুসলমানরে জাতিসত্তাকে অস্বীকার করছে এবং তাদেরকে জোরপূর্ব ধর্মান্তর করণের জন্য নারী পুরুষ নির্বিশেষে তাদেরকে ধরে নিয়ে রিফিউজি ক্যাম্পে বর্বর কায়দায় নির্যাতন করছে। পরিবারের শিশুদেরকে অনাথ ঘোষণা দিয়ে পুনর্বাসন ক্যাম্পের নামে একপ্রকারে বিশেষ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে ধর্মান্তর করছে। এটা যেমন উদ্বেগজনক: তেমনি মানবাধিকারের চরম লংঘন। এব্যাপারে বিবেকবান বিশ্বসহ জাতিসংখ্যকে ঐসব মজলুম নারী পুরুষ ও শিশুদের উপর নির্যাতন বন্ধে চীনা সরকারেকে চাপ প্রয়োগের জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হয়।
৩. সভায় ভারত সরকার কর্তৃক আসামের মুসলমানদের বহিরাগত সাব্যস্ত করে তাদেরকে বহি:স্কারের ঘোষণা দেয়া, স্থানীয় ধর্মীয় উর্গবাদীদের দ্বারা তাদের সম্পত্তি ও প্রতিষ্ঠান দখল এবং নির্যাতনের নিন্দা জানানো হয়।
৪. এই সভায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মায়ানমার সরকারের নিপীড়ন ও গণহত্যার নিন্দা জানানো হয়। এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের তাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে পুর্নবাসনে একটি বিশেষ কমিশন নিয়োগ করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানানো হয়। এই সভায় নির্মম গণহত্যা চালানোর জন্য মায়ানমার সরকারের দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের উদ্যোগ নেয়ার জন্য বিশ্বের গণতন্ত্রকামী সরকারগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়।
৫. সভায় ইয়ামেনে অন্যায় আগ্রাসন ও যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষকে হত্যার নিন্দা জানানো হয়। সভায় যুদ্ধ ও আগ্রাসনের শিকার নারী পুরুষ ও শিশুর মানবিক বিপর্যয়ের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়। অবিলম্বে যুদ্ধবন্ধে সৌদি আরব সহ বিবদমান পক্ষগুলোর উপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানানো হয়।