ময়মনসিংহে পেঁয়াজের বাজার দর মনিটরিং: মুহুর্তে কমেছে কেজি প্রতি ৪০ টাকা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ১৮ ২০১৯, ২০:৪৬

আকষ্মিকভাবে ক্রেতা সাধারণের ক্রয় মতার বাইরে চলে যাওয়া পণ্য পেয়াজ মুজদ, বাজারজাতকরণ ও জন ভোগান্তি সৃষ্টিকারীদের খুুজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ জন্য প্রশাসনের পাশপাশি আইন শৃংখলা বাহিনী মাঠে নেমেছে। পেয়াজ আমাদানী যথেষ্ট থাকার পরও কৃত্তিমভাবে সংকট দেখিয়ে মজুদধারী ও চড়া মূল্যে বিক্রি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়মনসিংহে পেয়াজের বাজার স্থিতিশীল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় মতার মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিংকালে পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নীত প্রাপ্ত) শাহ আবিদ হোসেন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে এ হুশিয়ারি দেন।

নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রণ্য পেয়াজ প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে ক্রয় মতার বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় পেয়াজের দর বেড়েই চলছে। শনিবার পর্যন্ত ময়মনসিংহের মেছুয়া বাজার পাইকারী আড়ৎ ও মেছুয়া বাজারের খুচরা দোকানগুলো প্রকারভেদে ২১০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে পেয়াজ বিক্রি হয়। রবিবার সকালে এই পেয়াজ কেজি প্রতি ২৪০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যায়। হঠাৎ করেই যেন পেয়াজ একটি স্পর্শকাতর পণ্য হয়ে উঠেছে। সারা দেশব্যাপী পেয়াজ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে পিছিয়ে নেই ময়মনসিংহেও। চলমান পেয়াঁজের সংকট নিয়ে ময়মনসিংহে গত দুই/তিনদিন ধরে অস্বাবিকহারে মূল্যবৃদ্ধি, মানুষজনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন নিজেই বাজার মনিটরিংয়ে নামেন। এর আগে পুলিশ সুপার পেয়াজের বাজারে নামছে এ ধরণের খবরে মেছুয়া বাজারের পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ের একাধিক ব্যবসায়ী তাদের দোকান ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে গা ঢাকা দেয়। অনেকেই তাদের প্রতিষ্ঠানে টানিয়ে রাখা মূল্য তালিকা বোর্ডে নতুন করে দর লিখে টানিয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পুলিশ সুপারের জিজ্ঞাসাবাদে খুচরা ব্যবসায়ীরা দাবী করেন, পেয়াজের দর কমে গেছে, তারা ঘাটতি বা লোকসান দিয়ে আজ রবিবার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে অনেককেই পুলিশ সুপার তাদের ক্রয় মূল্য দেখাতে বললে নানা তালবাহানা শুরু করেন। খুচরা ববসায়ীদের অনেকেই বলেন, তারা স্থানীয় আড়ৎদারদের দর অনুসারে কিনে এনে বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে অনেক ক্রেতা বলতে থাকেন, পুলিশ আসছে খবর পেয়ে মূল্য তালিকা নতুন করে কমিয়ে লিখে টানিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। পুলিশ চলে গেলে আবার অধিক দামে বিক্রি করবে। এটা মূলত ব্যবসায়ীদের কারসাজী। পরে পুলিশ সুপার বেশ কয়েকটি পেয়াজের পাইকারী দোকান বা আড়তে বাজারদর সম্পর্কে খোজ খবর নেন। এ সময় মেছুয়া বাজারের ইসমাইল ট্রেডার্স এর মালিক বলেন, আজকের বাজার দর ১৭০ টাকা। তবে কত টাকা দরে কেনা তা না জানিয়ে বলেন, পাবনার কাশিনাতপুর ও ফরিদপুর থেকে মজুদদারগণ তাদের আড়তে পেয়াজ পাঠিয়েছেন। যে দরে বিক্রি করতে বলেছেন সেই দরেই বিক্রি করছি। আমরা কেজি প্রতি আড়তদারের ভাড়া হিসাবে এক টাকা পাই। অপর পাইকারী আড়তদার হাবিবুর রহমান টের্ডাস বলেন, প্রকার ভেদে আজকের বাজার দর ১৭০/১৮০ টাকা। প্রতি কেজি এক টাকা কমিশন ভিত্তিতে তারা বিক্রি করছেন। মামা ভাগ্নে আড়তদার বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়। মেসার্স রতন আইন টেডার্স বলেন, পাবনার কাশিনাতপুর থেকে আমদানীকারকরা তাদের আড়তে পাঠান। তাদের দেওয়া দরেই পাইকারী বিক্রি করা হচ্ছে। তারা কেজি প্রতি এক টাকাহরে কমিশন পাচ্ছে। এর বাইরে আর কিছু নয়। তবে এ সকল আড়তদারগণ পেয়াজের বাজার দর সম্পর্কে আমাদানী কারকদের উপর দায় চাপিয়ে যেভাবে খুশি সেভাবেই বিক্রি করছেন বলে ময়মনসিংহবাসী দাবী করছেন। একাধিক আড়তদার আমদানী কারকদের উপর দায় চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্ঠা করলে পুলিশ বাজার মনিটরিং আরো কঠোর করার ঘোষণা দেন। এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, প্রতিদিন পেয়াজের বাজার সম্পর্কে খোজ নেওয়া হবে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মাঝে সচেতনতা তৈরী, লাফিয়ে লাফিয়ে বাজার দর ক্রয় মতার বাইরে চলে যাওয়ার কারণ চিহিৃত, কারসাজির সাথে জড়িতদের তথ্য সংগ্রহ, কিভাবে কোন জায়গা থেকে পেয়াজ আসছে এবং মূলত কারা এই সংকট তৈরীর মূল অন্তরায় তাদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। অচীরেই বাজার কারাসাজির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশী অভিযান চালানোয় পেয়াঁজ প্রতি কেজিতে ৩০/৪০ টাকা কমমূল্যে কিনতে পেরে ভোক্তারা ভেজায় খুশি। ভোক্তারা বলেন, পুলিশী অভিযান অব্যাহত থাকলে পেয়াঁজ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা মজুদের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ কম এবং সংকট তৈরী করে বাড়তি মুনাফার সুযোগ পাবেনা। ময়মনসিংহের পাইকারী পেয়াজ বিক্রেতা আড়তদারদের তথ্য যাচাইসহ পেয়াজের বাজার নিয়ে আরো অধিক পর্যবেণ, মনিটরিং দাবী করে শহরবাসী বলেন, মূলত আমাদানী কারক আর আড়তদারগণ দেশব্যাপী পেয়াজ কারসাজির সাথে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হতে প্রশাসনের প্রতি দাবী করেছেন জেলাবাসী।
এ সময় কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম, ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দ, ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডিআইওয়ান মোখলেছুর রহমান আকন্দসহ পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।