বড় হয়ে কেউ জন্মায় না। মোহাম্মদ মুনতাসির অালী কেন্দ্রিয় যুগ্মমহাসচিব, খেলাফত মজলিস।

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ১৩ ২০১৮, ১৮:৩৯

একুশে জার্নাল: বড় হয়ে কেউ জন্মায় না। কুসুমিত স্বপ্নের ধারায় পৃথিবীর আলো বাতাসে ধীরে ধীরে মানুষ
বিকাশ লাভ করে। সুবিধাভোগী, নৈরাশ্যবাদী মানুষের
স্বপ্ন মিছে হয়। আদর্শের চেতনায় লালিত
কোনো স্বপ্ন মিছে হতে পারে না। আজ হোক
কাল হোক সফলতা তাকে স্পর্শ করবে। সঠিক
কর্মে ধারাবাহিকতা থাকলে, কপাল কেউ কেড়ে
নিতে পারে না।
আমাদের এই উপমহাদেশে এক সময় ক্রীতদাস বা
হাবসিদের শাসন ছিল, যাদের অনেকেই প্রথম
জীবনে ক্রীতদাস হিসেবে মানবেতর
জীবনযাপন করেছেন।পরবর্তীকালে আপন
যোগ্যতাবলে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম
হন। এদের মধ্যে সুলতান ইলতুৎমিশ ও কুতুবউদ্দিন
আইবেক শাসক হিসেবে ইতিহাসে যথেষ্ট মর্যাদার
অধিকারী।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন প্রথম
জীবনে ছিলেন কাঠুরিয়া। অসামান্য মেধা ও
কর্তব্যপরায়ণতা তাকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট
পদে উন্নীত করে। মার্কিনিদের মতে, লিংকন শুধু
প্রেসিডেন্টই নন; এক আদর্শেরও নাম।
এ দেশেরই আরেক প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট
ছিলেন পঙ্গু। দেশের অর্থনীতি যখন বিধ্বস্ত,
সে অবস্থায় তিনি হাল ধরেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে
মিত্রশক্তির পক্ষে আমেরিকার যোগদান যুদ্ধের
মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও
প্রবল ইচ্ছাশক্তি রুজভেল্টকে একজন সফল
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তুলে ধরে।
নয়া চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুং ছিলেন গরিব মুদি
দোকানির ছেলে। সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যে
বড় হয়েছেন এই বিপ্লবী নেতা। প্রাতিষ্ঠানিক
শিক্ষার দিক থেকেও তিনি ছিলেন পিছিয়ে। স্কুল
পর্যন্ত পড়াশোনা করেই তাকে ক্ষান্ত দিতে
হয়েছে। কিন্তু রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব ও দর্শন
শাস্ত্রের ক্ষেত্রে মাওয়ের কৃতিত্ব তার কথা
সমালোচকরাও স্বীকার করেন। অর্জিত হয়েছে
নিজের কৃতিত্ব ও অধ্যবসায়ের গুণে।
কৃষ্ণ-আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনের এক মহান নাম
শ্যাম নাজোমা। স্বাধীন নামিবিয়ার রাষ্ট্রপিতা ও
প্রেসিডেন্ট নাজোমা এক সময় ছিলেন সামান্য
নাপিত। সেলুনে চুল-দাড়ি কাটতে কেউ এলে তিনি
তাদের সঙ্গে কীভাবে দেশের স্বাধীনতা
অর্জন করা যায়, এ নিয়ে মতবিনিময় করতেন।
অবশেষে একদিন সেলুন ফেলে দেশের
কাজে নেমে পড়েন। গড়ে তোলেন রাজনৈতিক
দল। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামও শুরু হয় তার নেতৃত্বে।
অবশেষে আসে স্বাধীনতা।
দুনিয়ার অন্যতম সেরা জাতি হিসেবে ইংরেজদের
পরিচিতি স্বীকৃত। এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য
অস্ত যেত না। এই ব্রিটেনেরই সাবেক
প্রধানমন্ত্রী জন মেজর। বাবা ছিলেন সার্কাস
দলের সামান্য কর্মী। অর্থাভাবে অষ্টম শ্রেণীর
বেশি পড়াশোনা করতে পারেনি। কর্মজীবনের
শুরুতে তিনি বাসের কন্ডাক্টর হওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু অংকে কাঁচা যুক্তিতে চাকরি হয়নি।
পরবর্তীকালে এই জন মেজরই ব্রিটেনের
অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হন। যে যুবকটি
অংকে পারদর্শী নয় বলে বাসের কন্ডাক্টর হতে
পারেনি, পরবর্তী সময়ে তিনিই ব্রিটেনের মতো
দেশে অর্থনীতির হাল ধরেন। এখানেই থেমে
যায়নি জন মেজরের অগ্রযাত্রা। পরে
প্রধানমন্ত্রীর পদেও অধিষ্ঠিত হন তিনি।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে যে
দখলদারিত্বের মানসিকতা চলছে, তা থেকে
বেরিয়ে আসতে না পারলে, দুধের স্বাধ মিটাবার
পানিও এক সময় পাওয়া যাবে না।