বিশ্ব ভালোবাসা দিবস: কী বলে ইসলাম

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ১৩ ২০১৯, ১৮:২৫

এহসান বিন মুজাহির: ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সারাবিশ্বে এদিবসটি উদযাপিত হবে। ভালোবাসা মহান আল্লাহর দান। তাই ভালোবাসার জন্য কোনো দিবস-রজনী নির্দিষ্ট নেই। ভালোবাসার স্রোত সব সময় বহমান। ভালোবাসা দিবসের নামে ইসলাম বহির্ভূত নির্লজ্জ দিবস উদযাপন ইসলামে নিষেধ। বিবাহের আগে তরুণ-তরুণীর পরস্পর দেখা-সাক্ষাত, কথা-বার্তা, প্রেম-ভালোবাসা ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণভাবে হারাম। কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে ভালোবাসা কেবল বিয়ের পরেই। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এর মধ্যে অনেক সওয়াবও কল্যাণ রয়েছে।

ভ্যালেন্টাইনস ডে পরিচিতি: ‘ভ্যালেন্টাইন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ভালবাসা আর ‘ডে’ অর্থ
হচ্ছে দিবস। সমষ্টিগত শব্দের অর্থ হচ্ছে; ভালবাসা দিবস। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে,
দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রয়ারি। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন কডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট কডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নামকরণ করা হয়।‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশে হলদে কিছু মিডিয়া এর আমাদানী করত; অপরিণামদর্শী হলদে মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। এখন বিশ্যব্যাপি এদিবসটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে।
ভালোবাসা দিবস এলেই দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাথীরা, বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা প্রেমের জোয়ারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধু তাই নয় অঙ্কন শিল্পীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার পাশে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক-প্রেমিকার খোশ গল্প, অসামাজিকতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতা, সবশেষে কখনো কখনো অবৈধ যৌন মিলন ও ধর্ষণ। এটাই হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের বাস্তব চিত্র! তাহলে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের মর্যাদা রইলো কোথায়? আশ্লীলতা-নোংরামীতে ভরপুর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস! ভালোবাসা দিবস উদযাপনের নামে এমন বেহায়াপনা কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না। শুধু একদিন কেনো, ভালোবাসার স্রোত সবসময় চলমান।

ভালোবাসা শব্দটি পবিত্র। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি, যা মানুষের মনের গহিনে প্রবাহমান থাকে। ভালোবাসা সব মাখলুকাতের মাঝে রয়েছে। পরস্পরের মধ্যে প্রীতি স্থাপনের জন্য আল্লাহ প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছেন। ভালোবাসার কারণেই শ্রদ্ধাময়ী মা গর্ভে সন্তান ধারণ করেন। পিতা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

ভালোবাসা আল্লাহর দান। তাই ভালোবাসার জন্য কোনো ক্ষণ, দিবস-রজনী নির্দিষ্ট নেই বা প্রয়োজনও হয় না। ভালোবাসার স্রোত সব সময় বহমান। ভালোবাসার মধ্যে যখন দুনিয়াবি কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না, তখন সে ভালোবাসার মাধ্যমে মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত-‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার রেজামন্দির আশায় পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টির কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমার ভালোবাসার জন্যই নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদেরকে ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। (মুসলিম)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত-‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার বান্দাগণের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা নবীও নয়, আর শহীদও নয়। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের ওপর ঈর্ষা করবেন। জিজ্ঞেস করা হল- হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা?
উত্তরে তিনি বললেন-তারা হচ্ছে সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে। তাদের মধ্যে নেই কোনো রক্তের সম্পর্ক, নেই কোনো বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমণ্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নূরের মিম্বরের ওপর অবস্থান করবে। কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে, তখন তারা ভীত হবে না। আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে, তখন তাদের কোনো দুঃখ থাকবে না।

ভালোবাসা হবে কেবল আল্লাহর জন্য, রাসুলের সা. জন্য। ভালবাসার মধ্যে যখন দুনিয়াবী কোন চাওয়া-পাওয়া, নফসের কোন কামনা-বাসনা আর জৈবিক কোন লালসার লেশমাত্র থাকে না বরং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ অর্জনের জন্যই নিবেদিত হয়- তখন সে ভালবাসার মাধ্যমে মানব জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ আল্লাহর সন্তুষ লাভ করা যায়।
মনে রাখতে হবে ভালোবাসা নির্ধারিত তারিখে সীমাবদ্ধ নয়। বিয়েশাদীর পূর্বে তরুণ তরুণীদের অবৈধ ভালোবাসা ইসলাম অনুমোদন করে না। তাই ইসলামে অবৈধ এমন ভালোবাসা নামক অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল থেকে নিজে বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে সমাজকে।চ