রামাযানের শেষ দশ দিনে স্পেশাল আমল

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১০ ২০২০, ২০:২৩

।। মুফতী সালাতুর রহমান মাহবুব ।।


আল্লাহর কাছ থেকে অশেষ নেয়ামত নিয়ে আসা মাস রামাযানের প্রায় দু-তৃতীয়াংশ শেষের পথে। বাকি এক তৃতীয়াংশ দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে,আমরা টের পাব না। শেষে শূধু আফসোসই করতে থাকব, হায়রে তেমন কিছুই তো করা হলো না! দিবালোকের ন্যায় স্পস্ট রামাযানের শেষ দশ দিন অতীব গুরুত্ব ও ফযীলতের সময়। তাই আসুন সামনের দিনগুলো বিশেষ করে শেষ দশ দিনকে সামনে রেখে আমরা বিশেষ পরিকল্পিনা গ্রহন করি। নিম্নোক্ত বিশেষ তিনটি কারনে শেষ দশদিনের মাহাত্ম ফুটে উঠে:

প্রথমত,
এ দিনগুলোতে সাই্যদুল মুরসালিন সা: ইবাদতের পরিমাণ অনেক গূণ বাড়িয়ে দিতেন।হযরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেন,সাই্যদুল মুরসালিন সা: শেষ দশ দিনে ইবাদতের জন্য এত বেশী চেস্টা করতেন,যা তিনি অন্য সময়ে করতেন না। বুখারী শরীফ
তিনি আরেকটি হাদীসে বলেছেন,শেষ দশদিন এসে গেলে সাই্যদুল মুরসালিন সা: রাত জেগে ইবাদতে লেগে যেতেন।
পরিবারের অন্যদেরকে জাগিয়ে দিতেন।কঠিন প্রচেস্টা চালাতেন।কোমরে কাপড় বেঁধে নিতেন।
কাজেই যতদুর পারা যাওয়ার দুনিয়াবী তৎপরতা কমিয়ে দিয়ে এ দশদিনে ইবাদতে মনোনিবেশ করা।তাহাজ্জুদ যেন একদিনও ছুটে না যায়।রাব্বে কারীমের সঙ্গে সম্পর্ক লাগানো, কোরআন তিলাওয়াত,যিকির ইস্তেগফার ও দোয়া দুরূদের আমল বেশী বেশী করে করার চেস্টা চালানো।

দ্বিতীয়ত, এ দশদিনে লুকিয়ে রয়েছে একটি একটি বিশেষ রাত- লাইলাতুল ক্বদর। যে রাতটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।অর্থাৎ এক হাজার মাসব্যাপি কেউ ইবাদত করলে যে সওয়াব অর্জন করবে,এই একটি মাএ রাত্রে সঠিকভাবেই ইবাদত করতে পারলে তারচেয়েও বেশি নেকী ও কল্যাণের অধিকারী হয়ে যাবে। সাই্যদুল মুরসালিন সা: বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। সহীহ বুখারি-৩৪
এ হাদীসে ঈমান এবং ইহতেসাব বলতে বুঝানো হয়েছে লাইলাতুল ক্বদরের যে মর্যাদা ও ফযীলত আল্লাহ এবং সাই্যদুল মুরসালিন সা: এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা এবং আমল করতে পারলে যে সওয়াব পাওয়া যাবে,তার জন্য ব্যাকুল হওয়া।
ক্বদরের রাত কোনটি? এ প্রসঙ্গে সাই্যদুল মুরসালিন সা: ইরশাদ করেছেন রামাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণ করো।(বুখারী শরীফ) অন্য হাদীসে আরো ব্যাখ্য করে বলেছেন শেষ দশদিনের বেজোর রাতসমূহে লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণ করো।(বূখারী শরীফ)
উপরোল্লিখিত হাদীস সমূহের আলোকে ওলামাদের মতামত হলো লাইলাতুল ক্বদরের ইবাদত শূধু এক রাতে না করে ২১,২৩,২৫,২৭ এবং ২৯ এ সবগুলোই রাতে করতে হবে।
আর সাই্যদুল মুরসালিন সা: কে নির্দিষ্ট রাতটি ভুলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে এক রাতের পরিবর্তে পাঁচটি রাতে সবিশেষ গূরূত্ত সরকারে ইবাদত করার ব্যবস্হা করে দিলেন।এ রাতের ইবাদত সমূহ: নামায়,তিলাওয়াত,যিকির,দান খয়রাত, দোয়া-ইস্তিগফার।
হযরত আয়েশা রা: থেকে রেওয়াত আছে তিনি একদিন সাই্যদুল মুরসালিন সা: কে প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ!আমি লাইলাতুল ক্বদর পেয়ে গেলে কোন দোয়াটি বেশি বেশি করে আমল করব? তিনি বললেন اللهم انك عفو تحب العفوا فعف عني.
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি অনেক বেশী ক্ষমাকারী।ক্ষমা করা পছন্দ করেন।আমাকে ক্ষমা করে দিন।

তৃতীয়ত, রামাযানের শেষ দশদিনে রয়েছে আরেকটি গূরূত্তপূর্ণ সুন্নাহ আমাল। আর তা হচ্ছে ই’তিকাফ।
সাই্যদুল মুরসালিন সা: জীবনের শেষ বৎসর পর্যন্ত শেষ দশদিনের ইতিকাফ করে গেছেন। শেষ দশদিনের সময়কে পুরোপোরিভাবে ইবাদতে কাজে লাগাতে ই’তিকাফ একটি বিরাট সুযোগ। তাই আসুন আমরা পরিকল্পনা গ্রহন করি,কিভাবে রামাযানের বাকি দিনগুলো সদ্ব্যবহার করে আমাদের নেকীর পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারি।আল্লাহপাক আমাদেরকে তাওফীক দান করূন। আমীন।


লেখক: ইমাম ফোর্ড স্কয়ার মসজিদ ও পরিচালক আল উবায়েদ একাডেমী