ভারতবর্ষে ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন্স কেন?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ১০ ২০১৯, ১২:৪৫

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত:: হিন্দু ধর্মের রয়েছে এক আশ্চর্যজনক ও ব্যাপক ধারণ ও আত্তীকরণ ক্ষমতা। আস্তিক হয়ে যেমন হিন্দু হওয়া যায়, তেমনি নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদী হয়েও হওয়া যায়; মূর্তি পূজক হয়ে হিন্দু তো অবশ্যই হওয়া যায়। আবার মূর্তি পূজক না হয়েও হিন্দু হওয়া যায়। ভাববাদী হয়ে তো বটেই, জড়বাদী বা বস্তুবাদী হলেও আপনি হিন্দু হতে পারবেন। বর্ণপ্রথা মেনে যেমন হিন্দু হওয়া যায়, বর্ণপ্রথা না মেনেও তেমনি হিন্দু হওয়া যায়।

ভারতবর্ষের বাইরে থেকে যখনি কোন ধর্ম বা দর্শন নতুন কিছু নিয়ে আসে তখনি হিন্দু ধর্ম তার যে অংশগুলি গ্রহণ করা সম্ভব তা নিজের মধ্যে নিয়ে নেয় এবং বলে যে নতুন কিছু আর কি দরকার? হিন্দু ধর্মেই তো সব রয়েছে। এই কাজটি ইসলামের আগমনের পরে যে নানা উপায়ে হিন্দু ধর্ম করতে চেয়েছিল তার একটি বঙ্গীয় রূপ হল চৈতন্যদেবের বৈষ্ণব আন্দোলন।

হিন্দু ধর্ম বরাবরি একটি জগাখিচুড়ি। একটি বহুত্ববাচক সমন্বয় বা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাহার। সব কিছুকে ধারণ করে বলেই এটাকে “ধর্ম” বলা হয়। এখানে ধর্ম অর্থ খ্রিস্টীয় অর্থে রিলিজিয়ন নয়। অর্থাৎ হিন্দু হতে হলে কোন সুনির্দিষ্ট বিশ্বাস বা ডকট্রিন থাকার প্রয়োজন নেই।

হিন্দু অভিধা আসলে একটি ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক অভিধা ও পরিচয়। ভারতবর্ষের সিন্ধু নদ থেকে গঙ্গা নদী বিধৌত অঞ্চলে যারা দীর্ঘকাল ধরে বসবাসকারী তারাই হিন্দু। পরবর্তীকালে এরা ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতবর্ষের দাক্ষিণাত্য ও পূর্বাঞ্চলে। কাজেই এইসব অঞ্চলের পরম্পরা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে যারা লালন ও পালন করে তারাই হিন্দু।

তবে আর যাই থাকুক না কেন হিন্দু ধর্মে দ্বীন ইসলামের মত তৌহিদী শুদ্ধতা অবশ্যই নেই। আবার ইসলামে দ্বীন বলতে যে হোলিস্টিক/কমপ্লিট কোড অফ লাইফ বা সর্বাত্মক ও পূর্ণাঙ্গ ইহকালীন ও পরকালীন জীবনব্যবস্থা বোঝায় তাও হিন্দু ধর্মে নেই।

কাজেই হিন্দু ধর্মে যেমন ধর্মরাষ্ট্র হওয়া সম্ভব, তেমনি আবার হিন্দু ধর্ম খুব সহজেই সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে। অর্থাৎ ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করে দেখাটা হিন্দু ধর্মের জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু জাহেরি এবং বাতেনি জিহাদে বিশ্বাসী দ্বীন ইসলাম তা করতে পারে না। আসলে করতে চায়ও না।

এইসব মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দ্বীন ইসলামকে হিন্দু ধর্ম এযাবৎ বহু চেষ্টা করেও গ্রাস করতে পারেনি। পারবেও না। আর সে কারণেই ভারতবর্ষে চলছে ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন্স।