প্রযুক্তি ব্যবহারে শিষ্টাচার আছে কি?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ২১ ২০১৯, ১৮:৫৬

আপনার বাড়িতে আসা অতিথিদের কি এটা জানানো উচিত যে আপনার ঘরে থাকা স্মার্ট স্পিকারটি তাদের কথা ধরে রাখতে পারে? এবং যখন আপনার ফোনে টুইটার বা ফেসবুকের দিকে তাকিয়ে থাকার প্রসঙ্গ আসে তখন কতক্ষণ সেখানে থাকা উচিত? কতো সময়কে বেশি সময় ধরা হয়?
গেজেটের শিষ্টাচার এমন এক বিষয় যার সঙ্গে আমরা সবাই জড়িয়ে পড়েছি। এজন্য আমাদের সবার জেনে নেয়া দরকার যে, প্রযুক্তির সাথে আমাদের যোগাযোগ কেমন হওয়া উচিত।
গুগলের হার্ডওয়ার প্রধান রিক ওস্টের্লোহ’ অনেক কর্মময় একটা সপ্তাহ কাটিয়েছেন। তবে সেই ব্যস্ততা ইন্টারনেট অনুসন্ধান এবং অনলাইন বিজ্ঞাপন নিয়ে ছিল না। বরং ছিল গুগলের হার্ডওয়্যার নিয়ে। বেশ ক’দিন ধরেই হার্ডওয়্যারের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
গুগল হোম স্মার্ট স্পিকার থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট এবং ইল ফেটেড গুগল গ্লাস সমস্ত কিছু সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছে।
তবে পিক্সেল স্মার্টফোনই সম্ভবত তাদের ফ্ল্যাগশিপ পণ্য। এখন অবধি, এটা নিয়ে মানুষের পর্যালোচনা বেশ ইতিবাচক। তবে বিক্রির হার অনেক কম। তাই এই সপ্তাহে পিক্সেল ফোর চালু করা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রচুর খাটনি করতে হয়েছে।
আপনি কি আপনার ডিভাইসের কারণে বিভ্রান্ত?
বিবিসির প্রযুক্তি ডেস্ক সম্পাদক লিও কেলিওন যখন রিক ওস্টের্লোহর সাক্ষাৎকার নেন তখন, মিস্টার ওস্টের্লোহ “অ্যাম্বিয়েন্ট কম্পিউটিং” নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখান।
সেখানে মূলত তিনি আলোচনা করেন যে, আমাদের চারপাশে যে গেজেটগুলো রয়েছে তার মধ্যে অনেক গেজেট হারিয়ে যায় কারণ, সেগুলো আমাদের সেভাবে প্রয়োজনে আসে না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে পিক্সেল ফোরের নতুন রেডার বৈশিষ্ট্যটির কথা। ওস্টের্লোহের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই ফিচারটি, ফোন স্পর্শ করা ছাড়াই ফোনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুমোদন দেয়।
“আপনি যদি গান শোনেন, তাহলে আপনার ডিভাইসটি স্পর্শ না করে সহজেই আপনি গান বদলাতে পারবেন। যদি আপনার অ্যালার্মটি সকালে বাজতে থাকে, আপনি সেটা দেখার সাথে সাথে, অ্যালার্মের শব্দটি কমে যাবে এবং তারপরে আপনি অ্যালার্মটি বন্ধ করতে সোয়াইপ করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি আপনার ফোন থেকে কী চান সেটা এই ডিভাইসটি কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারে।”
নতুন গুগল নেস্ট স্মার্ট স্পিকার চালু হওয়ার মাধ্যমে আমরা এমন ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রয়েছি যেখানে, গুগল আমাদের শুনতে পাবে এবং বিভিন্ন উপায়ে আমাদের অনুভব করতে পারছে।
তারপরে লিও এমন একটি প্রশ্ন নিয়ে আসেন যা মিস্টার ওস্টার্লোহকে বোকা বানিয়ে দেয় – আপনার বাড়িতে অতিথিরা প্রবেশের আগেই কি তাদের বলা উচিত যে আপনার বাসায় এ ধরণের একটি অ্যাম্বিয়েন্ট ডিভাইস রয়েছে?
“এটি একটি দুর্দান্ত প্রশ্ন,” তিনি বলেন। “আমি এটা এভাবে ভেবে দেখিনি।” তবে কিছুক্ষণ চিন্তার পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, হ্যাঁ, এটি গেজেট ব্যবহারের একটি ভাল শিষ্টাচার হতে পারে।
“কোনও বাড়ির মালিককে কি অতিথির কাছে এই বিষয়গুলো প্রকাশ করা দরকার? আমি বলতে চাইছি, যে কেউ আমার বাড়িতে প্রবেশ করলে আমি তা করতাম এবং আমি মনে করি যে পণ্যগুলোরই এই ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।” তিনি বলেন যে নেস্ট ক্যামেরা ইতিমধ্যে তাদের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
বিভ্রান্তি কেবল ডিজিটাল যুগের জন্য সমস্যা নয় – প্লেটোও এটি সম্পর্কে লিখেছিলেন। প্লেটোর বাণী

তবে গেজেটগুলো লুকানো থাকা আমাদের বেশিরভাগের জন্য প্রধান সমস্যা নয় -বরং ‌এসব গেজেট প্রতিনিয়ত আমাদের মুখের সামনে থাকে, কারণ আমরা প্রায় প্রত্যেকে এই যন্ত্রগুলোর প্রতি আসক্ত – সমস্যাটা এখানে।
নির এয়াল তার পুরো কর্মজীবনে মানুষকে এই গেজেটের সঙ্গে জুড়ে রাখার কাজ করে গেছেন। তিনি মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব গেজেট এবং তারা যে পরিষেবাগুলো দিচ্ছে সেগুলোয় জুড়ে থাকতে সহায়তা করতেন।
এসব নিয়ে তিনি “হুকড” নামে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি সেই কৌশলগুলোর কথা বলেছেন যার কারণে, পণ্যগুলি মানুষদের আঠার মতো আটকে রাখতে পারে।
এখন তিনি উল্টো কাজটি করছেন। প্রযুক্তির দ্বারা মানুষ যে ক্রমাগত বিভ্রান্ত হচ্ছে সেটা কিভাবে এড়ানো যায় এ নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। প্রতিদিনের ব্যবহৃত এই গেজেটগুলো কতোটা সচেতনভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে তিনি এই বইতে অসংখ্য টিপস দিয়েছেন।
আমাদের মধ্যে অনেকেই স্ক্রিন বা পর্দার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে: এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন মি. এয়াল।
তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই আসক্ত নন, আমরা আসলে বিক্ষিপ্ত, যার অর্থ আমরা চেষ্টা করলে এ থেকে বেরিয়ে আসতে কিছু করতে পারি।”
তিনি আরও বলেন যে আজকাল বাবা মায়েরা পর্দায় সময় কাটাতে খুব বেশি মনোযোগী অথচ এটাই তাদের সন্তানদের সুস্থতার পথে সর্বশেষ বিপদ হতে পারেন: “ওই পর্দায় আপনি আগের প্রজন্মের রক অ্যান্ড রোল বা র‌্যাপ সংগীত শোনেন বা কমিক বই দেখেন, আমরা দোষ দেয়ার জন্য কিছু চাই।”
আমরা কি আমাদের ফোনে বেশি সময় ব্যয় করছি?
তিনি বলেন যে আমরা চাইলে নানা উপায়ে এই গেজেটের মাধ্যমে বিভ্রান্ত হওয়া এড়াতে পারি। যেমন: ডিনার টেবিলে ফোনের ব্যবহার নিয়ে কিছু নিয়ম জারি করা, আপনার সামাজিক মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ডিভাইসের হোম স্ক্রিন থেকে দূরে রাখা।
তবে তার পরামর্শের মূল অংশটি হলো, আপনি আপনার স্মার্টফোন থেকে পিং এবং পপ-আপগুলি উপেক্ষা করতে পারবেন না, তাই বিভ্রান্ত হওয়া এড়াতে এবং এসব গেজেট ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়তে নিজের মধ্যে নজর দেওয়া উচিত।
“আমরা যদি কোন অনুভূতি, অনুভব করতে না চাই, তখন সেটা এড়ানোর জন্য নিজেদের বিভ্রান্ত করতে আমরা এই ডিভাইসগুলোকে ব্যবহার করি। যেমন- বিরক্তি, একাকীত্ব, মানসিক চাপ, ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা”
গেজেটের বিকাশে গত দশকে এই বিশাল পরিবর্তন দেখা গেছে। স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে নির এয়াল উল্লেখ করেন যে, প্লেটো ২৫০০ বছর আগে এই বিভ্রান্তির কথা বলছিলেন। প্রযুক্তি আমূল পরিবর্তনের ফলে মানুষকেও অনেক ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।  তথ্যসুত্র বিবিসি বাংলা