বিচারের নামে মজলুম পরিবারগুলোর সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ২৭ ২০১৯, ১৯:১৮

ফুজায়েল আহমাদ নাজমুল 

সরকারের সাথে নেই, অর্থাৎ বিরোধীদলের নেতাকর্মী বা সাধারণ মানুষ এমন লোক যারা আজ সত্য বা মিথ্যা মামলার আসামী, তাদের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অতিদ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। কাউকে যাবজ্জীবন আবার কাউকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ও জরিমানা দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অথচ সরকার সমর্থিত অপরাধীদের বিচারকার্য শেষ করতে বছরের পর বছর পার করে দেয়া হচ্ছে। অনেক অপরাধীদের বিচার না করে মামলা থেকে খালাস দেয়া হচ্ছে।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় দর্জি দোকানদার কর্মী, বিশ্বজিৎ দাসকে বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে দিনের আলোতে, প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে কুপিয়ে এবং রড দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। যারা হত্যা করেছিলো প্রশাসনের কাছে তারা অজ্ঞাত ছিলো না। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে সাক্ষী প্রমাণেরও কোন প্রয়োজন ছিলো না। যারা তাকে কুপিয়েছিলো, পিটিয়েছিলো সবাই ছাত্রলীগের সমর্থক ছিলো। ধারণ করা ভিডিওতে পরিস্কারভাবে তাদের চেহারা ফুটে ওঠেছিলো। উপস্থিত সময়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করলেও আজ পর্যন্ত বিশ্বজিৎ পরিবার ন্যায় বিচার পায়নি।

২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর, সিলেটে কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের দেহকে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল দিনের আলোতে, প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে কুপাতে কুপাতে নিস্তেজ করে দিয়েছিলো। ধারণ করা ভিডিওতে বদরুলের কুপানোর দৃশ্য আমরা দেখেছি। বদরুলকে গ্রেফতার করা হলেও এখন পর্যন্ত বিচার ঝুলিয়ে আছে আদালতে।

ফেনীর সোনাগাজী আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ, সিরাজউদ্দৌলার হুকুমে (৬ এপ্রিল-২০১৯) ওই মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ক্যাম্পাসের ভেতর দিনের আলোতে প্রকাশ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রতিবেদনে নুসরাত হত্যার ঘটনায় জড়িত ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আদৌ কি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে?

গতকাল (২৬জুন ২০১৯) দিনের আলোতে প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে বগুড়ায় সদ্যবিবাহিত ২২ বছরের যুবক রিফাতকে নিজ স্ত্রীর সামনে মর্মান্তিকভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। এই হত্যাকাণ্ডের আসামীদের চিহ্নিত করতে কোন সাক্ষী প্রমাণের প্রয়োজন হবে না। ধারণ করা ভিডিওতে হত্যাকারীদের চেহারা পরিস্কার হয়ে ওঠেছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার কি আদৌ হবে?

বিশ্বজিৎ, খাদিজা, নুসরাত ও রিফাতের ওপর হামলার দৃশ্য এক স্টাইলের। তবে খাদিজা ভাগ্যবতী ছিলো। আল্লাহর অশেষ রহমতে অলৌকিকভাবে সে বেঁচে যায়। জানি না, এখন সে কেমন আছে। তবে মনে হয় না, সে খুব ভালো থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।

এতোদিনে বিশ্বজিৎ, খাদিজা, নুসরাতের ওপর হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হয়নি। আর হবে বলেও বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ, বিশ্বজিৎ, খাদিজা, নুসরাতরা আওয়ামী পরিবারের লোক নয়। হত্যাকারীরা আওয়ামী পরিবারের লোক। এখানে বিচারের নামে মজলুম পরিবারগুলোর সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। জাতিকে ধোকা দেয়া হচ্ছে।

যে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত নেই, সে দেশে বিশ্বজিৎ, নুসরাত আর রিফাতের মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে আরো অনেককে। শাসকগোষ্ঠী ছাড়া দেশে আজ কেউ নিরাপদ নেই। কার কখন কিভাবে জীবন দিতে হবে কেউ জানে না। আফসোস, পশ্চিমা দেশগুলোতে কুত্তা বিড়ালের মতো পশুর মূল্য থাকলেও আজ আমার দেশ বাংলাদেশে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কোন মূল্য নেই। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। একটি ভাল সমাজ গড়ে উঠতে পারে না।