রোজার প্রতিদান মহান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ৩০ ২০২০, ১৬:০৮

এহসান বিন মুজাহির:

রমজানের রোজা গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের উপর রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছেন এবং রোজাদারদের জন্য বিপুল সওয়াবের ওয়াদা করেছেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে। রমজান এক বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের উপর এ মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শেকলবদ্ধ করা হয়। এ মাসে আল্লাহ এমন একটি রাত রেখেছেন যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হল সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত’। (নাসায়ি : ২১০৬)।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘রোজা এবং কুরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে’। (বায়হাকি : ১৪২৬)।

হজরত রাসুলে কারীম (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে সিয়াম পালন পূর্ববর্তী রমজান থেকে কৃত গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়; যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়’। (মুসলিম : ২৩৩)। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রজনীতে নামাজ আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’। (বুখারি : ১৯১০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে সিয়াম পালন বছরের দশমাস সিয়াম পালন তুল্য’। (মুসলিম : ১১৬৪)।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘আসসাওমু-লী ওয়া আনা আজযী’। অর্থাৎ রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজ হাতে তার প্রতিদান দেবো’। হজরত সাহল বিন সা’দ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল(সা:) এরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য বেহেশতের একটি দরজা ‘রাইয়্যান’ যা দিয়ে তাদেরকে সর্ব প্রথম প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। রোজাাদার ছাড়া আর কেউ উক্ত দরজা দিয়েপ্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি : ৩০১৭)।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রোজা হলো জাহান্নাম থেকে আজাব রক্ষার রক্ষার ঢাল স্বরুপ। সুতরাং কোন রোজাদার যেন অশ্লীল কথা না বলে, মন্দ ও গর্হিত কর্মকান্ডে লিপ্ত না হয়, ঝগড়া বিবাদ এড়িয়ে চলে। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে তাহলে সে যেন একথা বলে দেয় যে আমি রোজাদার। (বুখারি২৭৩১)।

হাদিসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হৈ চৈ না করে’। (বুখারি : ১৯০৪) । হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যারা হিদায়াতকে বর্জন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর শক্তিকে ভয় করেন এবং তার নির্দেশকে সত্য প্রতিপন্ন করার কারণে রহমতের আশা ছাড়েন না তারাই মুত্তাকী। মাসব্যাপি রোজা পালন করে যদি তাকওয়া অর্জন করা না যায় তাহলে এ রোজা অর্থহীন উপবাস ও নিছক আত্মপ্রবঞ্চনায় পর্যবসিত হয়। (মুসলিম : ২১৩৪)।

এপ্রসঙ্গে হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-যেব্যক্তি বাজে কথা ও কাজ ত্যাগ করলো না, তার পানাহার ত্যাগ নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়’। (বুখারি : ১৮০৪)। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এসম্পর্কে আরও এরশাদ করেন-শুধু পানাহার বর্জনের নাম রোজা নয়। রাজা হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা-কাজ বর্জন করার নাম। কেউ তোমাকে গালি দিলে বা তোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তুমি তার সঙ্গে তেমনটি না করে কেবল এটুকুই বলো আমি রোজাদার’। (মুসলিম : ২৪১৬)।

শুধু না খেয়ে থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। সংযমের পরিচয়ের দিতে হবে সবক্ষেত্রে। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব ধরনের অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা রোজাদের অপরিহার্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের রোজার যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক