বিপ্লবী আলেম আল্লামা ফজলুল হক আমিনী রহ.

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ১২ ২০১৯, ১৩:৪৩

।। লাবীব আব্দুল্লাহ ।।

আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি৷ আত্মবিস্মৃতি জাতীয় স্বভাব৷ যারা জাতীয় অবদান রাখেন অকারণে তাদেরকে অবহেলা করি৷ অবজ্ঞা করি৷ হত্যাও করি৷ বঙ্গবন্ধুর হত্যা ও শহীদ জিয়ার হত্যা, চার নেতার হত্যা তো এই জাতির লোকগুলোই করেছে৷ এখন হত্যা উৎসব চলে৷ ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই জাতি আমরা৷ নাস্তিকদের ফাঁসি চাই দাওয়াত না দিয়েই৷ নাস্তিকরাও ফাঁসি চায় ইসলামপ্রেমীদের৷ আধুনিক বিশ্বে কি এতো ফাঁসি হচ্ছে কোথাও? বিরলপ্রজ আলেম বিপ্লবী কন্ঠস্বর আল্লামা আমিনীকে বিশ মাস বন্দী রেখেছে এই জাতি৷ ঘরে বন্দী৷ ছেলেকে গুম৷ পরে মানসিক নির্যাতন করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ছেলেকে৷ তবে তিনি বন্দীই ছিলেন৷ বিশ মাস প্রকাশ্যে কথা বলতে পারেননি তিনি৷ অথচ সারা বাংলায় উচ্চারিত হতো তাঁর সত্যের আওয়াজ৷ হক কথা ফজলুল হকের৷

দুই.
তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী৷ প্রতিভাবান৷ ছাত্র জীবনেও ভিন্নতার স্বাক্ষর রেখেছেন৷ নয় মাসে বা তিন মাসে পুরো কুরআন হিফয করেছেন৷ দেশের বাইরে ইলমের জন্য রিহলা করেছেন৷ উর্দু, আরবী ও ফার্সী ভাষায় দক্ষ ছিলেন৷ উর্দুতে রচানাবলী রয়েছে তাঁর৷ আরবীতে বুখারী শরীফের শরাহ লিখেছেন৷ মুহাদ্দিস ছিলেন৷ দরসে হাদীসে অনন্যতা ছিলো৷ ভিন্নতা ছিলো হাদীসের ব্যাখ্যায়৷ ঘরভরা কিতাব ছিলো৷ একাধারে তিন রাত না ঘুমিয়ে সজাগ থাকতে পারতেন৷ শেষ রাতে শিশুর মতো কাঁদতেন দেশ জাতি রাষ্ট্রের জন্য৷ উম্মাহর উন্নতির জন্য৷ বিলাপ করতেন দরবারে ইলাহীতে৷ কান্না করতেন একাকী বা সম্মিলিত৷
তিনি আধ্যাত্মিক জগতেও ছিলেন রাহনুমা৷

তিন.
আশির দশকে রাজনীতিতে জড়িত হোন৷ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন দিয়ে রাজনীতি শুরু৷ শেষে ইসলামী ঐক্যজোট৷
তিনি ব্যক্তিই ইনস্টিটিউট ছিলেন৷ সংগঠক ছিলেন তবে নিয়ম মেনে নয়৷ একাই বাতিলের বিরুদ্ধে হুংকার দিতেন। প্রয়োজনে দেশ অচলের ধমক এবং হরতালের মাধ্যমে বিশ্বকে জানান দিতেন তিনি হকের লোক৷ দেশপ্রেমিক ও ঈমানপ্রেমী ইসলামপ্রেমী৷ উপমহাদেশের আলেমগণ তাঁর বিপ্লবী ঘোষণা শুনে দুআ করতেন তাঁর সাহসিকতার জন্য৷ ইসলামের জন্য বেকারারি ভাবের জন্য৷ দেওবন্দেও ছিলেন আলোচিত৷ প্রশংসিত৷

তিনি পার্লামেন্টেও ইসলামের স্বার্থের কথা বলতেন৷ দেশের উন্নয়নের কথা বলতেন৷

চার.
তিনি প্রায় সাত আটটি সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন৷ নানা ইস্যুতে তা করতে হয়েছে৷ কোনোটি জীবিত, কোনোটি মৃতপ্রায়। তবে তিনি গত শতকের ইসলামী সেরা ব্যক্তিত্বদের সেরা একজন৷ তাঁর অবদান দরসে হাদীস থেকে সংসদ তক৷

পাঁচ.
১২/১২/১২ তারিখে তিনি রহমতের ছায়াতলে চলে যান৷ রেখে যান জামেয়া লালবাগের শূন্য মসনদে হাদীস৷ শূন্যতা সৃষ্টি হয় নানা অঙ্গনে৷ মহাশূণ্যতা৷ অপূরণীয়৷

আমরা অকৃতজ্ঞ হলেও কিছু স্মরনিকা স্মারক বের করেছি৷
কেউ কেউ অসম্পন্ন জীবনী৷ কেউ অপ্রকাশিত বইগুলো প্রকাশ করেছি৷
প্রয়োজন আল্লামা আমিনীকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা৷ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন তাঁর চিন্তা নিয়ে একাডেমী৷ আগামী প্রজন্মকে জানাতে নানামুখী উদ্যোগ প্রয়োজন৷ অন্যথা ভুলে যাবে চিন্তানয়ক আল্লামা আমিনীকে৷

বেঁচে থাকতে সমালোচিত ছিলেন কারো কারোর কাছে। কিন্তু জাতীয় নানা ইস্যুতে তাঁর কত যে প্রয়োজন তারাই বুঝেছেন যারা তাঁর সান্নিধ্যে থেকে সাহসিকতা দেখেছেন৷

সারা বাংলায় মাহফিল হচ্ছে কিন্তু সেই গর্জন নেই। চীন ও আরব হামারা, হিন্দুস্তাঁ হামারা…। মুমিন কা শমসির আল্লাহু আকবার…। নেই সেই বিপ্লবী কন্ঠস্বর৷

ছয়.
সারা বছর ভুলে থাকলেও মাদরাসায় তাঁর জন্য দুআ করতে পারি আমরা এবং জীবনী আলোচনা করতে পারি ঘরোয়া পরিবেশে৷ মাদরাসা ইবনে খালদুনে বাদ মাগরিব তাঁর জীবনী নিয়ে আলোচনা হবে আজ৷

লেখক: মাওলানা লাবীব আব্দুল্লাহ
পরিচালক, মনীষা চর্চাকেন্দ্র বাংলাদেশ ও ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট।