যে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বারবার কথা ঘুরায়

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ১১ ২০২০, ০০:১০

তানভীর ইসলাম রাতুল: সবার কাছেই একটি কথা বারবার শুনতে পাবেন যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) পাগল হয়ে গেছে। আজ বলে এটা কর, কাল আবার বলে ওটা করিস না। যেমন- কিছুদিন আগে WHO বলল, সুস্থ ব্যক্তিদের মাস্ক পড়ার দরকার নাই, পরে আবার বলল, সবার মাস্ক পড়া উচিত। আবার মাঝে বলল, জীবানুনাশকে করোনাভাইরাস মারো, পরে আবার বলল, জীবাণুনাশকে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। আবার রিসেন্টলি বলল, করোনা আক্রান্ত যাদের লক্ষণ নাই তাদের থেকে সংক্রমণ হয় না, পরের দিন আবার বলল সংক্রমণ হতে পারে। তো প্রশ্ন হল, WHO বারবার কথা ঘুরায় কেন?

আসলে একটি জিনিস বুঝতে হবে, WHO নিজে কোন গবেষণা করে কথা বলে না। তারা কিছু ক্ষেত্র পর্যন্ত সাপোর্টিং রোল প্লে করে। এই কথার মানে কি? এই কথার মানে হচ্ছে, কিছু সময়োপযোগী সায়েন্টিফিক প্রজেক্টে WHO থার্ড পার্টির মাধ্যমে ডোনেশন+কাজ দুটোই করিয়ে নেয়। আর মূলত তারা যে রোল প্লে করে তা হচ্ছে তাদের হিউজ রিসোর্স কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিকদের কাজগুলো রিভিউ করে। মানে ধরেন, আমিই WHO। এখন আপনি ও আপনার চার বন্ধু হচ্ছেন বিজ্ঞানী। আপনার বন্ধু রহিম আর করিম মিলে আবিস্কার করেছে যে করোনা ভাইরাস আসলে হাঁচি, কাশি, ড্রপলেটের ছড়ায়। অন্য এক দেশের প্রফেশনালরা বলতেছে যে চারিদিকে মাস্কের এতো সংকট ডাক্তারদের মাস্ক এর যোগান নাই। আমি (পড়ুন WHO) তখন দেশ বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সমস্যা, প্রফেশনালদের বক্তব্য ও রহিম+করিমের আবিস্কার সব মিলায়ে দেখলাম যে আসলে মাস্ক ডাক্তারদের জন্য জরুরি বেশি, তাই মাস্ক আসলে যে রোগী তার পড়ার দরকার আর ডাক্তারদের দরকার। সুস্থ মানুষদের পড়ার দরকার নাই।

পরের দিন আপনি, যদু আর মধু মিলে আবিস্কার করলেন যে, মাইক্রোড্রপলেট নামে আসলে একধরনের জিনিস আছে, যা কথা বলা বা হাঁচি কাশি দিলে ২ মিটার পর্যন্ত যায়। এখন যেহেতু আগের দিন পর্যন্ত আমার (পড়ুন WHO) কাছে তথ্য ছিল একরকম, আর আজ পেলাম নতুন কিছু। এই নতুন কিছুটা আসলে মানুষের কাছে জানান দেওয়া উচিত। তাই পরের দিন আবার মানুষের জন্যই জানান দিলাম যে, মাস্ক সবাইকে পড়তে হবে, কারণ মাইক্রোড্রপ্লেটের মাধ্যমেও করোনা ছড়ায়।

কিন্তু এতো এতো আপডেট রাখবো কিভাবে? আমরা তো ফেসবুক আর গুগল বিজ্ঞানী হয়ে গেছি, একইসাথে সাহিত্য, রোগতত্ত্ব, সিনেমা, মনোবিজ্ঞান, শিল্প, বানিজ্য, দেশ, মহাকাশ সব বিষয়ে জ্ঞান ও মতামত রাখি। এইসব পন্ডিতি বন্ধ করতে হবে আমাদের।

একটি মহামারী চলাকালে ক্ষণে ক্ষণে তথ্য বদলাবে, এটাই স্বাভাবিক। এখানে কনফিউশন রোধে সাংবাদিকদের বিশাল ভুমিকা আছে। এক নাম্বার হচ্ছে প্রত্যেকটা আপডেটের পাশে ডেট দেওয়া। অর্থ্যাৎ-
“উপসর্গহীন ব্যক্তির মাধ্যমে করোনা ছড়ায় না: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (৮ই জুন, ২০২০)”

“উপসর্গহীন ব্যাক্তির মাধ্যমেও করোনা ছড়াতে পারে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (৯ই জুন, ২০২০)”

-এভাবে শিরোনাম ও খবর প্রচার করা। যাতে সাধারণ মানুষ নিয়মিত টাইমলাইন অনুযায়ী আপডেট থাকতে পারে।

দুই নাম্বার হচ্ছে, হেলথ জার্নালিজমের সঠিক প্র্যাক্টিস নিয়ে আসা। বাংলাদেশে অনেক জিনিসের ভেতরে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে স্বাস্থ্য সম্পর্কে যে জানে তার থেকেই স্বাথ্যের জ্ঞান নেওয়া। চটকদার টাইটেল পরিহার করা। আর সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে ট্রান্সলেশন ঠিকঠাক করা। এই উপসর্গহীন মানে প্রি-সিম্পটোম্যাটিক না অ্যাসিপমটোম্যাটিক তা মানুষকে ঠিকঠাক ভাবে জানানো।

আর তিন নাম্বার, প্রতিদিন আজ এই মেডিসিন আবিস্কার হয়েছে, কাল সেই মেডিসিন আবিস্কার হয়েছে, এভাবে রিপোর্ট না করা। সময় আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট চ্যানেল গত তিন মাসে কতগুলা ভ্যাকসিন আর মেডিসিন আবিস্কারের খবর দিয়েছে হিসাব করেন তো? কিন্তু সেগুলো কি সাধারণ মানুষের নাগালে এসেছে! কি লাভ প্রতিদিন আবিষ্কারের নিউজ করে! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, মানুষকে সচেতন করা।


অনুলিখন: ডা.রিফাত আল মাজিদ, স্বাস্থ্য প্রতিনিধি, একুশে জার্নাল ডটকম