মওলানা রুমির আধ্যাত্মিক পংক্তিমালা- ০৪

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ২৮ ২০১৯, ০৮:২০

ভূমিকা: মওলানা রুমি একাধারে আলেম, সুফি ও কবি। মওলানা রুমির মত করে তাওহিদকে রুহানি পন্থায় সাধনের এই অমোঘ উচ্চারণ আজ বড় প্রয়োজন। একত্বের সাধনায় আধ্যাত্মিকতা — রুমির মত করে মা’রেফা ও ইরফানের সহজ ও সরল কাব্যবাণী আজ বিরলতম।

অনেকের এপথ জানা থাকলেও ইবনে আরাবী, মওলানা রুমিদের মত প্রফাউন্ড ও সাবলাইম স্পিরিচুয়াল এক্সপ্রেশন আমাদের এই কথিত আধুনিক ও উত্তরাধুনিক সমাজ ও কমিউনিটিকে আর মধ্যযুগের মত আলোড়িত করে না। এটা প্রবলেম্যাটিক।

তাসাউফকে যারা সহজে গ্রহণ করতে পারে না, যেমন সালাফিরা, তাদের ধারণা যে মওলানা রুমিকে মুসলিম বলা যায় না। অথচ রুমি বস্তু, উদ্ভিদ, জীব ও মানবের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা ৭০০ বছর আগে তুলে ধরেছিলেন। অবশ্য ইদানীং পাশ্চাত্যে আরেকটি গোষ্ঠী রুমিকে ইসলাম থেকে বিযুক্ত করে তাঁকে কেবল আধ্যাত্মিক বা সুফি কবি হিশেবে অনুসরণ করতে চায়। কিন্তু রুমি শাস্ত্রীয় ইসলামকে মর্যাদা দিয়েই তাঁর উদার বাণী প্রচার করেছিলেন। যে কারণে তাঁর মসনভিকে ফারসি ভাষায় কুরআনের ভাষ্য বলে গণ্য করা হয়। মুসলিম ধ্রুপদী ভাষার মধ্যযুগীয় পান্ডুলিপির মধ্যে আরবি ভাষায় কুরআনের পরে যে পান্ডুলিপিটির সবচাইতে বেশি কপি পাওয়া গেছে সেটি হল ফারসি ভাষায় রুমির মসনভি।

আবার ইদানীং কিছু নব্য আঁতেল বলতে চাইছে যে, রুমি নাকি কোন বড় কবি ছিলেন না। ফারসি ভাষায় যার কাব্য শুধু ইরানে নয় বৃহত্তর পারসিক সভ্যতার অন্তর্গত সব ভূগোলে আধ্যাত্মিক সাহিত্যের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে তিনি কোন বড় কবি নন — এটা কি কোন যৌক্তিক মূল্যায়ন?

কিতাবী ডিসকোর্স যে ফিরকাবাজীর বাক্স বানিয়েছে তার বাইরে রুহানি তাজকিয়ার তরিকায় আমাদের উপনীত হতে হবে; আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি ও বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্বের ঐক্যসাধনা নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ও নবায়ন ঘটিয়ে বিভেদ, বিদ্বেষ ও বিবাদ দূর করতে পারে।

এই লক্ষে মওলানা রুমির কিছু অমর পংক্তিমালা এখানে পেশ করলাম। গত সংখ্যার পর…

(২২)
নারী যেন স্রষ্টার সৌন্দর্যের এক বিকিরিত রশ্মি
নারী যেন কেবল পার্থিব নয়
নারী কেবল সৃজিত নয় বরং সৃজনশীল
কারণ নারী পুরুষের অন্তরে
ঐশী ভালবাসার বীজ বপন করে দেয়।
(২৩)
আমি কেবল বাহ্যিক ধর্মের অনুসারী নই
আমার ধর্ম হল ভালবাসা।
আর প্রতিটি মানুষের হৃদয় হল আমার উপাসনালয়।

(২৪)
সব ধর্মেই ভালবাসা আছে
কিন্তু ভালবাসার কোন ধর্ম নেই!

(২৫)
যে বাতাস গাছ উপড়ে ফেলে
সেই বাতাসেই ঘাসেরা দোলে
কাজেই বড় হওয়ার দম্ভ করো না।

(২৬)
শুধু তৃষ্ণার্ত পানি খোঁজে না
পানিও তৃষ্ণার্তকে খোঁজে।

(২৭)
তুমি এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে গুপ্তধনের খোঁজ করছো
কিন্তু প্রকৃত গুপ্তধনতো তুমি নিজেই।

(২৮)
স্রষ্টার ভাষা হল নৈঃশব্দ্য
আর বাকী ভাষাগুলি হল অসম্পূর্ণ অনুবাদ।

(২৯)
তুমি মহাসাগরে এক বিন্দু পানি নও
তুমি এক বিন্দু পানিতে গোটা এক মহাসাগর।

(৩০)
শব্দ দিয়ে প্রতিবাদ করো
কণ্ঠ উঁচু করে নয়।
মনে রাখবে ফুল ফোঁটে যত্নে
বজ্রপাতে নয়।

(৩১)
গতকাল আমি চতুর ছিলাম
তাই পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু আজ আমি প্রাজ্ঞ
তাই নিজেকেই বদলে ফেলতে চাই।

(৩২)
অন্যের জীবনের গল্প শুনে সন্তুষ্ট হয়ো না
নিজের পথের রহস্য উন্মোচন করো
একান্ত আপন পথ রচনা কর
নিজের জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাও।

(৩৩)
সব কিছু জেনে ফেলাই জ্ঞান নয়
জ্ঞানের কৌশল হলো
কী কী এড়িয়ে যেতে হবে
অথবা বর্জন করতে হবে তা জানা।

সংকলন, অনুবাদ ও সম্পাদনা: মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত