বন্যা মোকাবেলায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ২৬ ২০১৯, ১৮:৪১

এহসান বিন মুজাহির

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশে বন্যার কারণে গত ১২ দিনে বিভিন্ন জেলায় মারা গেছে অন্তত ৮৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সী অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক হিসাবে এই তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে জামালপুর জেলায়। সেখানে ২৯ জন মারা গেছে। এছাড়া গাইবান্ধা জেলায় ১৫ জন, নেত্রকোনায় ১৩ জন এবং টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জ জেলায় পাঁচ জন করে মারা যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। প্রাণহানি হয়েছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া এবং ফরিদপুরে। এসব জেলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। ১০শে জুলাই থেকে শুরু করে ২২শে জুলাই পর্যন্ত সময়ে বন্যায় পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ জন। এছাড়া সাপের কামড়ে আট জন, বজ্রপাতে সাত জন, আর.টি.আই’য়ে আক্রান্ত হয়ে একজন এবং অন্যান্য কারণে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ দেশে বন্যা-খরা-ঝড়-ঝঞ্ঝা নতুন কিছু নয়। পানি প্রবাহের ধরণ-প্রক্রিয়া, জলবায়ুর কারণ ও ভৌগলিক অবস্থানগত কাঠামোর ফলে বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবেই বন্যাপ্রবণ। বন্যার কারণে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটে। বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী বন্যায় আক্রান্ত হয়। বন্যায় সাধারণত পানির গতিপ্রবাহ ধ্বংসাত্মকভাবে বেড়ে যায়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের নগর এলাকাগুলোতেও বন্যা পরিস্থিতি ও জলাবদ্ধতার সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এবারের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে মূলত উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এবং গত দু’সপ্তাহের টানা বর্ষণের কারণে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ না নিলেও এবারের বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতিতে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চাল, ডাল, আটা, সবজি, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুহীন হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে সাপসহ বিষাক্ত প্রাণির উপদ্রব। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব। বানভাসি মানুষের কষ্ট লাঘবে সবার ঘরে ঘরে সামর্থের আলোকে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া আমাদের মানবিক দায়িত্ব।

যদিও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের সাধ্যাতীত নয়। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বন্যা মোকাবেলার ও পুনর্বাসনের সরঞ্জামাদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্টোর, টিন, চট, বাঁশ, কাঠ, তাবু তৈরির জিনিসপত্র, লাইফ জ্যাকেট, পানি শোধনের ওষুধ বা অন্যান্য প্রক্রিয়া, জরুরি চিকিৎসা-ওষুধ, তরল ও শুকনো খাবার, খাবার পানি, পোশাক-কাপড়, সাময়িক লেট্টিন স্থাপন ও পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা, কেরোসিন তেল, হারিকোন চেরাগ, হ্যাজাক লাইট, চার্জ লাইট, টিউবওয়েল স্থাপন, পাইপ ও পরিবহনসহ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করা। নদী ব্যবস্থাপনা, নদীরক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্গতদের পুনর্বাসনসহ সার্বিক বন্যা উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাধুনিক উন্নত প্রযুক্তি, ধারণা ও উন্নতদেশগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যবহারিক-অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে সরকারককে। বিশেষ করে বন্যার ঝুঁকি মোকাবেলায় বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক