রবিবার থেকে গণস্বাস্থ্য নগর ও সাভার হাসপাতালে করোনা টেস্ট শুরু

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ২৩ ২০২০, ১৩:৫১

সরকারের অনুমোদন না পেলেও নিজেদের উদ্ভাবিত ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিট দিয়ে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মেডিনিউজকে জানান, আগামী রবিবার (২৪ মে) থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কিট দিয়ে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে পরীক্ষা শুরু হবে। এই পরীক্ষার জন্য ৭০০ টাকা করে নেওয়া হবে। এর মধ্যে অ্যান্টিজেনের জন্য ৪০০ আর অ্যান্টিবডির জন্য ৩০০ টাকা নেওয়া হবে।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার এবং গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল,ধানমন্ডিতে রবিবার থেকে একসঙ্গে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু হবে। দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।’

সরকারের অনুমোদন পাওয়ার আগেই কীভাবে আপনারা ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিট দিয়ে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছেন? জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘হাসপাতালে পরীক্ষা জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে কেন। এখন অনুমোদনবিহীন কিট দিয়ে পরীক্ষা জন্য সরকার চাইলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কারণ এ ক্ষেত্রে অপরাধ করলে হাসপাতাল করবে।’

বিএসএমএমইউ হাসপাতালের উপাচার্য ডা. কনক খান বরুয়া বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্যের মধ্যে নেই। এতটুকু জানি তারা কিছু কিট দিয়েছে আমাদের। কিটের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য কমিটি করা হয়েছে। তারা পদ্ধতিগত বিষয়ে কাজ করছে। তাদের কাজ শেষ হলে আমাকে জানাবে। সুতরাং এর বাইরে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্যের মধ্যে আমি নেই।’

নগর হাসপাতালে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হলেও সেখানে চিকিৎসা করা হবে না বলে উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘ধানমন্ডিতে কেউ আমাদের পাঁচ হাজার স্কয়ার ফুট জায়গা দিলে চিকিৎসাও করবো আমরা।’

এর আগে, নানান বিতর্কের পর গত ১৩ মে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউতে চাহিদা অনুযায়ী ২০০ কিট জমা দেয় গণস্বাস্থ্য। একই সঙ্গে পরীক্ষা খরচ বাবদ ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকাও জমা দেয় তারা। কিন্তু এরপর নয় দিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে অগ্রগতি না হওয়ার হতাশ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বলেন, ‘বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ দুইবারে আমাদের কাছ থেকে ৪০০ কিট নিয়েছে। আর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে আরও ৬০০ কিট এনে রাখতে বলেছে। কারণ কিট তো সাভারে তৈরি হয়। তারা যেকোনও সময় তা চাইবে।’

গণস্বাস্থ্যের কিটের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষে থেকে এখন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা ছয় হাজার টাকা করে নেবে পরীক্ষার জন্য। এই কিটের ভবিষ্যৎ হচ্ছে– প্রাইভেট হাসপাতালে এই ব্যবসা শেষ হওয়ার পর হয়তো আমাদের কিটের অনুমোদন দেবে আরকি। বিএসএমএমইউ তো শুক্র-শনিবার বন্ধ থাকে। আবার সরকারি বন্ধও থাকে, সেটাও তাদের মানতে হয়।’

গণস্বাস্থ্য কিট হস্তান্তর নিয়ে শুরু থেকে নানান টানাপোড়েন শুরু হয়। অনেক বিতর্কের পরে গত ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অথবা আইসিডিডিআর,বিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর গত ২ মে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে এই কিট উদ্ভাবন করেছেন একদল বিজ্ঞানী। অন্য গবেষকরা হলেন– ড. ফিরোজ আহমেদ, ড. নিহাদ আদনান, ড. মো. রাইদ জমিরুদ্দিন ও ড. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।