মা-বাবাই আমার পৃথিবী আমার জান্নাত

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২০ ২০২০, ১৬:৫২

সালাহ‌উদ্দীন জাহাঙ্গীর ।।

আমি কিছু কিছু তরুণকে নিয়ে চিন্তিত, ব্যথিত, মর্মাহত!

কয়েকদিন আগেও আমার আব্বা আমাকে খুব সামান্য কারণে বেশ বকাঝকা করলেন। বাড়িতে আমার বউ ছিলো, বোন ছিলো, মা ছিলো। সবার সামনেই বেশ হাই ভোল্টেজ বকা। আমি শুনলাম। যদিও আমি আব্বার সামনে দু’কথা বলার মতো বড় হয়েছি, তাকে যোগ্য কারণটা দেখানোর মতো লায়েক হয়েছি, কিন্তু আমি আমার পিতার সামনে একটা টুঁ শব্দও করিনি। কখনোই করি না। আজ পর্যন্ত করিনি।

আমার বাবা এমনিতেই রাগী মানুষ। নানা কারণে তার রাগের টেম্পারেচার হঠাৎ করেই ঊর্ধ্বগামী হয়ে যায়। কখনো অকারণে। তবুও আমি তার সামনে কখনো্ উঁচুগলায় কথা বলি না। মায়ের সামনেও না।

আমার বাবা-মা আলেম নন। খুব যে ধার্মিক পরিবার আমাদের, তাও না। অতি সাধারণ মুসলিম পরিবার। বাবা তাবলিগের সঙ্গে জোরেশোরে সম্পৃক্ত। আমাদের গ্রামে আমি ছাড়া কোনো দাওরাপাশ আলেম নেই। গ্রামের একমাত্র অযোগ্য মওলানা আমি।
মাঝেমাঝে আফসোস করে ভাবতাম, যদি কোনো আলেম পরিবারে জন্ম হতো আমার! কতোই না ভালো হতো!! কী সুন্দর দীনি পরিবেশ থাকতো চারদিকে। চারদিকে বোরকা বোরকা, টুপি টুপি কথাবার্তা!

সে সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে যারা আলেম পরিবারের সন্তান, তাদের দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছি, আনন্দিত হয়েছি। এমন পরিবারের সন্তান, যাদের সঙ্গে কখনো পরিচিত হয়েছি, চেষ্টা করেছি তাদের মুখ থেকে তাদের পরিবারের গল্প শুনতে। আমার ভালো লাগতো।
কিন্তু পরিচিত কারো কারো সংবাদ শুনে সম্প্রতি কষ্ট পেয়েছি, রাগান্বিত হয়েছি।

০২
আমার জন্য আমার পিতা গর্ববোধ করেন। কারণ, এই জীবনে আমি এমন কোনো কাজ করিনি যার কারণে অন্যের সামনে তার মাথা হেঁট হয়ে যায়। আমার খুব ছোট ছোট অর্জনেও তারা বড় বড় খুশি আমাকে উপহার দিয়েছেন। এসব আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।
আমি যখনই কোনো কাজ কতে যাই, ভাবি- এ ব্যাপারটা যদি আমার মা-বাবা জানতে পারে, যদি তারা ব্যাপারটা শুনে তবে কি তারা কষ্ট পাবে? তাদের সামান্য কষ্ট হোক, এমন কোনো কাজ যেন আমার দ্বারা না হয়। জীবনের অনেক পাপকাজ থেকে বিরত হয়েছি শুধু তারা কষ্ট পাবে- এই কথা ভেবে। সর্বদা অন্তরে তাদের উপস্থিতি আমার জন্যে এক ধরনের দাওয়াইয়ের কাজ করেছে। মা-বাবা ইজ মা-বাবা, এর বাইরে তাদের আর কোনো পরিচয় আমার কাছে নেই।

আমি ঢাকায় অত্যধিক ব্যস্ত না থাকলে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যাই। দুই দিন, চারদিন- কখনো এক সপ্তাহও থাকি। মা-বাবা চাইলে আমি সারাজীবনের জন্য ঢাকাছাড়া হতে পারি। সকল কাজকর্ম, ব্যস্ততা, খ্যাতি-যশের হাতছানি পিছু ফেলে স্রেফ একজন গ্রাম্য হুজুর হয়ে গ্রামে চলে যেতে পারি- যদি তারা আমাকে একবার আদেশ দেন। তাদের আদেশের বাইরে আমার কোনো পৃথিবী নেই। আমার সমগ্র পৃথিবী তাদের পায়ের নিচে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে।

কারণ আমি জানি, আমি যতো বড় পাপী, তাতে নিজের আমলনামা দিয়ে বেহেশতে যাওয়া অসম্ভব। মা-বাবার মুখের দিকে একবার মুগ্ধ নয়নে তাকালে একটা কবুল হজ্জের সওয়াব পাওয়া যায়; মা-বাবার দোয়া আর আল্লাহর আরশের মাঝে কোনো পর্দা থাকে না; মা-বাবা যদি বলে- তুই আমার বেহেশত, তাহলে আমার বেহেশত অবশ্যম্ভাবী! আর যদি বলে- তুই তো আমার দোজখ, তাহলে আমার জন্য জাহান্নাম অবধারিত!

প্রিয় তরুণ! আমার বেদনার কাছে বসো!
কোন সাহসে তুমি তোমার পিতার সামনে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় কথা বলো? কোন স্পর্ধায় তুমি তোমার মায়ের চোখে অশ্রু ঝরাও? কোন পৃথিবীর মিথ্যা হাতছানিতে তুমি পিতার মুখে মাখাচ্ছো অপমানের চুনকালি? কোন অধিকারে? পৃথিবীর সব জিনিস পাপ আর পুণ্য দিয়ে বিচার করো না। পাপ-পুণ্যের বাইরেও রয়েছে এক ধরনের অপরাধ; এর হিসাব আমলনামা দিয়ে হয় না, মনুষ্যত্ব দিয়ে করতে হয়।

প্রিয় যুবক! আমার ভালোবাসার কথা শোনো!
পিতার পায়ের সামনে নতজানু হয়ে বসো। তোমার চোখের শোকরিয়ার পানি দিয়ে দিবানিশি ধুয়ে দাও তার পা দুটো। মায়ের আঁচলের নিচে যে অভয়াশ্রয়, এখানে এসে আশ্রয় নাও হে ক্লান্ত যুবক। পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কোনো আশ্রয় পাবে না তুমি, এর চেয়ে শান্ত-সুনিবিড়! ঘুমিয়ে পড়ো পিতার সাদা আস্তিনের নিচে। তোমার স্বপ্ন আর সফলতার একক উৎস এখানে, এখানেই!