বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এক অনন্য সম্ভাবনার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ০৮ ২০১৯, ১৬:৩২

মাহবুবুর রহমান তালুকদার

১৯৮৯ সালের এই দিনে (৮ ডিসেম্বর) উলামা মাশায়েখ ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবিদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। জামায়াতে ইসলামী যদিও অনেক আগ থেকেই বাংলাদেশে কাজ করছে, কিন্তু বিদগ্ধ আলেমজনদের চিন্তা চেতনার সাথে মরহুম মাওলানা মওদুদী এর অমিল থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে তেমন আবেদন জাগাতে পারে নি ।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন বিতর্কিত ভূমিকা রাখায় শিক্ষিত সমাজেরও সিংহভাগ এ সংগঠনে যোগদান থেকে বিরত থেকেছেন । অথচ ৯০ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশ হল ইসলামী বিপ্লবের এক ঊর্বর ভূমি এবং মানুষের মধ্যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা ও সে লক্ষ্যে কাজ করার প্রচুর আগ্রহ রয়েছে।

মানুষের সেই আগ্রহকে সমন্বিত এক বিপ্লবী শক্তিতে রূপান্তরিত করতেই খেলাফত মজলিসের যাত্রা শুরু ।

১৯৮৯ ঈসায়ী সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজীজুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত আন্দোলন ও অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন যুব শিবির একীভূত হয়ে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নামে আত্মপ্রকাশ করে।

এই সংগঠনের প্রথম আমীর ছিলেন মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা আবদুল গাফ্ফার সাহেব (রহঃ)।

প্রথম মহাসচিব ছিলেন ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসুদ খান ( বর্তমানে অন্যতম নায়েবে আমীর)।অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন শাইখুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক (রহ:)।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জনপদে খেলাফত প্রতিষ্টার আহবান নিয়ে এই সংগঠনটি ছড়িয়ে পড়ে । ইসলামী আন্দোলনের এক বৃহৎ সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সমূহ সম্ভাবনা দেখে হিংসুকেরা ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠে । তৈরি করে নানা কূটজাল; সৃষ্টি করে লোভ আর হিংসার মিশেলে পারস্পরিক অবিশ্বাস, আমিত্ব আর অহঙ্কার।

২০০৫ সাল। শূরায়ী সিদ্ধান্ত মনঃপুত হয় নি কিছু ভাইদের। নিজেদের মনোবাঞ্ছা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াল এই শূরা ডিসিশন। আপন ঘর ভাঙার মত অনভিপ্রেত কাজটি করে বসলেন তারা। এজন্যে অবশ্য করতে হয়েছে কত ইমোশনাল ব্লাকমেইল, ছড়াতে হয়েছে হাজারো মিথ্যা আর নানান গুজব।

দলকে ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য অনেকেই শাইখুল হাদীস রহঃ এর সরাসরি সাক্ষাত করতে বারবার চেষ্টা করেন। শাইখুল হাদীস সাহেবের সাথে একটি বোঝাপড়া হয়ে গেলেই সম্ভাবনাময় এ দলটি চূড়ান্ত ভাঙন থেকে রক্ষা পেত। কিন্তু, পারষ্পরিক অহমিকা আর জেদের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি স্বরূপ ঐক্যকামী সেই মুরুব্বীদের প্রচেষ্টায় বাদ সাধেন শাইখের আত্মজরাই। মনে পড়ে তাঁদের একজনের করুণ আর্তনাদ, “ *******, দলটা ভাঙিস না, আমাদেরকে শাইখের সাথে দেখা করতে দে”।

কিন্তু, আমরা হলাম বাংলাদেশের গর্বিত আলেম সমাজ। গড়ার চেয়েই ভাঙনেই যে আমাদের অত্যধিক আগ্রহ!

অবশেষে, অনেক নেতা কর্মীর স্বপ্নসৌধ ধুলিস্মাৎ করে ভেঙেই গেল স্বপ্নের ঠিকানা। খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ।

শাইখুল হাদীস রহঃ কে আমীর বানিয়ে এক গ্রুপ হল। সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা ইসহাক সাহেবকে আমীর বানিয়ে হল আর গ্রুপ।

২০০৫ থেকেই উভয় গ্রুপই মূল গ্রুপ হিসেবে দাবী করেন। শাইখুল হাদীস আজীজুল হক (রহঃ)কে সামনে রেখে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই পরে জমিয়তে যোগ দেন। অন্যগ্রুপের এক দু’জন জামায়াতে ঠিকানা গড়েন।

কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি যা হয়েছে, তা হলো, হাজার হাজার নেতকর্মী স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ইলেকশন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির নামের শেষে ‘বাংলাদেশ’ যোগ না করে নামের প্রথমে যোগ দিতে নির্দেশনা প্রদান করে এবং ভোটে অংশগ্রহণ করতে হলে নাম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে ।

উভয় গ্রুপই ‘ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’ নামে নিবন্ধিত হবার জন্যে আবেদন করে। কিন্তু একই নামে দুই সংগঠনের নিবন্ধন দেয়ার বিধান নেই বিধায়, ইলেকশন কমিশন শাইখুল হাদীস নেকৃত্বাধীন গ্রুপকে ২০/১১/ ২০০৮ তারিখে ‘বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’ নামে নিবন্ধন দেয় (নিবন্ধন নং ০৩৩; প্রতীক রিকশা)। আর ২২/১১/২০০৮ এ অপর গ্রুপকে ‘খেলাফত মজলিস’ নামে নিবন্ধন প্রদান করে । যার নিবন্ধন নং- ৩৮ এবং দলীয় নির্বাচনী প্রতীক হচ্ছে দেয়াল ঘড়ি।

আজ উভয় সংগঠনেরই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী তখনই সফল হবে, যখন উভয় দলের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হবার প্রেরণা ব্যক্ত করবেন। ক’দিন আগে মরহুম শাইখুল হাদীস ইস্যুতে যেভাবে দু’মজলিসকে একই মঞ্চে দেখেছিলাম, হাজার হাজার নেতাকর্মীরা ঠিক সেভাবেই একতাবদ্ধ হবার বাস্তব কর্মসূচি চায়।