বন্ধুত্ব হোক আল্লাহর জন্য!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ০৪ ২০১৯, ১৮:২১

 

হাবীব আনওয়ার

বন্ধুত্ব ভালোবাসা আল্লাহর নিয়ামতের অন্যতম।
কিন্তু এই দুঃখ ভারাক্রান্ত পৃথিবীতে সত্যিকার বন্ধু খুঁজে পাওয়া খুবই দুস্কর। উপলব্ধি করার মত মন আর অনুভব করার মত উদার হৃদয় নেই বললেই চলে। বন্ধুত্ব কথাটা খুব ছোট হলেও এর বিশালতা আকাশ সমান। গভীরতা সমুদ্রের মত আর উচ্চতা হিমালয় ছাড়িয়ে যায় । জীবনের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন অপরিসীম। ভালো -মন্দের রাস্তাগুলো বন্ধু ছাড়া চলা প্রায় অসম্ভব। আর বন্ধুহীনা জীবনটা কেমন যেন অপরিপূর্ণ।

পুরো পৃথিবীটা একটা মায়ার জালে আবদ্ধ। প্রেম -প্রীতি, ভালোবাসা- সৌহার্দ্য এগুলো পৃথিবীর শুরু থেকেই চলে আসছে। প্রেম -ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আছে বলেই পৃথিবী আজ এত সুন্দর। বর্তমান পৃথিবীতে ৭৫০ কোটি মানুষ। যদি একে অপরের প্রতি সহনশীল না হতো, যদি বিলীন হয়ে যেত ভালোবাসা- বন্ধুত্ব তবে পুরো পৃথিবী অশান্তির দাবানলে জ্বলতে থাকতো। পুরো পৃথিবী জুড়ে বিরাজ করতো; অশান্তি, অনৈতিকতা আর অরাজকতা। একে অপরের প্রতি থাকতো না কোন মমতাবোধ।
প্রতিটি মানুষই ভালোবাসার গুন নিয়েই দুনিয়াতে আসে। একে অপরের প্রতি একটা টান প্রতিটি হৃদয়ে লালন করে। পৃথিবীর সর্বশ্রেণীর মানুষ এই প্রেম ভালোবাসায় জড়িত। তবে বিপত্তি ঘটে তা প্রকাশের ভঙ্গিমায়।
আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তরে প্রেম ভালোবাসা দেওয়ার সাথেসাথেই তার ব্যবহার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। বৈধ অবৈধ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। কে কাকে, কীভাবে, কেন ভালোবাসবে তা বাতলিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহর নবী ছা. ও অসংখ্য হাদীসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। কাকে বেশি, কাকে কেন ভালোবাসতে হবে। কার সাথে কেন বন্ধুত্ব করতে হবে। আল্লাহর নবী ছা. ভালোবাসাকে ঈমানের সাথেও তুলনা করেছেন।
হযরত আনাস রা. বলেন, হুজুর ছা. ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না,যতক্ষণ আমি তার নিকট তার পিতা মাতা,সন্তান সন্ততি ও দুনিয়ার সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয় না হবো।বুখারী

অন্য হাদীসে ভালোবাসা বৃদ্ধির পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন।
হযরত আবূ হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দিব না, কি করলে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৯৮

আবার কাউকে ভালোবাসলে তাকে অবহিত করার কথাও হাদীসে উল্লেখ্য রয়েছেন,
হযরত আল-মিক্বদাম ইবনু মা’দীকারিব রা. থেকে বর্ণিত,নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইকে ভালোবাসে, তার উচিৎ তাকে তাঁর ভালোবাসা সম্পর্কে অবহিত করা।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫১২৪

তবে সকল ভালোবাসা বন্ধুত্ব হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এবং বৈধ পদ্ধতিতে। এ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু উমামা রা. বলেন, হুজুর ছা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্য কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তার ঈমান পরিপূর্ণ।( মিশকাত)

কিন্তু বর্তমান সমাজের চিত্র একদম ভিন্ন। ভালোবাসা -বন্ধুত্ব আছে, আছে একে অপরের প্রতি মমতাবোধও কিন্তু তা শুধু লোক দেখানো আর পার্থিব লাভের আশায়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন আজ তেমন চোখে পরে না। প্রতিটি সম্পর্ক আজ স্বার্থের বেড়াজালে আবদ্ধ। যার কারণে, ভালোবাসা – বন্ধুত্ব থাকা সত্বেও পৃথিবী আজ অশান্ত। হিংসে -বিদ্বেষে ভরা। ঠুনকো অজুহাতেই ভেঙে যায় সযত্নে গড়া ভালোবাসা- বন্ধুত্ব। যার ফলে শত্রুতা আর হিংস্রতায় ছেয়ে আছে আমাদের চারপাশ।

বন্ধুত্বের পথ ও পদ্ধতি দেখতে পাই নববী আদর্শে।
আল্লাহর নবী ছা. এর ভালো বন্ধু ছিলেন হযরত আবু বকর রা.। যা মানব জাতির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত অনুপম আদর্শ হয়ে থাকবে। বন্ধুত্ব কেমন হবে তা দেখিয়ে দিয়েছেন হযরত আবু বকর রা.। কঠিন বিপদ। চারদিকে কাফেরদের আত্যাচার নির্যাতনের ভয়াল চিত্র! মক্কার অলিগলিতে ঘোষণা হয়েছে আব্দুল্লাহ পুত্র মুহাম্মদকে মৃত বা জীবিত ধরতে পারলো পুরস্কৃত করা হবে। পুরস্কারে আশায় চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে পিচাশ কাফেরের দল। বিপদ আসন্ন। ধরা পরলে নির্ঘাত মৃত্যু। তবু পথ চলছেন বন্ধুর সাথে। যাত বিপদ আসুক বন্ধুকে একা ফেলে কখনো কোথায় যাবে না। আশ্রয় নিলেন পাহাড়ের গুহায়। সকল মুখ বন্ধ করে নিজের পা দিয়ে আটকিয়ে রাখলেন অন্য মুখটি। হঠাৎ কিসের ধ্বংসাত্ম আক্রমণ। বিষে কাতর শরীর। তবুও নিশ্চুপ, নির্বাকার।৷ মুখে কোন কথা নেই। বন্ধুর কষ্ট হবে ভেবে।

আরেক বন্ধু হযরত আলী রা. নিশ্চিত মৃত্যু যেনও বিছানায় শুয়েছিলেন হিজরতের রাতে। কারণ, তাদের বন্ধুত্ব ভালোবাসা ছিল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য।

কিন্তু বর্তমান সময়ে বন্ধুত্ব হয়ও শুধু স্বার্থের জন্য। স্বার্থ শেষ বন্ধুত্বও শেষ। যার ফলে হিংসা, অহংকার আর মহামারী প্রকট আকার ধারণ করেছে।

আজ বিশ্ব বন্ধু দিবস। প্রতিবছর আগস্টের প্রথম রবিবার পালন করা হয় বিশ্ব বন্ধু দিবস। এবারের দিবসটি হোক অন্যবারের চেয়ে ভিন্ন। সকল স্বার্থের পরাজয় ঘটিয়ে জয় হোক নিঃস্বার্থ বন্ধুর ও বন্ধুত্বের। পৃথিবীর ছেয়ে যাক বন্ধুত্বের শীতল ছায়। বন্ধুত্ব গড়ে উঠুক মহান আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করতে।

আসুন! আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখি।

লেখক: শিক্ষার্থী, হাটহাজারী মাদরাসা চট্টগ্রাম।