মসজিদে আসা শিশুদেরকে ধমক নয়, উৎসাহ দিন

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ২৩ ২০১৯, ১৯:৩০

মাওলানা জুনাইদ আহমদ জুনেদ

ছোটদের মসজিদে আসতে বারণ করা বা মসজিদে আসলে ধমক দেয়া অনুচিত। মুসলিম মনিষীগণের কথার অনুকরণে আমি অধমও বলি- যে মসজিদের পেছনের সারি থেকে শিশুদের শোরগোলের আওয়াজ আসেনা অদূর ভবিষতে সে মসজিদ মুসল্লি শূণ্য হওয়ার আশংকা রয়েছে! কেননা, আজকের শিশু মুসল্লিরাই আগামীর প্রাপ্তবয়স্ক মুসল্লি।

আজ যদি শিশুদেরে মসজিদে এসে দুষ্টুমি করার দায়ে ধমক দেয়া হয় বা মসজিদে না আসতে বলাহয়,তাহলে এ শিশুরা মসজিদে আসার উৎসাহ হারাবে! ওরা মনে করবে- মসজিদ আমাদের জন্য নয়; এটা শুধু বড়দের জন্য! এখানে শুধু বড়োরাই নামাজ পড়বেন! অতএব এখানে আমাদের না যাওয়াই উচিত! খামোখাই ধমক শুনতে হবে!

এর চেয়ে টিভি অন করে ফিল্ম দেখি বা খেলাধূলা করেই এ সময়টা পার করে নেই! ভেবে দেখুন- এমনটা ধারণা করা কিন্তু অসম্ভব বা অমূলক নয়। আপনি হয়তো দেখে থাকবেন , যে এলাকার মসজিদে বড়োরা ছোটদের শোরগোল সহ্য করতে পারেননা, একটু দুষ্টুমি করলেই কড়া শাসন করা শুরু করেন; এমনকি কেউকেউ ছোটদের গালাগাল করতেও দ্বিধাবোধ করেননা! সে এলাকার মসজিদগুলোতে শিশুদের উপস্থিতি কমই পরিলক্ষিত হয়। আর এটাই স্বাভাবিক।

অথচ সেখানকার বড়দের উচিত ছিল দুষ্টুমি করা শিশুদেরে পরম স্নেহে বুঝিয়ে বলা যে, মসজিদে এসে এসব করতে নেই। নতুবা তোমার সাওয়াব কমে যাবে বা গোনাহ হবে ইত্যাদি । কারন শিশুদের স্বভাবই দৌড়াদৌড়ি করা,দুষ্টুমি করা, শোরগোল করা। যে শিশুরা এমনটা করবে,বুঝতে হবে তারা রোগমুক্ত – সুস্থ। অন্যথায় তারা অসুস্থ! তাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমরা সেটা অনুধাবন করতে নারাজ! অথচ আমাদের বাসা-বাড়ীতে থাকা মোরগীর বাচ্চাগুলোর কোন একটিও যদি দৌড়াদৌড়ি না করে বসেবসে ঝিমোয়। তাহলে আমাদের বুঝে নিতে অসুবিধা হয়না যে, বাচ্চাটি রোগাক্রান্ত। তাকে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। আমরা এমনই! আফসোস! আরো কাজের কথা হল, বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ সহীহ আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক হাদীস শরীফ রয়েছে যেখানে প্রিয় নবীজী (সা.) তাঁর সকল উম্মতদেরে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেন – তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ কর যখন তারা সাত বছর বয়সে উপনীত হয় আর তাদেরকে প্রহার কর যখন তারা দশ বছরে উপনীত হয় (যদি তারা নামায না পড়ে)। উক্ত হাদীসে নবিজী (সা.) আমাদেরকে আদেশ করেছেন আমরা যেন আমাদের সন্তানদেরে সাত বছর বয়সেই নামাযের আদেশ করি। আচ্ছা বলুনতো, নামাযের আদেশ দিতে হলে কি আগে তাকে নামায শিক্ষা দিতে হবে না? আর হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট বয়সের পূর্ব থেকেই মসজিদে নিয়ে গিয়ে নিজের পাশে দাঁড় করিয়ে নামায শিক্ষা দেয়া কি তার জন্য সহজ নয়? এটাই বাচ্চাদের জন্য সহজ। তারা অন্যদের রুকু,সাজদাহ ও উঠা – বসা দেখে দেখেই নামাযের বাহ্যিক পদ্ধতিটুকু আয়ত্ত করে নিতে পারবে। এখন মসজিদে গিয়ে একটুখানি দুষ্টুমি করায় যদি তাকে ধমক দেই বা ভয় দেখাই তাহলে কি তাকে আর মসজিদমুখী করা যাবে? আধৌ সম্ভব নয়! তাছাড়া প্রিয় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী অধ্যয়ন করলে পাওয়া যায় তিনি সা. যখন নামাজ আদায় করতে গিয়ে সিজদায় যেতেন তখন উনার আদুরে নাতিদ্বয় হযরত হাসান ও হুসাইন (রাযি.) পিঠে উঠে বসে থাকতেন! কিন্তু প্রিয় নবিজী (সা.) তাদেরকে ধমক দিবেনতো দূরের কথা নিষেধও করতেননা! বরং নবিজী (সা.) ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদাহ্ থেকে উঠতেননা যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পিঠ থেকে না নামছেন। সুবহানাল্লাহ! আসলে আধুনিকতার এ যুগে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। মসজিদে আসা শিশুদেরকে ধমকানোর

পরিবর্তে ধন্যবাদ এবং উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় (আল্লাহ না করুন) একটি বেনামাজি আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদেরকেই দায়ী থাকতে হবে। তাই আসুন আমরা আমাদের মসজিদে আসা শিশুদেরে ধমকানো থেকে বিরত থাকি এবং তাদেরকে মসজিদে আসতে বারণ না করি। বরং শিশুদেরকে স্নেহভরে গ্রহণ করি, মসজিদে আসায় ধন্যবাদ দেই, তাদের জন্য দোয়া করি এবং সবসময় আসতে উৎসাহিত করি। সেইসাথে নিজের বাচ্চাদেরকেও সাথে করে মসজিদে নিয়ে আসি। তবেই আমরা একটি মসজিদমুখী আগামী প্রজন্ম পাওয়ার আশা করতে পারবো । মুসল্লিমুখর মসজিদ পাবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন।

লেখক : আলেম ও শিক্ষক