মহিলা মজলিসের কার্যক্রম ও সময়ের প্রেক্ষাপট 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ২১ ২০২৩, ২৩:৫২

ফুজায়েল আহমাদ নাজমুল: যখন নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়ন, নারী মুক্তি ও প্রগতির ধূয়া তুলে তথাকথিত নারীবাদী ও তাদের দোসররা আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংসের মাধ্যমে একটি অসভ্য সমাজ গড়ে তুলতে মরিয়া।

যখন তারা ইসলাম ও ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিয়মিত টেলিভিশন টকশোতে কথা বলছে। সোস্যাল মিডিয়ায় লিখছে। রাজপথে মিছিল করছে। মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছে। আর এর মারাত্মক প্রভাবে নারী জাতিরা আক্রান্ত হচ্ছে বিকৃত যৌন লালসার উপকরণ হিসেবে।

যখন তারা বোরকা-হিজাবের প্রতি ঘৃণা ছড়াচ্ছে এবং এরই সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বোরকা-হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে।

“কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল সভা”

যখন তারা ইসলামে বিশ্বাসী মা-বোনদের টার্গেট করে একটি মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এগুচ্ছে এবং তাদের ধোঁকায় পড়ে কলেজ ইউনিভার্সিটির অসংখ্য মেয়েরা ধাবিত হচ্ছে একটি অনিশ্চিত বিপর্যয় ও ধ্বংসের দিকে।

যখন স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া লাখ লাখ মেয়ে শিক্ষার্থী, অফিস আদালতে থাকা অগণিত নারী চাকুরীজীবী ও শহর এবং গ্রামে থাকা লাখ লাখ গৃহিনীদের সঠিক গাইড করার জন্য ইসলামী দলগুলোর সুষ্ঠু কোন পরিকল্পনা নেই তখনই আওয়ামিলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বাম দলগুলো এককভাবে সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে। তারা তাদের আদর্শিক চিন্তা ও চেতনার জায়গা থেকে দেশের নারী সমাজকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে এবং নারীরাই তাদের আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম শক্তি হিসেবে ভুমিকা রাখছে।

“নারী ও শিশু নির্যাতন এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধে ইসলামী অনুশাসন শীর্ষক সেমিনার”

যদিও জায়ায়াতে ইসলামী নারী সমাজ নিয়ে অনেক আগ থেকে কাজ করছে তবুও সময়ের দাবী ও প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে খেলাফত মজলিস নারী সমাজের জন্য ইসলামী মহিলা মজলিস নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলেছে এবং আমরা লক্ষ করছি এ সংগঠনটি একটি মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে নারীদের মাঝে কাজ করছে। তারা ইসলাম ও জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত নারীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে এবং ইসলাম বিদ্বেষি নারীনেত্রীদের মোকাবেলার জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদেরকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলছে যা সত্যিই আশা জাগানিয়া।

মহিলা মজলিসের কর্মতৎপরতাকে অনেক ইসলামী দলের সচেতন কর্মীরা পজেটিভলি নিচ্ছেন এবং প্রমোটও করছেন। আবার কিছু দলের কর্মীরা নেগেটিভলি দেখছেন। তারা নারীদের রাজনীতির মাঠে দেখতে নারাজ। নারীদের রাজনীতিতে নিয়ে আসাকে তারা একধরনের ফেতনা মনে করছেন। এক্ষেত্রে রয়েছে তাদের নানা যুক্তি। তবে সময়ের দাবী ও প্রেক্ষাপট যে ভিন্ন তা বুঝতে তাদের একটু দেরি হচ্ছে।

বিভিন্ন মুসলিম দেশের ইসলামী দলের নারী কর্মীরা বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের দলীয় ব্যানার নিয়ে রাজপথে নেমে আসার ঐতিহ্য রয়েছে। যখন ফিলিস্তিনের নারীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজপথে শ্লোগান তুলে তখন আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। যখন ইউরোপের দেশে হিজাব পরে নারীরা ইসলাম বিদ্বেষিদের বিরুদ্ধে মিছিল করে তখন আমরা নির্দ্বিধায় তাদের স্বাগত জানাই।

যখন সিরিয়া, কাশ্মীর, আরাকানের হিজাব পরা মুসলিম নারীরা তাদের স্বাধীনতার দাবীতে রাজপথে মিছিল করে তখন আমরা সমর্থন জানাই। কিন্তু যখন ইসলাম বিদ্বেষি শাহবাগী তথাকথিত নারীবাদী ও শ্লোগান কন্যাদের বিপরীতে মহিলা মজলিসের নারীরা হিজাব পরে রাজপথে মিছিল করে, ঘরোয়া পরিবেশে মিটিং করে, সেমিনার করে তখনই কেউ কেউ সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন যা সময়ের প্রেক্ষাপট মোটেই প্রত্যাশা করে না।

“ভারতে হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থীকে হেনস্তার প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন”

মহিলা মজলিসের কার্যক্রম নিয়ে যারা সমালোচনা করেন তারা হয়তো জানেন না যে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের শর্তানুযায়ী সকল রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখা বাধ্যতামূলক করে আইন রয়েছে। যদি কোন রাজনৈতিক দল এই শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। আর এই শর্ত মেনেই নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলো তাদের নিবন্ধন কনফার্ম করতে হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে। তবে বেশিরভাগ ইসলামী দল নির্বাচন কমিশনের এই শর্ত পূরণ শুধু কাগুজে রাখলেও হয়তো একসময় দৃশ্যমান প্রমাণ করা লাগতে পারে।

সমালোচনা একটি দলের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে না। শাণিত করে। গতিশীল করে। সমালোচনা হোক। তবে তা হোক গঠনমূলক। শুধুমাত্র বিতর্ক সৃষ্টির জন্য অগঠনমূলক সমালোচনা কারো কাছ থেকে কাম্য নয়। আমরা যারা এই অসুস্থ সমাজটাকে ইসলামী সমাজে পরিবর্তন করতে চাই আমাদের মনটাকে আরো উদার করা উচিত। ভাল কাজের প্রশংসা করা শেখা উচিত। হিংসার বশবর্তী হয়ে আমাদের আবেগ যেন বিবেককে পরাজিত না করে, আমাদের জজবা যেন যুক্তিকে ধূলিসাৎ না করে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা খুবই ইম্পরট্যান্ট।

আমি মনে করি, নারী সমাজ নিয়ে প্রত্যেক ইসলামী দলকে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। যেখানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী সেখানে নারী জাতিকে বাহিরে রেখে সমাজ বিপ্লবের আশা করা যায় না। তাই নারী সমাজের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গির মুলনীতি ও বিধান ঠিক রেখে তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। ইসলামী মহিলা মজলিস সহ যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছেন সবার জন্য শুভ কামনা। আল্লাহ সকলের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।

লেখক: সহ-সাধারণ সম্পাদক, খেলাফত মজলিস, লন্ডন মহানগরী।