মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী রহ.

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ১৭ ২০১৯, ০১:০৮

মাওলানা আমিনুল ইসলাম : ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ফেদায়ে মিল্লাতকে নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত।বড় গর্বের সাথে লিখছি, ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফেদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী রহ. এর যে কি অপরিসীম অবদান ছিল। সেটা শুনলে গর্বে বুকটা ভরে যায়। একজন হক্কানী আলেম, দারুল উলুম দেওবন্দের সূর্য সন্তান, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.-এর সাহেবজাদা, আসআদ মাদানী রহ. পাকহানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশজুড়ে জুলুম নির্যাতন শুরু করেছিল, ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশের মজলুম মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, আমাদের সন্তানদেরও জানা নেই। বাংলাদেশের বহু আলেম হয়তো জানেন না। কিন্তু ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ. মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে রক্ষা করার জন্য যে কত অবদান রেখেছিলেন, সেগুলো ইতিহাসের পাতায় জ্বল জ্বল করছে। তাঁর অবদান এই বাঙালি জাতির চিরদিন মনে থাকবে।

আমরা কি জানি, ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ.কে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিশেষ সন্মাননা দিয়েছেন? অনেকের হয়তো জানা নেই। সত্যি আমরা গর্ব করতে পারি, একজন আলেম। দেওবন্দের সূর্য সন্তান, মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বিশেষ সন্মাননা পেয়েছেন।

ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীকে, ১ অক্টোবর ২০১৩ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধে বিশাল অবদান রাখায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সন্মাননা ( মরণোত্তর) পদক প্রদান করে বিরল সন্মানে ভুষিত করেছেন।

এই সন্মান আমাদের ওলামায়ে কেরামের। এটা আমাদের গর্ব করার মত। তাঁর মুক্তিযুদ্ধের অবদান আমাদের বুকটা ভরে যায়।

সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ. তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজধানী দিল্লিসহ ভারতজুড়ে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০টি মিছিল – মিটিং করেন। পাকিস্তানী বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন পাকিস্তানী বাহিনীর নির্যাতন বৃদ্ধির মদদ হিসেবে এই উপ মহাদেশের উদ্দেশ্যে তাদের সপ্তম নৌবহর যাত্রা শুরু করেছিল, ঠিক সেই সময়ে সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী ৫০ হাজার মুসলিম নিয়ে দিল্লিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করেছিলেন। তাঁর সেই ঘেরাও কর্মসূচি বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়ে ছিল।

তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ ভারতে বিভিন্ন জায়গায় শরণার্থী শিবির গড়ে তুলেছিলেন। সে শিবিরে তাঁর সংগঠন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে নিয়মিত রিলিপ বিতরণ করা হত।

সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ. ছিলেন সে সময়ে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারী। তাঁর সেই সংগঠনের ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধের সময় বড় অবদান রেখেছিল। এই বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের পাশে তিনি এবং তাঁর সংগঠন দাঁড়িয়েছিলেন।

যুদ্ধের পর আমাদের এই বাংলাদেশে আলেম সমাজ এবং দ্বীনি শিক্ষার নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কেননা, কিছু লোক তো মিস গাইড হয়েছিল। আবার কিছু পাকবাহিনীর সাথে সখ্যতা গড়ে এদেশের নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন চালিয়েছিল। আর ঐ সূত্রধরে সব আলেমদের স্বাধীনতাবিরোধী মনে করা হচ্ছিল।

১৯৭৩ সনে ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ, ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দুত হিসেবে ঢাকায় আগমন করেন।

তিনি তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত আলেম, আল্লামা কাজি মু’তাসিম বিল্লাহ রহ.কে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সাথে সাক্ষাত করেন। আর বঙ্গবন্ধুকে বোঝাতে সক্ষম হন, আলেমগণ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল না। বরং দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

আসআদ মাদানী রহ. এবং কাজি মু’তাসিম বিল্লাহ রহ. তারা বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠকের পরেই, বঙ্গবন্ধু এদেশর সকল দ্বীনি প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে মাদ্রাসা গুলো তার যথা নিয়মে চলে আসছে।

ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীর অবদান আসলে হিসাব করে শেষ করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের জন্য, এদেশকে বাঁচাবার জন্য, দেশের মানুষকে পাক বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, সর্বশেষ এ দেশের দ্বীনি প্রতিষ্ঠান চালু করার ক্ষেত্রে তাঁর সীমাহীন অবদান। আমরা গর্বিত, ফেদায়ে মিল্লাতের অপরিসীম খেদমতের জন্য। মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দুআ করি, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে সমাসিন করুন। আমিন।