মিসরের সাবেক প্ৰেসিডেন্ট মুরসীর ইন্তেকালে মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী’র শোক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ১৮ ২০১৯, ১৫:৪২

নীল নদের দেশ মিশরের সাবেক নিৰ্বাচিত প্ৰেসিডেন্ট হাফেজ মুহাম্মদ মুরসীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্ৰকাশ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ও হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাও. আশরাফ আলী নিজামপুরী।

আজ ১৮ জুন মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্ৰেরিত এক শোকবাৰ্তায় মাও. আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেন, মুহাম্মাদ মুরসী ছিলেন, মিসরের একমাত্র নির্বাচিত বৈধ প্রেসিডেন্ট। তিনি ছিলেন মিসরের ইসলামি বসন্তের নতুন সেনাপতি। তিনি সর্বদা দীনের উপর অটল থেকে সর্বত্র ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন একজন সৎ, যোগ্য ও খোদভীরু দায়িত্ববান ব্যক্তি। তার অল্প সময়ের ক্ষমতাতেই সর্বস্তরে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার মুখ দেখেছিল।

মাও. নিজামপুরী বলেন, গাজা, হামাস, ইয়ামন, ইরাক ইত্যাদি অঞ্চলের মানুষের পরম বন্ধু প্রেসিডেন্ট মুরসি ছিলেন আপোষহীন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার। যার ফলে শুধু মিসর নয় গোটা উম্মাহ আজ তাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তাকে। তার মৃত্যুতে শুধু মিসর নয় গোটা মুসলিম উম্মাহ একজন সৎ, সাহসী ও দক্ষ নেতাকে হারালো।

উল্লেখ্য, ২০ আগস্ট ১৯৫১ সালে উত্তর মিশরের শারক্বিয়া প্রদেশে জন্ম নেওয়া মুহাম্মদ মুরসী ১৯৭৫ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল বিষয়ে সম্মাননা ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৮২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াতে মুহাম্মাদ মুরসির প্রকৌশল বিষয়ে গবেষণা শেষ হয় এবং তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এ বছরই তিনি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি নর্থরিজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৫ সালে মুরসি শারকিয়া প্রদেশেরযোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে মিশরে চলে আসেন। মুহাম্মদ মুরছি তার রাজনৈতিক দল ফ্রিডম অ্যাণ্ড জাস্টিস পার্টি ছাড়াও মিসরের আলোচিত সংগঠন বাডারহুডের সাথেও যুক্ত ছিলেন। এবং মিসরের ৫ ম নাম্বার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

মৃত্যুকালে মুহাম্মাদ মুরসির পাঁচ সন্তান, স্ত্রী ও অসংখ্য ভক্তবৃন্দ রেখে যান।

মুরসি ২০০০ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০০৫ সাল পর্যন্ত মিশরের সংসদে বহাল ছিলেন। এ সময়ে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ২০১১ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি)নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলে মুরসী তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। মিশরের দুই পর্বের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যেটি ২০১২ সালের মে ও জুনে অনুষ্ঠিত হয়, সে নির্বাচনে মুরসী এফজেপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন এবং উভয় পর্বেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

২৪ জুন, ২০১২ তারিখে মিশরের নির্বাচন কমিশনমুহাম্মাদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারাকের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিকেরবিপরীতে দ্বিতীয় পর্বের ভোটে, যেটি প্রথম পর্বের শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, জয়ী ঘোষণা করে। কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী মুরসী ৫১.৭ শতাংশ এবং আহমেদ শফিক ৪৮.৩ শতাংশ ভোট লাভ করেন।

নির্বাচন কমিশন এই ফলাফল ঘোষণা করার পর মুহুর্তেই মুসলিম ব্রাদারহুড ও এফজেপি আনুষ্ঠানিক ভাবে মুহাম্মাদ মুরসিকে তাদের সকল সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেয় এবং তাকে ‘মিশরের সর্বস্তরের মানুষের রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।