প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ড : আপনি কাকে ভোট দিবেন?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ২৮ ২০১৮, ০৯:৩৪

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া: ভোট দেয়ার জন্য প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষ করতে হবে প্রার্থী কয় ধরণের হয় সেদিকে ৷ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী প্রথমত দু’ধরনের হয়ে থাকে৷ কিছু প্রার্থী কোন রাজনৈতিক দলের প্লাটফর্ম থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আর কিছু সংখ্যক প্রার্থী নির্দলীয় তথা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়৷ উভয় ক্ষেত্রে হুকুম ভিন্ন ভিন্ন ৷

নির্দলীয় তথা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেলায় তাদের ব্যক্তিজীবন, স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ এবং মুসলমান ও ইসলামের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি লক্ষ করতে হবে৷ সার্বিক দিক বিবেচনায় যে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভালো মনে হবে, তাকেই ভোট দিতে হবে৷

পক্ষান্তরে যে প্রার্থী কোন রাজনৈতিক দল কিংবা সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন, সেক্ষেত্রে উক্ত রাজনৈতিক দলের মৌলিক নীতিমালা, রাজনৈতিক পলিসি, দলীয় আদর্শ, নির্বাচনী মেনিফেস্টো এবং সে দলের হাইকমান্ডের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে৷ ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের প্রতি কারা কতটুকু যত্নশীল, ধর্মকে সীমিত গণ্ডির মধ্যে বন্দি করে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির নামে ইসলামী কৃষ্টি-কালচার, শিক্ষা-দীক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে কারা অগ্রসর-সে দিকটিও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে৷

দলীয় শাসনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার চেয়ে পার্টির মেনিফেস্টো এবং আদর্শ প্রাধান্য পায়৷ ব্যক্তিপ্রভাব এখানে গৌণ হয়ে যায়৷ ব্যক্তি এখানে কেবল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে৷ দলীয় নীতিমালা, চিন্তা-চেতনাবিরোধী ভূমিকা না রাখার জন্য সে বাধ্য থাকে৷ দলীয় আদর্শবিরোধী ভূমিকা রাখার কারণে ব্যক্তির দলে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যায়৷ তাই এ অবস্থায় যে রাজনৈতিক দল ইসলাম এবং মুসলমানের সঙ্গে বৈরী মনোভাব রাখে, সে দলের প্রার্থী যতই ভদ্র ও সভ্য হোক না কেন, তাকে একজন মুসলমান হিসেবে ভোট দেয়া কখনোই সঠিক হবে না৷ কোন ঈমানদার মুসলমানকে উক্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্রব রাখার অনুমতিও দেয়া যায় না৷ বরং বিপরীতে সেই তৃতীয় প্রার্থীকে ভোট দেয়া জরুরী যিনি এমন রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন, যে দল ইসলামী জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷

আর যদি এমন দল না থাকে তাহলে যে দল ইসলাম এবং মুসলমানদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংযত মনোভাব রাখে তাদের ভোট দিতে হবে অথবা এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে, যার স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা উন্নত৷

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যের বিধান

নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরস্পর জোটবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে৷ এক্ষেত্রে কোন ইসলামী রাজনৈতিক দল যদি অনৈসলামিক দলের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থে সমঝোতা করতে চায় তাহলে এর অনুমতি রয়েছে৷ তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, ইসলামী দলের রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচির ওপর যেন কোন প্রভাব না পড়ে৷ ঐক্যের দ্বারা অনৈসলামিক দলের যেসব কর্মসূচি ইসলামী আদর্শবিরোধী, ইসলাম এবং মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী, তা বাতিলের জন্য উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷

এমনকি জাতীয় স্বার্থে অমুসলিমদের এমন দলের সঙ্গেও নির্বাচনী ঐক্য করা যেতে পারে, যে দল ইসলাম এবং মুসলমানের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চরম কর্মসূচি নেয় না৷ তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যে, ঐক্যের দ্বারা যেন অমুসলিমদের দল সাংগঠনিকভাবে শক্তি অর্জন করার সুযোগ না পায়৷

লেখক: মুহতামিম: জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ, যুগ্ম মহাসচিব: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ