মহিলাদের নামাজের উত্তম জায়গা কোথায়? ‘

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ১৭ ২০১৮, ২৩:৪৫

মহিলাদের নামাজের জন্য মসজিদে গমন নাজায়িয , বরং হাদীস শরীফে আছে মহিলাদের নামাজের উত্তম জায়গা হচ্ছে নিজের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ। অথচ, এক শ্রেনীর অজ্ঞ লোক সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের ইজমা কে অবজ্ঞা করে মহিলা মসজিদে নামাজকে বৈধ বানানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে এই পোষ্টের অবতারনা।

১. হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর সুত্রে বর্ণিত –
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗَﺎﻝَ ﺻَﻼَﺓُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﻓِﻰ ﺑَﻴْﺘِﻬَﺎ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﻣِﻦْ ﺻَﻼَﺗِﻬَﺎ ﻓِﻰ ﺣُﺠْﺮَﺗِﻬَﺎ ﻭَﺻَﻼَﺗُﻬَﺎ ﻓِﻰ ﻣَﺨْﺪَﻋِﻬَﺎ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﻣِﻦْ ﺻَﻼَﺗِﻬَﺎ ﻓِﻰ ﺑَﻴْﺘِﻬَﺎ গ্ধ.( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ : ৫৭০)
রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মহিলাদের ঘরের অভ্যন্তরে আদায়কৃত নামায ঘরের আঙ্গিনায় আদায়কৃত নামাযের তুলনায় উত্তম। ঘরের ভেতরের ছোট কামরায় আদায়কৃত নামায ঘরের অভ্যন্তরে আদায়কৃত নামাযের তুলনায় উত্তম। [আবু দাউদ : ৫৭০]

২. হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা. থেকে বর্ণিত –
ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺧَﻴْﺮُ ﻣَﺴَﺎﺟِﺪِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻗَﻌْﺮُ ﺑُﻴُﻮﺗِﻬِﻦَّ . ‏( ﻣﺴﻨﺪ ﺍﺣﻤﺪ : ২৬৫৪২)
রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম. ইরশাদ করেন-
মহিলাদের উত্তম মসজিদ তাদের ঘরের অন্দরমহল।
[মুসনাদে আহমদ : ২৬৫৪২]

৩. হযরত উম্মে হুমায়দ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত –
ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓِ ﺃَﺑِﻲ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﺍﻟﺴَّﺎﻋِﺪِﻱِّ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺟَﺎﺀَﺕْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﺣِﺐُّ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻣَﻌَﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺪْ ﻋَﻠِﻤْﺖُ ﺃَﻧَّﻚِ ﺗُﺤِﺒِّﻴﻦَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻣَﻌِﻲ ﻭَﺻَﻠَﺎﺗُﻚِ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺘِﻚِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚِ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻚِ ﻓِﻲ ﺣُﺠْﺮَﺗِﻚِ ﻭَﺻَﻠَﺎﺗُﻚِ ﻓِﻲ ﺣُﺠْﺮَﺗِﻚِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻚِ ﻓِﻲ ﺩَﺍﺭِﻙِ ﻭَﺻَﻠَﺎﺗُﻚِ ﻓِﻲ ﺩَﺍﺭِﻙِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚِ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻚِ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِ ﻗَﻮْﻣِﻚِ ﻭَﺻَﻠَﺎﺗُﻚِ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِ ﻗَﻮْﻣِﻚِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚِ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻚِ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِﻱ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺄَﻣَﺮَﺕْ ﻓَﺒُﻨِﻲَ ﻟَﻬَﺎ ﻣَﺴْﺠِﺪٌ ﻓِﻲ ﺃَﻗْﺼَﻰ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﺘِﻬَﺎ ﻭَﺃَﻇْﻠَﻤِﻪِ ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺗُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﻘِﻴَﺖْ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺣﻤﺰﺓ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﻟﺰﻳﻦ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ : ২৭০৯০)
তিনি রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দরবারে হাযির হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার পিছনে নামায আদায় করা আমার প্রবল ইচ্ছা। রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি জানি আমার পিছনে নামায আদায় করতে তুমি বড়ই আগ্রহী। অথচ তোমার জন্য তোমার ঘরের ছোট কামরায় নামায বড় কামরার নামাযের চেয়ে উত্তম। বড় কামরার নামায ঘরের আঙ্গিনার নামাযের চেয়ে উত্তম। ঘরের আঙ্গিনার নামায মহল্লা মসজিদের নামাযের চেয়ে উত্তম। মহল্লা মসজিদের নামায আমার মসজিদের নামায অপেক্ষা উত্তম। বর্ণনাকারী বলেন, উম্মে হুমায়েদ ঘরের অভ্যন্তরে নামাযের স্থান বানাতে নির্দেশ দেন। সে মতে ভেতরের এক অন্ধকার কোঠায় নামাযের স্থান বানানো হলো এবং তিনি জীবনভর সে স্থানে নামায আদায় করতে থাকেন। আর এ অবস্থায় তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেলেন।
[মুসনাদে আহমাদ : ২৭০৯০]

৪. হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-
ﻋﻦ ﺃﻡ ﺳﻠﻤﺔ ﺯﻭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻟﺖ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺣﺠﺮﺗﻬﺎ ﻭﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺣﺠﺮﺗﻬﺎ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺩﺍﺭﻫﺎ ﻭﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺩﺍﺭﻫﺎ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﺧﺎﺭﺝ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻻﻭﺳﻂ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ : ৯১০১)
রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন ‘মহিলাদের জন্য নিজের ছোট কামরার নামায বড় কামরার নামাযের চেয়ে উত্তম। বড় কামরার নামায ঘরের আঙ্গিনার নামায থেকে উত্তম। বাড়ির নামায বাড়ির বাইরের নামায থেকে উত্তম। [আল মুজামুল আওসাত : ৯১০১]

৫. হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ “ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺣﺠﺮﺗﻬﺎ ﻭﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺣﺠﺮﺗﻬﺎ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺩﺍﺭﻫﺎ ﻭﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺩﺍﺭﻫﺎ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻴﻤﺎ ﻭﺭﺍﺀ ﺫﻟﻚ ” . ‏( ﺍﻟﺘﻤﻬﻴﺪ ﻻﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺒﺮ : ৪০১/২৩)
মহিলাদের ছোট কামরার নামায বড় কামরার নামাযের চেয়ে উত্তম। বড় কামরায় নামায ঘরে আঙ্গিনার নামাযের চেয়ে উত্তম। আর ঘরের আঙ্গিনার নামায অন্যান্য জায়গায় নামাযের তুলনায় উত্তম।
[আত তামহীদ : খ.২৩ পৃ.৪০১]

৬. হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু. থেকে বর্ণিত-
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻭﺣﺪﻫﺎ ﺗﻔﻀﻞ ﻋﻠﻰ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻤﻊ ﺑﺨﻤﺲ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺩﺭﺟﺔ . ‏( ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ :২২৩/৪)
রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মহিলাদের একাকী নামায জামাতের সাথে আদায়কৃত নামাযের থেকে পঁচিশগুণ বেশী ফযিলতপূর্ণ। [জামেউস সগীর : খ.৪ পৃ.২২৩]

৭. হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু. থেকে বর্ণিত-
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺇﻥ ﺃﺣﺐ ﺻﻼﺓ ﺗﺼﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﺷﺪ ﻣﻜﺎﻥ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﻇﻠﻤﺔ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ : ১৬৯১)
রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহর নিকট মহিলাদের ঐ নামায সবচেয়ে প্রিয় যা ঘরের বেশী অন্ধকারময় কামরায় আদায় করা হয়।
[সহীহ ইবনে খুযায়মা : ১৬৯১]

৮. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু. থেকে বর্ণিত-
ﻭﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻗﺎﻝ : ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻋﻮﺭﺓ ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﺘﺨﺮﺝ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﻭﻣﺎ ﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺑﺄﺱ ﻓﻴﺴﺘﺸﺮﻓﻬﺎ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻓﻴﻘﻮﻝ : ﺇﻧﻚ ﻻ ﺗﻤﺮﻳﻦ ﺑﺄﺣﺪ ﺇﻻ ﺃﻋﺠﺒﺘﻴﻪ ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﺘﻠﺒﺲ ﺛﻴﺎﺑﻬﺎ ﻓﻴﻘﺎﻝ : ﺃﻳﻦ ﺗﺮﻳﺪﻳﻦ ؟ ﻓﺘﻘﻮﻝ : ﺃﻋﻮﺩ ﻣﺮﻳﻀﺎ ﺃﻭ ﺃﺷﻬﺪ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﺃﻭ ﺃﺻﻠﻲ ﻓﻲ ﻣﺴﺠﺪ ﻭﻣﺎ ﻋﺒﺪﺕ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﺭﺑﻬﺎ ﻣﺜﻞ ﺃﻥ ﺗﻌﺒﺪﻩ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ
তিনি বলেন, মহিলারা আপাদমস্তক পর্দায় থাকার বস্তু। নি:সন্দেহে মহিলারা নির্দোষ অবস্থায় ঘর থেকে বের হয়। অতঃপর শয়তান তার প্রতি কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, তুমি যার সামনে দিয়েই অতিক্রম করবে তার কাছেই পছন্দনীয় হবে। মহিলারা যখন কাপড় পরিধান করে তখন পরিবারের লোকজন জিজ্ঞেস করে, কোথায় যেতে চাচ্ছ ? তখন সে বলে, কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাচ্ছি। অথবা মাইয়্যেতের জানাযা পড়তে যাচ্ছি। অথবা মসজিদে নামায পড়তে যাচ্ছি। বস্তুত: মহিলাদের অন্দর মহলে ইবাদতের চাইতে কোন ইবাদাতই উত্তম নয়। আল্লামা তবরানী রহ. হাদীসটিকে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী দ্বারা বর্ণনা করেছেন। (আল-মু‘জামুল কাবীর: খ: ৪ পৃ: ৫৮৭ হাদীস নং ৯৩৬৭)

৯. ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর আমল-
ﻭﻋﻨﻪ ﺃﻳﻀﺎ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺤﻠﻒ ﻓﻴﺒﻠﻎ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ : ﻣﺎ ﻣﻦ ﻣﺼﻠﻰ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﺇﻻ ﻓﻲ ﺣﺞ ﺃﻭ ﻋﻤﺮﺓ ﺇﻻ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻗﺪ ﻳﺌﺴﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻌﻮﻟﺔ ﻭﻫﻲ ﻓﻲ ﻣﻨﻘﻠﻴﻬﺎ . ﻗﻠﺖ : ﻣﺎ ﻣﻨﻘﻠﻴﻬﺎ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻋﺠﻮﺯ ﻗﺪ ﺗﻘﺎﺭﺏ ﺧﻄﻮﻫﺎ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﻣﻮﺛﻘﻮﻥ )
তিনি কসম কাটতেন এবং দৃঢ়ভাবে কসম কাটতেন যে, মহিলাদের জন্য তার অন্দর মহল থেকে উত্তম নামাযের কোন স্থান নেই। তবে দুই ধরণের মহিলা ব্যতীত।
ক. হজ এবং ওমরায় গমনকারিনী।
খ. ঐ মহিলা যে তার স্বামী থেকে নিরাশ হয়ে গেছে এবং নিজের মুনকালীন এ আছে। বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন, মুনকালীন-এ থাকার অর্থ কী? তিনি বললেন, এমন বৃদ্ধা হয়ে যাওয়া যে, অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে কাছে কাছে পা পড়ে। আল্লামা তবারানী আল-মু’জামূল কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর প্রত্যেকটি বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। (আল-মু’জামূল কাবীর: ৪/৫৮৬,হাদীস নং ৯৩৬১-৯৩৬২)

১০. হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ‘ফাতওয়া’
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺃﻥ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﺳﺄﻟﺘﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻘﺎﻝ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﻣﺨﺪﻋﻚ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻚ ﻭﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻚ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺣﺠﺮﺗﻚ ﻭﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﺣﺠﺮﺗﻚ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻚ ﻓﻲ ﻣﺴﺠﺪ ﻗﻮﻣﻚ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻲ ﺷﻴﺐ : ৭৬৯৭)
এক মহিলা ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু জুমার দিন মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তোমাদের শোয়ার ঘরে নামায আদায় করা ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ঘরে নামায পড়া আঙ্গিনার নামায থেকে । মহল্লার মসজিদে নামায আদায় করার চেয়ে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৭৬৯৭]
আরেক প্রকারের হাদীস হচ্ছে মহিলাদের মসজিদ গমন নিষিদ্ধ বিষয়ক। হাদীসগ্রন্থে অনেক হাদীস পাওয়া যায় যা দ্বারা মহিলাদের মসজিদে গমন নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়।

১১. বুখারী শরীফে আছে-
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﻟﻮ ﺭﺃﻯ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﺃﺣﺪﺙ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻟﻤﻨﻌﻬﻦ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻛﻤﺎ ﻣﻨﻌﺖ ﻧﺴﺎﺀ ﺑﻨﻲ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ . ﻓﻘﻠﺖ ﻟﻌﻤﺮﺓ ﺍﻭ ﻣﻨﻌﻬﻦ؟ ﻗﺎﻟﺖ ﻧﻌﻢ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ : ৮৬৯)
হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, মহিলারা যেরূপ (সাজসজ্জা) সহ কিছু বিষয় বর্তমানে উদ্ভাবন শুরু করেছে তা যদি রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যক্ষ করতেন; তাহলে অবশ্যই তাদের মসজিদে গমন করতে নিষেধ করতেন। যেমন বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছিলো।
[বুখারী : ৮৬৯]

১২. হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত-
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﻧﺴﺎﺀ ﺑﻨﻲ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ ﻳﺘﺨﺬﻥ ﺃﺭﺟﻼ ﻣﻦ ﺧﺸﺐ ﻳﺘﺸﺮﻓﻦ ﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻓﺤﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﺳﻠﻄﺖ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﺍﻟﺤﻴﻀﺔ . ‏( ﺍﺧﺮﺟﻪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻓﻲ ﻣﺼﻨﻔﻪ : ৫১২৮)
বনী ইসরাঈলের মহিলারা উঁচু উঁচু কাঠের পা বানিয়ে নিতো। যাতে মসজিদে গিয়ে এগুলো ব্যবহার করে উঁিক মেরে পুরুষদের দেখতে পায়। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা অসুন্তুষ্ট হয়ে তাদের মসজিদে যাওয়া হারাম করে দিয়েছেন এবং তাদের উপর ঋতুস্রাবের সমস্যা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। [মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক : ৫১২৮]

১৩.আবু আমর শাইবানী রহমতুল্লাহি আলািইহি বর্ণনা করেন-
ﺃﻧﻪ ﺭﺃﻯ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻳﺨﺮﺝ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﻳﻘﻮﻝ : ﺍﺧﺮﺟﻦ ﺇﻟﻰ ﺑﻴﻮﺗﻜﻦ ﺧﻴﺮ ﻟﻜﻦ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ : ৯৪৭৫)
তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু. কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছেন এবং বলছেন, তোমরা ঘরে চলে যাও ওটাই তোমাদের জন্য উত্তম।
[মুজামুল কাবীর : ৯৪৭৫]
২৬. ইবনে উমর রা.-এর আমল-
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﺑْﻦ ﻋﻤﺮ، ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﻳﻘﻮﻡ ﻳﺤﺼﺐ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻳَﻮْﻡ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔ ﻳﺨﺮﺟﻬﻦ ﻣﻦ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪ .
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. জুমার দিন দাড়িয়ে ছোট ছোট কঙ্কর নিক্ষেপ করে মহিলাদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। [উমদাতুল কারী : খ.৪ পৃ.৬৪৭]
এসব হাদীসসমূহ থেকে যা প্রমাণিত :
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উম্মতে মুসলিমার করণীয় নির্ধারণ করে দিয়ে বলেছেন, মুসলিম রমনীদের চারিত্রক পবিত্রতা, উৎকষর্তা এবং ইজ্জত -সম্মান হেফাজতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার যেসব শর্তাবলী আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে সেগুলোর দিকে তারা ততোটা ভ্রুক্ষেপ করছেন না। মার্জিত ও উন্নত চরিত্রের যে অনুপম নমুনা তাদের মধ্যে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে বিদ্ধমান ছিলো তা এখন পূর্বের মতো উপস্থিত নেই।
অতএব এ ধরনের চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারণে এখন আর মসজিদে গমনের অনুমতি দেয়া যায় না। তাই তিনি এ ভাষায় মসজিদ গমনকে নারীর জন্য নিষেধ করলেন যে স্বয়ং রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি থাকতেন আর মহিলাদের এ পরিবর্তন লক্ষ করতেন তাহলে তিনিই তাদেরকে মসজিদ গমনের বৈধতার বিধান স্থগিত করে অবৈধ হওয়ার বিধান চালু করতেন। এবং মসজিদে যেতে বারণ করতেন। হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তার এ সিদ্ধান্তের সমর্থনে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের যেসব কারণে মসজিদে যাওয়া হারাম করা হয়েছিলো তাও সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই জানতেন যে, একসময় ফেতনার দ্বারা উম্মুক্ত হবেই । কিন্তু রাসুলের যুগে তার প্রেক্ষাপট তৈরী না হওয়ায় মসজিদে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা সুস্পষ্টভাবে অগ্রিম ঘোষণা দেননি। কিন্তু বনী ইসরাঈলের মহিলাদের মসজিদের যাওয়া হারাম করার বিষয়টি রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মতকে জানিয়ে দিয়ে এ দিকে ইশারা করেছেন যে, ফেতনার দ্বার উম্মুখ হলে –এ উম্মতের মহিলাদের ব্যাপারেও অনুরূপ বিধান আরোপ হবে।
হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়ে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মহিলাদের মসজিদে গমন নিষিদ্ধ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু , ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সহ অনেক সাহাবী কঙ্কর নিক্ষেপ করেও এ বিধান বাস্তবায়ন করছেন।
হযরত উমররদ্বিয়াল্লাহু আনহু -এর এ সিদ্ধান্তকে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম মেনে নিয়ে ইজমায়ে সাহাবা সংঘটিত হলো।
_____________________________________________

মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া নাযায়িয হওয়ার ব্যপারে মুজতাহিদ ইমামদের দলীলসমূহ পেশ করা হলো :

১. হেদায়ার লেখক বলেন, যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। তিনি আরো বলেন, জামায়াত বলতে এখানে (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুময়া, ঈদাইন, কুসূফ, ইস্তেস্কা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভূক্ত। আমাদের ফকীহগণ বলেন কেননা উনাদের (মহিলাদের) জামায়াতের জন্য বের হওয়ায় ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে, আর ফিৎনা হারামের অন্তর্ভূক্ত, আর যা হারাম কাজে সহায়তা করে তাও হারাম, এ কারণেই ফকীহগণ মাকরূহ তাহরীমীর দ্বারা মূলতঃ মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়াই উদ্দেশ্য।
(উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৬, ফাতহুল মুলহিম, শরহে মসলিম ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৪২৮, তাফহীমুল মুসলিম ১৪ জিলদ, পৃষ্ঠা- ২১)

২. উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণ মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ বলে মত প্রকাশ করেন। কেননা হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে মরফূ হাদীছ হিসাবে বর্ণিত রয়েছে যে, মহিলাদের হুজরায় নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম এবং ঘরের চেয়ে গোপন প্রকোষ্ট সর্বোত্তম। উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর আলোকে শরীয়ত এ মতেই ব্যক্ত করে যে, মহিলাগণ জামায়াতের জন্য মসজিদে যাবে না। (ফায়জুল বারী শরহে বুখারী ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৩২২, বযলুল মাযহুদ শরহে আবু দাউদ)

৩. ইমাম হযরত তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহিলাদের ইসলামের প্রথম যুগে জামায়াতে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা। হযরত আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সে যুগ ফিৎনা ফাসাদ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা একেবারেই বিপরীত। বেদায়ের লেখক বলেন, যুবতী মহিলাদের (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুময়া, ঈদাইন ইত্যাদিতে যোগদান করার অনুমতি নেই, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, (হে মহিলাগণ) তোমরা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক। এ ছাড়াও মহিলাদের ঘর হতে বের হওয়ার মধ্যে ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে।
(মায়ারিফে মাদানিয়াহ, শরহে তিরমিযী ৮ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১০৮)

৪. ইমাম অথবা উনার প্রতিনিধির জন্য জরুরী যেন মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে আসতে নিষেধ করে। হযরত মাযহার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যদিও হাদীছ শরীফ দ্বারা মহিলাদের (প্রথম যুগে) মসজিদে যাওয়া প্রমাণিত কিন্তু আমাদের সময়ে তা মাকরূহ তাহরীমী, (কেননা) যুবতী ও বৃদ্ধা মহিলাদের যে কোন নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। (সুনানে নাসাই শরহে ইমামুস সুয়ুতী ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা- ২৮২, মিরকাত শরহে মিশকাত ৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা- ৫৭৬৭)

৫. বর্তমান সময়ে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী, সময়ের পরিবর্তনের কারণে। মহিলাদের সর্ব অবস্থায় পর্দায় (ঘরে) থাকা সর্বোত্তম। (আশয়্যাতুল লুময়াত শরহে মিশকাত ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৬২, মুযাহিরে হক্ব, লুমায়াত শরহে মিশকাত)

৬. জুমহুর উলামায়ে কিরামদের নিকট যুবতী মহিলাদের যেমনিভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ, তদ্রূপ জুময়া ও ঈদাইনে ও নিষিদ্ধ, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, তোমরা মহিলাগণ ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক। শুধু তাই নয়, তাদের বের হওয়ার মধ্যে ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণের ফতওয়া হলো মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নাযায়েজ (হোক যুবতী অথবা বৃদ্ধা) (দরসে তিরমিযী ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৩২১, মায়ারিফে সুনান ৪র্থ জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৪৫)

৭. যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণের ফতওয়া হলো বৃদ্ধাদেরও যুবতী মহিলাদের ন্যায় মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ যে কোন নামাযেই হোক না কেন।
(আওযাযুল মাসালিক শরহে মুয়াত্বায়ে মালিক ৪র্থ জিলদ, পৃষ্ঠা-১০৬, আল বুরহান, নাইলুল মায়ারিব, শরহুল কবীর, আত্তাওশীহ)

৮. প্রথমোক্ত হাদীছদ্বয় দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম। (কেননা) মহিলাদের (যুবতী) জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। আর উলামায়ে মুতাআখখেরীনদের ফতওয়া হলো বৃদ্ধাদের জন্যও রাত্রে হোক অথবা দিনে মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। (ইলাউস সুনান ৪র্থ জিলদ, পৃষ্ঠা-২৪১, মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ)

৯. মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যুবতী মহিলাগণ কোন নামাযেই তা যে কোন সময়েই হোক না কেন বের হতে পারবে না। (অর্থাৎ মসজিদে জামায়াতে উপস্থিত হতে পারবে না) আর বৃদ্ধা মহিলাগণ ফযর ও ইশার নামায ব্যতীত কোন নামাযেই উপস্থিত হতে পারবে না। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বৃদ্ধা মহিলাগণ প্রত্যেক নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হতে পারবে। (কিন্তু উলামায়ে মুতাআখখেরীনদের ফতওয়া হলো) বর্তমানে যুবতী হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের জন্যই প্রত্যেক নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী ফিৎনা প্রকাশ পাওয়ার কারণে। (তাতার খানিয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৬২৮, খুলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৫, বাদায়েউস সানায়ে ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৫৭)

১০. মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুময়া ও ঈদের নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী, যদিও প্রাপ্তা বয়স্কা ও বৃদ্ধা হোক সময়ের পরিবর্তনের কারণে। তাই উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণ ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। (গায়াতুল আওতার ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৬৩, দুররুল মুখতার ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৮৩, তাহতাবী, শামী, রদ্দুল মোহতার ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৫২৯, শরহে তানবীর)

১১. যুবতী মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী, বৃদ্ধাদের কোন নিষেধ নেই। কিন্তু বর্তমানে পরবর্তী আলেমদের ফতওয়া মুতাবিক যুবতী ও বৃদ্ধা উভয়ের জন্য যে কোন নামাযে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। (আইনী শরহে হেদায়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৭৩৯, হেদায়া মায়াদ দেরায়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১২৬, মাবসূত লিসসারাখসী ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৪১, ফতহুল কাদীর ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩১৭, আলমগীরী, নেহায়া, এনায়া, কিফাইয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩১৭, নূরুল হেদায়া ১মজিলদ, পৃষ্ঠা-১০১)

১২. প্রাপ্তা বয়স্কা মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী এবং মুতাআখখেরীনদের মত হলো বৃদ্ধাদেরও যে কোন সময় যে কোন নামাযে উপস্থিত হওয়া নিষেধ। (আইনুল হেদায়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৫৮, কাফী, তাবয়ীন, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৩২)

১৩. মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, মহিলাগণ তোমরা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরের বারান্দায় নামায পড়া উত্তম এবং ঘরের বারান্দায় নামায পড়ার চেয়ে ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া সর্বোত্তম। তাই মহিলাগণ জামায়াতে উপস্থিত হবে না, প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা, রাত্রে হোক অথবা দিনে, কারণ সাধারণতঃ তাদের বের হওয়া ফিৎনার থেকে নিরাপদ নয়। তাই পরবর্তি ফকীহদের ফতওয়া হলো প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা প্রত্যেক নামাযে উপস্থিত হওয়াই মাকরূহ তাহরীমী। (বাহরুর রায়েক শরহে কানজুদ দাক্বায়েক্ব ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৫৮, মাদানুল হাকায়েক ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৪৩, আহসানুল মাসায়েল পৃষ্ঠা-৩৮, মিনহাতুল খালিক, আল মাজমাউল আনহুর)

১৪. প্রাপ্তা বয়স্কা মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া, মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত। মতবিরোধ শুধুমাত্র বৃদ্ধাদের বেলায়, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বৃদ্ধা মহিলাগণ যোহর, আছর ও জুময়ায় উপস্থিত হতে পারবে না, সাহেবাইন বলেন সকল নামাযেই উপস্থিত হতে পারবে। কিন্তু মুতাআখখেরীন ফকীহগণ এর বিপরীত মত প্রকাশ করেন অর্থাৎ প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়াই মাকরূহ তাহরীমী। নহরুল ফায়েক কিতাবে উল্লেখ করা হয়, মুতাআখখেরীনদের উক্ত মত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকেই নেওয়া হয়। (শরহে বেকায়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১০৮, শরহে সেকায়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৮৭, নহরুল ফায়েক।)

১৫. প্রাপ্তা বয়স্কা মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে আসা মাকরূহ তাহরীমী। ফিৎনার আশঙ্কায়। বর্তমান জামানায় ফাসেকী প্রকাশ পাওয়ার কারণে উলামায়ে মুতাআখখেরীনগণ ফতওয়া দেন যে, প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের জন্য যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। (আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ পৃষ্ঠা-৭৮, মারাকিউল ফালাহ পৃষ্ঠা-২০৫, মুহীত্ব, কুদূরী পৃষ্ঠা-৩৬)

১৬. (আলোচিত) উপরোক্ত কারণে পরবর্তী ফকীহগণ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুময়া, ঈদসহ যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। এ ফতওয়া সকল স্থানের জন্যই প্রযোজ্য অর্থাৎ চাই হেরেম শরীফ-এ হোক অথবা মসজিদে নববীতে। হিন্দুস্থানে হোক অথবা আরব দেশে সকল স্থানেই মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-১৭৩, ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ পৃষ্ঠা-৩৫, তরীকুল ইসলাম ৭ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৩)

১৭. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় মহিলাদের মসজিদে আসা এবং পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। এর প্রতি দুররুল মুখতার কিতাবে ইঙ্গিত রয়েছে। (আযীযুল ফতওয়া ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২১৩, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৯, মাশারিকুল আনওয়ার পৃষ্ঠা-১৩৭, ইমদাদুল আহকাম ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪২৫)

১৮. (প্রাপ্তা বয়স্কা) মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। বৃদ্ধা মহিলাদের রাত্রে হলেও জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। (আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা-২৮৩, কিফায়াতুল মুফতী ৩য় জিলদ, পৃষ্ঠা-২৪৪, বেহেস্তী জিওর ৭ম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৯)

১৯. বর্তমান যামানার ফতওয়া হলো মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ, যদিও বৃদ্ধা হোক না কেন। রাত্রে হোক অথবা দিনে (প্রত্যেক অবস্থায়ই) ফিৎনার আশঙ্কায় মাকরূহ তাহরীমী।
(ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়াহ্ ২য় জিলদ, পৃষ্ঠা-২৩৯)

কাজেই যেখানে বিশ্বের অসংখ্য ইমাম, মুজতাহিদ মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নাজায়িয অর্থাৎ মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দেন, সেখানে এর বিরোধিতা করে এটাকে জায়িয বলা গুমরাহী ছাড়া কিছুই নয়। আর এদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ ফরমান, “যে কারো নিকট হেদায়েত বিকশিত হবার পর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর মুমিনদের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে।” শায়খ হযরত আহমদ ইবনে আবু সাঈদ মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছেন, “এ আয়াতে মুমিনদের বিরোধীতাকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অতএব রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ-এর মতো তাদের ইজমাও অকাট্য ও প্রামান্য দলীল বলে পরিগণিত হবে।
(নুরুল আনোয়ার) উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম মুজতাহিদদের মতের বিরোধিতা করার অর্থ হলো, মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করা, যা স্পষ্টই গুমরাহী। আর এটাও যেনে রাখা দরকার যে, ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে ফতওয়া দিয়েছেন, তা কুরআন-সুন্নাহর বিপরীত নয় বরং কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক।