মওলানা রুমির আধ্যাত্মিক পংক্তিমালা- ০৩

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ২৩ ২০১৯, ১৭:৪৬

ভূমিকা: মওলানা রুমি একাধারে আলেম, সুফি ও কবি। মওলানা রুমির মত করে তাওহিদকে রুহানি পন্থায় সাধনের এই অমোঘ উচ্চারণ আজ বড় প্রয়োজন। একত্বের সাধনায় আধ্যাত্মিকতা — রুমির মত করে মা’রেফা ও ইরফানের সহজ ও সরল কাব্যবাণী আজ বিরলতম।

অনেকের এপথ জানা থাকলেও ইবনে আরাবী, মওলানা রুমিদের মত প্রফাউন্ড ও সাবলাইম স্পিরিচুয়াল এক্সপ্রেশন আমাদের এই কথিত আধুনিক ও উত্তরাধুনিক সমাজ ও কমিউনিটিকে আর মধ্যযুগের মত আলোড়িত করে না। এটা প্রবলেম্যাটিক।

তাসাউফকে যারা সহজে গ্রহণ করতে পারে না, যেমন সালাফিরা, তাদের ধারণা যে মওলানা রুমিকে মুসলিম বলা যায় না। অথচ রুমি বস্তু, উদ্ভিদ, জীব ও মানবের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা ৭০০ বছর আগে তুলে ধরেছিলেন। অবশ্য ইদানীং পাশ্চাত্যে আরেকটি গোষ্ঠী রুমিকে ইসলাম থেকে বিযুক্ত করে তাঁকে কেবল আধ্যাত্মিক বা সুফি কবি হিশেবে অনুসরণ করতে চায়। কিন্তু রুমি শাস্ত্রীয় ইসলামকে মর্যাদা দিয়েই তাঁর উদার বাণী প্রচার করেছিলেন। যে কারণে তাঁর মসনভিকে ফারসি ভাষায় কুরআনের ভাষ্য বলে গণ্য করা হয়। মুসলিম ধ্রুপদী ভাষার মধ্যযুগীয় পান্ডুলিপির মধ্যে আরবি ভাষায় কুরআনের পরে যে পান্ডুলিপিটির সবচাইতে বেশি কপি পাওয়া গেছে সেটি হল ফারসি ভাষায় রুমির মসনভি।

আবার ইদানীং কিছু নব্য আঁতেল বলতে চাইছে যে, রুমি নাকি কোন বড় কবি ছিলেন না। ফারসি ভাষায় যার কাব্য শুধু ইরানে নয় বৃহত্তর পারসিক সভ্যতার অন্তর্গত সব ভূগোলে আধ্যাত্মিক সাহিত্যের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে তিনি কোন বড় কবি নন — এটা কি কোন যৌক্তিক মূল্যায়ন?

কিতাবী ডিসকোর্স যে ফিরকাবাজীর বাক্স বানিয়েছে তার বাইরে রুহানি তাজকিয়ার তরিকায় আমাদের উপনীত হতে হবে; আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি ও বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্বের ঐক্যসাধনা নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ও নবায়ন ঘটিয়ে বিভেদ, বিদ্বেষ ও বিবাদ দূর করতে পারে।

এই লক্ষে মওলানা রুমির কিছু অমর পংক্তিমালা এখানে পেশ করলাম। গত সংখ্যার পর…

(১৫)
হৃদয়কে বারবার ভাংতে হয়
তাহলে হয়তো একদিন হৃদয় খুলে যায়।

(১৬)
কোনটি সঠিক
আর কোনটি বেঠিক
এসব থেকে দূরে কোথাও
একটি সবুজ প্রান্তর আছে।
তোমার সঙ্গে আমার
সেখানেই দেখা হবে।

(১৭)
স্রষ্টার কাছে পৌঁছানোর অজস্র পথ আছে
তার মাঝে আমি প্রেমকে বেছে নিলাম।

(১৮)
সিংহকে তখনই সুদর্শন দেখায়
যখন সে খাবারের খোঁজে শিকারে বের হয়।

(১৯)
গলতে থাকা শুভ্র তুষারের মত
নিজেকে নিজেই ধুয়ে সাফ করতে হয়।

(২০)
প্রতিটি ঘর্ষণেই যদি বিরক্ত হও
তাহলে মনের আয়নাকে চকচকে করবে কীভাবে?

(২১)
ভালবাসার কসাইখানায়
ওরা শুধু শ্রেষ্ঠদেরই জবাই করে
দুর্বল বা বিকলাঙ্গদের কাউকে নয়।

মৃত্যুর এই মিছিল থেকে পালিও না
ভালবাসার জন্য যে জবাই না হয়
সে তো আসলে শুধুই মরা মাংশ!

সংকলন, অনুবাদ ও সম্পাদনা: মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত