মহানবীর সা.-এর অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভ উত্তাল সিলেট

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১৫ ২০২২, ০১:০৫

জাহাঙ্গীর রায়হান: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মুমিনীন (রা.)-কে নিয়ে ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতাদের কটূক্তির প্রতিবাদ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দার দাবীতে শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর আহ্বানে সিলেটে স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শহরে আসতে থাকে তৌহিদী জনতার ঢল। বাদ জোহর সমাবেশ শুরুর আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে সিলেটে ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট, সুরমা পয়েন্ট, জিন্দাবাজারসহ আশপাশের এলাকাসমূহ।

মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, মাওলানা জুনাইদ কিয়ামপুরী, মুফতি রশিদ আহমদ ও মাওলানা আহমদ সগীরের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হযরত শাহজালাল রহ.- সিলেটের মুহতামিম শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী।

সভাপতির বক্তব্যে শায়খ গাছবাড়ী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহ-পরকালীন শান্তির অগ্রদূত। কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তার বিরুদ্ধে কটুক্তি করতে পারেনা। নুকুল শর্মা নবীজির বিরুদ্ধে কথা বলে সারা বিশ্বের শুধু মুসলমান নয়, বিশ্বের সকল শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আযাদ দ্বীনি এদারার সভাপতি শায়খ জিয়া উদ্দিন বলেন, জাতীয় সংসদে একজন সাংসদ জিহাদের বিরুদ্ধে কথা বলে ইসলাম বিরোধী ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জিহাদের বিরুদ্ধে কথা বলে কেউ সত্যিকার মুসলমান থাকতে পারেনা। জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

দারুল উলুম কানাইঘাট মাদরাসার শায়খুল হাদীস বর্ষীয়ান আলেম,মাওলানা আলিমুদ্দিন দুর্লভপুরী বলেন,মহানবী সা. কে মুসলিম জাতি প্রানের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। নবীর অবমাননার প্রতিবাদ করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। সিলেটের প্রায় শতাদিক মাদরাসা মসজিদ স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজর নবিপ্রেমিক জনতা অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে বক্তারা বাংলাদেশ সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এতোদিন যাবত সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরণের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করার দাবীও জানান তারা। অন্যথায় সিলেট থেকে ভারতের অভিমুখে লংমার্চের হুশিয়ারী বাক্য উচ্চারণ করা হয়।

সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আঙ্গুরা মাদরাসার মুহতামিম শায়খ জিয়া উদ্দীন, কানাইঘাট দারুল উলূম মাদরাসার মুহতামিম শায়খ আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী, রেঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, মাওলানা আব্দুল খালিক ছাখতা কৌড়িয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহসিন আহমদ, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, গহরপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু,সিলেট জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুশতাক আহমদ খান,মাওলানা খলিলুর রহমান শামীমাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ, দারুল কুরআন মাদরাসার মুহতামিম, সাবেক এম,পি শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা হাবীবে রব্বানী, জামেয়া দরগার নাজিমে তালিমাত মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদী নয়াসড়ক মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুল্লাহ , ঠিকরপাড়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা লুকমান আহমদ, মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব,মাওলানা আতাউর রহমান, লামারগ্রাম মাদরাসার মুফতি আবুল হাছান কানাইঘাট মাদরাসার মাওলানা সামছ উদ্দিন মাওলানা কারী হারুনুর রশিদ মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, মেজরটিলা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল্লাহ মাওলানা তালেব উদ্দিন, মাওলানা আবুল হুসেন চতুলী, মাওলানা আব্দুল মালেক,মাওলানা জাহিদ উদ্দিন,মাওলানা গাজী রাহমাতুল্লাহ,মাওলানা ফয়জুল হক মাওলানা আব্দুল জলিল মাওলানা আব্দুল মালিক মাওলানা আতিকুর রহমান মাওলানা এমরান অলম প্রমুখ।

সমাবেশ থেকে ৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন শায়খুল হাদিস মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি। প্রস্তাবনাসমূহ হচ্ছে

১. আজকের সমাবেশ ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা ও বি জেপি নেতা নবীন কুমার জিন্দাল কতৃক মানবতার মুক্তি দুত রাসুলুল্লাহ (সঃ) সম্পর্কে জঘন্য কটুক্তির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। কটুক্তিকারীদের লোক দেখানো দল থেকে বহিষ্কার যথার্থ নয়। ওদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য ভারত সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে।

২. প্রিয় নবীর সা. অবমাননার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ভারতের মুসলমানদের উপর নেমে আসা জুলুম নিপীড়ন ও বুলডোজার দিয়ে মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনায় আজকের সমাবেশ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন বন্ধে ত্বরড়িত পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছে।

৩. রাসুলুল্লাহ সা এর অবমাননার ঘটনায় সারা মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কয়েকটি আরব দেশ এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়,দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ নীরব ভুমিকা পালন করছে।এতে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের দেখা দিয়েছে। আজকের সমাবেশ অনতিবিলম্বে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানানোর ও সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার জোর দাবী জানাচ্ছে।

৪. দেশের জনগণের প্রতি ভারতীয় পন্য বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে।

৫. দেশের মুসলমানদের প্রতি বিশ্বনবী সা. এর সীরাতচর্চা ব্যাপক করার আহ্বান করছে।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল শহরের বড় বড় সড়ক প্রদক্ষিণ করে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে শায়খ গাছবাড়ীর মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি হয়।