রাজধানীতে ফের ব্যাভিচারে মৃত্যুর শিকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ০১ ২০২১, ১৬:১১

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:

রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মেয়েটির বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।

এরপর নিহত ছাত্রীর বন্ধু রায়হান, কোকো ও তাফসীরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববারই তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক ও পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, বিষাক্ত মদপানে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হতে পারে।

তবে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুরা উত্তরায় একটি পার্টিতে গিয়ে মদ খান। পার্টিতে অংশ নেয়া আরাফাত নামের আরও এক তরুণ শনিবার মারা গেছেন। তিনিও বিষাক্ত মদ খেয়ে মারা যান বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। আরাফাত গুলশানের বাসিন্দা। তার মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হয় রোববার রাতে। এরপর সেটি নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, তরুণীর বাবার মামলার পর গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল বলে স্বীকার করেছে। পরে জানতে পারেন, মেয়েটি যে পার্টিতে যান সেখানে মদ খেয়ে আরও একজন মারা গেছেন। বিষাক্ত মদের উৎস জানার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণী ও তার সব বন্ধু রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় ওই তরুণী ও তার তিন বন্ধু পার্টিতে যান। সেখানে বিষাক্ত মদপান করেন তারা।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আবদুল লতিফ বলেন, গত (২৯ জানুয়ারি) এক যুবক সেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে রেস্তোরাঁর ওয়াশরুমে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরে তরুণী কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় মোহাম্মদিয়া হোমসে তাফসীরের বাসায় নিয়ে যান অন্য বন্ধুরা। সেখানেই মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান তার এক বন্ধু। পরে ওই শিক্ষার্থী আরও অসুস্থ বোধ করলে শনিবার তাকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান তরুণী।

খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

মেয়েটির গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। তার বাবা সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বাবার অভিযোগ, মোহাম্মদপুরের বাসায় নিয়ে তার মেয়ের সাথে আবারো জোরপূর্বক যৌন মিলন করা হয়েছে। এতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ওসি আবদুল লতিফ বলেন, ঠিক কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর। গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের হেফাজতে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনায়েত হোসেন শেখ জানান, শনিবার সকাল ৭টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন অন্য দুই ছাত্রী। তার রক্তচাপ ছিল খুবই কম, পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। দ্রুত তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। এক পর্যায়ে কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।

এর আগে ৭ জানুয়ারি ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী আনুশকা নুর আমিন অর্নাকে রাজধানীর কলাবাগানে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে ব্যাভিচার করে তার বন্ধু ফারদিন ইফতেখার ওরফে দিহান। তার অস্বাভাবিক যৌন নৃশংসতায় মেয়েটির মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তারের পর দিহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। দিহান ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী।