বিবাহের গুরুত্ব ও ফযিলত 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ২৬ ২০১৯, ২১:১৩

মাওলানা আমিনুর রশিদ

বিবাহ মহান আল্লাহ প্রদত্ত্ব মহান ইবাদত। যার সুচনা হয়েছে আদি মানব হযরত আদম আ. থেকে এবং যা অব্যাহত থাকবে জান্নাতেও। ( আদদুররুল মুখতার। ৩/৩) বিবাহ রহমত বরকতে ভরা একটি ইবাদ যেখানে নেই কোন জটিলতা, দুঃখ ও ব্যথা,কষ্টে ভরা বাড়াবড়ি এবং থাকবেনা কোন গুনাহের সরাঞ্জাম ও আয়োজন। যেখানে আছে শুধৃ পরস্পর সহনুবতি, কোমলতা, শান্তি আর শান্তি এবং প্রেম আর ভালবাসা ও আত্বীয়তা। কিন্তু দুর্ভাগ্য ও অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমরা সে মহান ইবাদতকে বিভিন্ন রুসুমাত, রেওয়াজ ও বিজাতীয় সাংস্কৃতির, বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা এবং তথাকথিত আধুনিকতার নোংরা লেবাস পরিয়ে সে নিয়ামতকে কিয়ামতে পরিনত করেছি। হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলি থানভী রহ. এর ভাষায় “আজকাল বাগদান অনুষ্ঠান ছোট কিয়ামত, আর বিবাহ অনুষ্ঠান বড় কিয়ামতে পরিনত হয়েছে।”

বিবাহ শাদীতে বিজাতীয় কালচার অবলম্বন করে নিজে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা ও দেওয়ানা হয়ে এবং অন্যকে উম্মাদনায় ভাসানোর পরিবর্তে সহজসাধ্য ও সর্বোত্তোম পথ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর উত্তম আদর্শের অনুসরণ করি, যাতে রয়েছে ইহকালিন ও পরকাণীন সফলতা। তাই আদর্শ বিবাহ ও বর্তমান সমাজে প্রচলিত বিবাহ ও অনুষাঙ্গিক আরো কিছু বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব, ইশাআল্লাহ।

বিবাহ বা নিকাহ কি? 

ইসলামী শরীয়তে পরিভাষায় নিকাহ বা বিবাহ বলা হয়, পুরুষ ও নারীর ( যাকে বিবাহ করা বৈধ) সম্মতিতে সম্পাদিত এমন আকদ চুক্তিকে যা পুরুষের জন্য ঐ নারীকে দৈহিকভাবে উপভোগ করা বৈধ করে দেয়। ( আদদুর রুল মুখতার, খন্ড-০৩, পৃ.-৩-৪।

বিবাহের স্থান ও কাল:

বিবাহ যেহেতু একটি ইবাদত তাই এর জন্য সবচেয়ে বেশী উপযোগী একটি স্থান নির্বাচন করাই সমিচীন। এই উম্মতকে সে ব্যাপারে দিক নির্দেশন দিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন واجعلوه فى المساجد তোমরা বিবাহ শাদীর আকদ মসজিদে কর। সুত্র: সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং-১০৮৯।

আর বিবাহের সময় যদি জুমার দিনের শেষাংশে হয় তাহলে সবচেয়ে উত্তম হয়। (সুত্র: ফাতহুল কাদির-৩/১০২) এতে নিম্মোক্ত ফায়দা অর্জিত হবে।

১. সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিবাহের আকদের এলান হয়ে যাবে।

২. জুমার দিনের বরকত অর্জিত হবে।

৩. দুয়া কবুল হওয়ার সময়।

৪. দিনটি অধিক বরকতময়, যে দিন হযরত আদম আ.কে সৃষ্টি করা হয়। সুত্র: মিরকাত-৬

বিবাহের ফজিলত:

বিবাহের ফজিলত প্রমানের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তায়ালা এমন কোন নবী –রাসুল প্রেরণ করেননি যিনি বিবাহ করেন নি। ( হযরত ঈসা ও হযরত ইয়াহইয়া আ. ছাড়া) আল্লাহ তায়াল ইরশাদ করেন, ولقد ارسلنا رسلا من قبلك وجعلنا لهم ازواجاً و ذرية অর্থ: বস্তুত তোমরা আগেও আমি বহু রাসুল পাঠিয়াছি এবং তাদেরকেও স্ত্রী ও সন্তানাদি দিয়েছি। ( সুরা রা’দ- ৩৮)

অসংখ্যা হাদিস শরীফে বিবাহের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। নিম্মে কয়েকটি পেশ করা হল ।

১. বিবাহ দ্বীনের অর্ধেক:

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন اذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله فى النصف الباقى অর্থাৎ- ‍যখন কোন বান্দা বিবাহ করে তখন সে ধর্মের অর্ধাংশকে পরিপূর্ণ করে নেয়। অতএব< সে যেন অবশিষ্ট অর্ধেকে আল্লাহকে ভয় করে। সুত্র; তিরমিযি- হাদিস নং-১০৮০ ।

দেখুন উপরোক্ত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহকে দ্বীনের অর্ধেক সাব্যস্ত করেছেন। কারণ একজন মুমিনের দ্বীন বিনষ্টের মুলে মৌলিকভাবে দুটি বিষয় দায়ী, ১. লজ্জাস্থান ২. পেট। বিবাহের মাধ্যমে লজ্জাস্থানের সুরক্ষা হয়। আর আয়- রোজগারে হালাল-হারাম বেঁচে চললে পুরো দ্বীরে হেফাজত হয়।

২. বিবাহ রাসুল স. এর সুন্নত:

ক. অন্য হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ما بال اقوام قالوا كذا كذا لكنى اصلى وانام واصوم وافطر واتزوج النساء فمن رغب عن سنتى فليس منى অর্থাৎ- লোকজনের কি হল? তারা এমন এমন কথা বল? কিন্তু আমি নামায পড়ি এবং ঘুমাই, নফল রোজা রাখি, কখনো রাখিনা। আবার বিবাহ শাদীও করি। অতএব যে ব্যাক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুত্র: সহিহ বোখারী ও মুসলিম।

খ. অন্য হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন النكاح من سنتى فمن رغب عن سنتى فليس منا অর্থাৎ নিকাহ আমার সুন্নাত, অতএব যে আমার সুন্নাতকে পালন থেকে বিরত থাকবে, সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুত্র: ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১০৩৯০ ।

গ. অন্য হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন من قدر على ان ينكح فلم ينكح فليس منا অর্থাৎ-বিবাহের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যাক্তি বিবাহ করলনা সে আমার অনুসারী নয়। সুত্র; দারমী হাদিস নং-২০৮৭

ঘ. অন্য হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন تزوجوا فان التزوج خير من عبادة الف سنة অর্থাৎ- তোমরা বিবাহ কর, কেননা বিবাহ এক হাজার বৎসরের নফল ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। সুত্র: তাবারানী আল নোয়াহ৬/৫ ।

বিবাহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

১. প্রশান্তি লাভ করা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ومن اٰيته ان خلق لكم من انفسكم ازواجاً لتسكنوا اليها وجعل بينكم مؤدة و رحمةঅর্থাৎ তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। যাতেস তোমরা তাদের কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ কর এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। (সুরা রুম আয়াত ২১)

২. বদ নজর ও কুদৃষ্টি করা থেকে বেঁচে থাকা।

৩. লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে। এ ব্যাপারে হাদিসে রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন فانه اغض للبصر واحسن للفرج অর্থাৎ- বিবাহ দৃষ্টিকে খুব বেশী অবনত রাখে এবং লজ্জা স্থানকে সংযত রাখে। সুত্র: সহিহ বোখারী- হাদিস নং-১৯০৫, মুসলিম-হাদিস নং ১০১৮

৪. সন্তান জম্ম দেওয়া। বিবাহের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হল সন্তান জম্ম দেওয়া। এব্যাপারে হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন تزوجوا الودود الولود فانى مكاثر بكم الامم অর্থাৎ- তোমরা স্বামীভক্ত অধিক হারে সন্তান জম্মদানে সক্ষম মেয়েদেরকে বিবাহ কর, কারণ তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের উপর আমি গৌরব করব। সুত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০৫০।

৫. তাকওয়া ও পরহেজগারী বজায় রাখা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন محصننين غير مسافحين ولا متخى اخدان অর্থাৎ- তোমাদের বিবাহ করা যেন তাকওয়া ও পরহেজগারীর উদ্দেশ্যেই হয়, কেবল ইন্দ্রীয় বাসনা চরিতার্থ করার বা গোপন প্রণয়িণী বানানোর ইচ্ছা যেন না হয়। সুরা মায়িদা, আয়াত-০৫

চলবে…