পাকিস্তানের জটিল রাজনীতিতে ইমরান খান ও জমিয়ত

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ২৮ ২০১৯, ১৪:৪৬

সৈয়দ শামসুল হুদা

ভারত উপমহাদেশ ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানের রাজনীতি কখনোই মসৃন ছিল না। একটি নতুন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরীতে যতটা দক্ষতা সেই সময়ের শাসকদের প্রয়োজন ছিল, সেটা তারা করে দেখাতে পারেননি, এটা একদিকে যেমন বাস্তবতা অপরদিকে যেই দেশ থেকে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি সেই বিশাল দেশটিতে তখনও বৃটিশ ক্ষমতায়। লর্ড মাউন্টবেটেনরা ভারতকে স্থিতিশীল করে দিয়ে যেতে যেমন ভুমিকা রেখেছে এটা পাকিস্তানে করা সম্ভব হয়নি। উপরুন্ত বিদ্বেষপরায়ণ হিন্দুত্ববাদী শক্তি পাকিস্তানকে একদিনের জন্যও স্বস্তিতে থাকতে দিবে না এই নীতিতে অটল ছিল, আছে।

এহেন অবস্থায় ভারত কখনো বাংলাদেশকে দিয়ে পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে। কখনো কাশ্মীরকে দিয়ে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে। কখনো আফগানিস্তানকে দিয়ে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে। নাইন ইলেভেনের পর তথাকথিত সন্ত্রাসমুক্ত বিশ্ব গড়তে গিয়ে আমেরিকা যেভাবে ভারতে গেড়ে বসে, সেখানে ভারত পুরোটাকে কাজে লাগায়। এহেন অবস্থায় পাকিস্তান সবসময়ই একটা অস্থিতিশীলতার ভিতর দিয়ে সময় পার করেছে। পাকিস্তানের কোন শাসকই স্বস্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেনি।

বর্তমানে সেই পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমরান খান। তার অতীত ইসলামের দিক দিয়ে খুব গৌরবোজ্জ্বল ছিল না। একজন সাধারণ খেলোয়াড়ি জীবন থেকে তিনি পাকিস্তানের মতো একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত। এটা আজ এক চরম বাস্তবতা। এই অবস্থায় আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানে আমেরিকা যখন নিরাপদ পলায়নের পথ খুঁজছে তখন চোখে শর্ষেফূল দেখছে ভারত। আফগানিস্তান যদি তালেবানদের পুরো দখলে চলে আসে, তাহলে ভারত আফগানকে দিয়ে নোংরা খেলা খুব একটা খেলতে পারবে না। এটা দেখতে পেয়ে সে কাশ্মীরে চরম আঘাত হানে। এটাকে পাকিস্তান সরকার ধৈর্যের সাথে যুদ্ধকে এড়িয়ে কূটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করে যাচ্ছে খুব দক্ষতার সাথে। সর্বশেষ জাতিসংঘে তার প্রদত্ত ভাষণ অনেকের কাছে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। তার সাহসী উচ্চারণে প্রশংসা করেছে।

কিন্তু আলোচ্য বিষয় হলো এমন একটি অবস্থায় পাকিস্তানের জমিয়ত কী করছে? পাকিস্তানে যখন বিরোধী দলের রাজনীতি একেবারেই কোণঠাসা পর্যায়ে, তখন পাকিস্তানের জমিয়ত আলোচনায় আসছে ইমরান খান বিরোধী কর্মসূচীর মাধ্যমে। এখানেই আমার আশঙ্কা। পাকিস্তানের জমিয়তকে হয়তো সাপোর্ট করছে পুরাতন প্রতিষ্ঠিত দলগুলো। তারা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে নেপথ্য থেকে। এই নেপথ্য থেকে দিয়ে যাওয়া সমর্থনে যদি পাকিস্তানজমিয়ত এগিয়ে যায়, এবং ইমরান খানদের সাথে যে বর্তমানে যে জনসমর্থন রয়েছে, সেনা সমর্থন রয়েছে এই দুই শক্তিকে সাথে নিয়ে যদি ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো জমিয়তকে চরম আঘাত হেনে বসে কী না সেই শঙ্কাটা আমি করছি। যেমন বাংলাদেশে হেফাজতের ক্ষেত্রে হয়েছে। পেছন থেকে উৎসাহ অনেকেই দিয়েছে। অবশেষে রাষ্ট্রীয় রক্তচক্ষুর সামনে একা হেফাজতকেই দাঁড়াতে হয়েছে।

পাকিস্তান জমিয়ত বাহ্যিক জনসমর্থন দেখে ইমরান খানের বিরুদ্ধে এই মুহুর্তেই আন্দোলনে যাওয়াটা কতটা ঠিক কাজ করছে, কতটা ভুল করছে এটা নিয়ে পর্যালোচনার দাবী রাখে। ইমরান খানদের পেছনে বড় শক্তির সমর্থন আছে এটা স্বাভাবিকভাবেই মনে করা যায়। যখন পাকিস্তানের জমিয়ত তার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল এই ইস্যুটাকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ইমরান খান বিশ্বব্যাপী তুমুল বাকপটুতার মাধ্যমে শক্ত অবস্থান তৈরী করে ফেলেছে। পাকিস্তানেতো বটেই। এমনকি বিশাল ভারতকে কঠিন চাপের মধ্যে রেখেছে শুধূ বাকপটুতার মাধ্যমেই। এর ওপর রয়েছে ত্রিদেশীয় নতুন জোট, মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও পাকিস্তানের নতুন জোটও আরব বিশ্বের বাইরের সকল মুসলমানদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। ঠিক এই সময়ে পাকিস্তানের জমিয়ত পাকিস্তানে যে বিশাল আকারের লংমার্চ ডাক দিয়েছে তার পরবর্তীতে যদি রাষ্ট্র কোন ম্যাসাকার চালিয়ে বসে, তখন দেশ ও বিদেশে জমিয়ত কতটা জনসমর্থন পাবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা আছে।