ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদরাসা ছাত্রদের ওপর কাদিয়ানিদের হামলা: বিক্ষুব্ধ জনতার তীব্র নিন্দা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ১৪ ২০২০, ২৩:৫৪

বিবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার ছাত্রদের ওপর কাদিয়ানিরা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তাহাফফুজে খতমে নবুওত মাদরাসার পাশে কাদিয়ানীদের উপাসনালয়ের নিকটে এ ঘটনা ঘটে। এ হামলায় আহত চার ছাত্রকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কান্দিপাড়া এলাকায় মাদরাসায়ে তাহাফফুজে খতমে নবুওতের পাশেই কাদিয়ানিদের একটি উপাসনালয় আছে। সেখানে আজ তারা একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রতি বছর এমন একটি সম্মেলন করে থাকে তারা। এখানে বেশ কিছু মুসলিমকে প্রতি বছরই নতুনভাবে কাদিয়ানি ধর্ম গ্রহণ করানো হয়। এবারের সম্মেলনে প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছিল না। অনুমতি ছাড়াই তারা এ সম্মেলনের আয়োজন করে। এবং সম্মেলন থেকে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে।

এ খবর জানতে পেরে সন্ধ্যার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বড় মাদরাসা হিসেবে পরিচিত জামিয়া ইউনুসিয়ার কয়েকজন ছাত্র সন্ধ্যার সময় সম্মেলন কর্তৃপক্ষকে বলেন, ইসলামের নামে এমন অনুষ্ঠান করা যাবে না, তাছাড়া আপনারা প্রশাসনের অনুমতিও নেননি। ছাত্ররা তাদেরকে সম্মেলন বন্ধ করার জন্য এ কথা বললে তারা ছাত্রদের দিকে তেড়ে আসে।

কাদিয়ানীদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে  বিবাড়িয়ার রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে।  বাদ ইশা  হাজার হাজার ইসলামপ্রিয় জনতা ও মাদরাসার তালিবে ইলম প্রতিরোধ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

হামলায় আহত জামিয়া ইউনুসিয়ার এক ছাত্র বলেন, কাদিয়ানিরা যখন আমাদের দিকে তেড়ে আসে তখন অল্প কয়েকজন ছিলাম আমরা। বিতণ্ডার কথা জানতে পেরে খতমে নবুওত মাদরাসার ছাত্ররাও এসে হাজির হন। তখন ফুটে ওঠে কাদিয়ানিদের আসল রূপ। তারা পূর্ব থেকেই অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিল। খতমে নবুওতের ছাত্ররা ছুটে আসতেই তারা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে।

তিনি বলেন, অস্ত্রের মুখে আমরা টিকতে না পেরে খতমে নবুওত মাদরাসার দিকে গেলে তারা মাদরাসা পর্যন্ত আসে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে। এ সময় জামিয়া ইউনুছিয়ার বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে চারজনকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাদিয়ানিরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মাদরাসার দিকে এগিয়ে যাবার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাজির হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুরো এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এবং আগামীকাল এনিয়ে স্থানীয় আলেম ওলামা এবং সরকারি লোকজন পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে বিবাড়িয়ায় তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত মাদ্রাসায় কাদিয়ানী সম্প্রদায় কর্তৃক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আল্লামা নুরুল ইসলাম।

সামাজিক গণমাধ্যমে দেওয়া এক নিন্দা বিবৃতিতে তিনি বলেন, আজ ১৪ই জানুয়ারি মঙ্গলবার বাদ এশা বি’বাড়িয়ায় অবস্থিত তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত মাদ্রাসায় ঢুকে মাদ্রাসা দখলের উদ্দেশ্যে ইসলাম, মুসলমান ও মুসলমানের নবীর স. দুশমন কাদিয়ানী গোষ্ঠী ছাত্র ও ওলামায়ে কেরামের উপর যে ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে, তা কোন ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আল্লামা নুরুল ইসলাম বলেন, অনতিবিলম্বে তাহাফফুজে খতমে নবুওত মাদ্রাসার উপরে এই অমানবিক অত্যাচার এর দায়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দোষী সদস্যগণকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় না আনলে দেশব্যাপী আন্দোলনে তৌহিদী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে। যা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

তিনি আরো বলেন, বিগত প্রায় ৩৫ বছর যাবত বাংলাদেশের মুসলমান কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে “আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুয়তের” ব্যানারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছে, এই আন্দোলনকে কোন প্রকার মূল্যায়ন না করে কাদিয়ানীদের কে লালন পালন করে আসছে। সরকারি আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ের কারনে আজ তারা মাদ্রাসা মসজিদের উপর হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখাচ্ছে।

যদি বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে বিলম্ব করে, তাহলে তৌহিদী জনতার আন্দোলনে দেশ অচল হয়ে যেতে পারে।

তিনি আহত ছাত্রদের জন্য সুস্বাস্থ্য কামনা করেন এবং মিডিয়া ও প্রশাসনকে সত্য ঘটনা যাচাই পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে সহায়তা করতে আহ্বান জানান।