পনেরো আগস্টঃ ভিন্ন কথা, ছিন্ন ব্যথা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১৫ ২০১৮, ২২:৪৪

একুশে জার্নাল মতামতঃ ১
আজকের এই রাতে চার দশক আগে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাত বলছি কেন? ইসলাম অন্যায় হত্যাকাণ্ডকে শাহাদাত বলে। শাহাদাত-ই হুকমি। এটা সকলের জানা। পুনরাবৃত্তির জন্য দুঃখিত।

বঙ্গবন্ধু তাঁর উপাধি। নাম শেখ মুজিবুর রহমান। একজন ক্ষণজন্মা, বিরলজ মনস্বী রাজনীতিবিদ তিনি। তিনি ব্রিটিশ ভারতের সময় হতে একজন তুখোড় রাজনীতি সচেতন কর্মী, নেতা ও সম্মোহনী নেতা। কাল্পনিক সুষম পাকিস্তান নির্মাতাদের অন্যতম প্রাজ্ঞ নেতা।

তিনি পাকিস্তানের অসাম্য, অগণতান্ত্রিকতা ও স্বার্থান্বেষী কায়েমী জুলমের বিরুদ্ধে লড়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তিনি রাজনৈতিক সাফল্যের শীর্ষ স্পর্শ করেছেন। তাঁর জীবন, সংগ্রাম ও দ্রোহের। সেই কলকাতা হতে নিয়ে লাহুর হয়ে বিশ্বময় তিনি সদর্পে সত্যের পক্ষাবলম্বন করেছেন। আমৃত্যু সততার সাথে ন্যায়ের পতাকা আঁকড়ে ধরেছেন।


বঙ্গবন্ধুর অবদান বাঙ্গালি ও বাংলাদেশের উপর অপরিসীম।
সবচেয়ে বড়টি__ তিনি আপনাকে আমাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন। কেন? তিনি তো যুদ্ধ করেননি? সশরীরে ছিলেন না?
ভুল। তিনি যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে তিনি সর্বৈবভাবে ছিলেন। তাঁর স্পর্ধক নামে যুদ্ধ হয়েছে। তাঁর কুশলী নেতৃত্বে জনযুদ্ধ বিজয়লাভ করেছে।
তাঁর অমোঘ ঘোষণায় বাংলার দামালরা মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছে। তাঁরই শক্তিশালী নামে এই রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বাতিল করে আপনি বাংলদেশ ও মুক্তিযুদ্ধকে চিন্তাও করতে পারবেন না। মহানায়করা মাঠে থাকেন না, তাঁদের কৌশলগত চিন্তা মাঠময়দানকে আলোড়িত, আন্দোলিত ও উচ্চকিত করে। বঙ্গবন্ধুর সেই তরঙ্গ ও উচ্চাঙ্গ শক্তিরস বাংলার সর্বত্র বিরাজমান ছিল।


সদ্য ভূমিষ্ট ও ভাঙাচোরা রাষ্ট্র মেরামত-গঠনের তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু শহিদ হলেন। নির্মমতা, জিঘাংসা ও প্রতিহিংসার চরম মাত্রায় পুরো বংশকে হত্যা করা হল। কারা? কেন? এমন পাশবিকতা নিয়ে রাষ্ট্রের নির্মাতাকে খুন করল? এই দানবীয় হত্যার পশ্চাতে কারা? কী তাদের লক্ষ্য ও উপলক্ষ্য?

বঙ্গবন্ধুর হত্যা তারাই করেছে, যারা তাঁর মৃত্যু হতে ফায়দা লুটেছে। অথবা যারা ফায়দা লুটপাটের ফন্দি করেছে। বঙ্গবন্ধুর দেশীয় ও বিদেশীয় বিপক্ষ শক্তি ছিল।

*
পাকিস্তানপন্থী দোসর
**
জাসদসহ উগ্রবাদী বামপন্থী
***
সেনাবাহিনীর উচ্চাভিলাষীরা
****
আওয়ামীলীগের বেঈমান ক্ষমতালিপ্সুরা
*****
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদিরা

খেয়াল করুন, কমবেশি তারা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হতে মুনাফা ভোগ করেছে।


পাকিস্তান ও ভারতেও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুর মতো পরিবারসহ এমন ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড আর হয়নি। কেন?
কারণ, বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কালো শক্তির উদ্ভবের পরিকল্পিত চক্রান্ত ছিল। দীর্ঘমেয়াদী প্রতিবিপ্লবের অশুভ আয়োজন ছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনতার ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এই নির্মমতা করা হয়েছে। যারা এই রাষ্ট্রকে মেনে নেয়নি, তারা মিথ্যাচার করে এই হত্যার সাফাই গেয়েছে। যতই যা হোক, মৃত্যু ও খুনির পক্ষে কথা বলার আগে ভাবুন! আপনি কি মানুষ?

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ছিল? ছিল না। এবড়োখেবড়ো গতিতে রাষ্ট্র চলেছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়নি?
একটা সভ্য জাতি রাষ্ট্রের মহানায়কের সাথে এরকম অমানবিক আচরণ করতে পারে? আমরা পারি, পেরেছি।


বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর মাঝ দিয়ে বাংলাদেশের হৃৎপিন্ড কেটে গেছে। হৃৎপিন্ডহীন রাষ্ট্রে আমাদের জন্ম।
বঙ্গবন্ধুর আশেপাশে কিছু তবলবাজ তোষামোদকারী ছিল। ( বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে তাকালে, এরকম কিছু তোষামোদে কেঁচো দেখতে পাবেন। ) এই সুবিধাভোগী জানোয়াররা বঙ্গবন্ধুর সাথে আমজনতার ফারাক সৃষ্টি করেছিল। রাষ্ট্রের আসল পরিস্থিতি হতে বঙ্গবন্ধুকে নাওয়াকিফহাল রেখেছিল। পরে, এই কেঁচোগুলো বঙ্গবন্ধুর রক্ত তাজা পড়ে থাকতেই নতুন সরকারের মন্ত্রী হয়েছিল।
এরকম কিছু চাটার দলের উপদ্রবে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতি মানুষের দুঃখ ও অভিযোগ ছিল। এখানে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বঙ্গবন্ধুর দায় থাকবে। তাঁর সহজাত সরলতার সুযোগে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। অথচ, এই আমজনতাই বঙ্গবন্ধুর কলিজার শক্তি ও সঞ্চয়।


বঙ্গবন্ধু খুনের কারণে আমাদের রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়েছে। সর্বত্র। সংবিধান হতে বিনিয়োগ সবি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মৌল লক্ষ্য হতে ছিটকে পড়েছি। একজন লৌহমানবের বিরল নেতৃত্বের অমিত সম্ভাবনা অঙ্কুরেই নষ্ট হল। এই ক্ষতি এখনো পুষিয়ে তুলতে পারিনি।

বঙ্গবন্ধুর মৌলিক আদর্শ হতে পঁচাত্তরে আমরা খসে পড়েছি। আজও তাঁর কল্যাণ পথে আমরা ঋজুভাবে দাঁড়াতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু আমরণ মিথ্যাচারের সাথে যুদ্ধ করেছেন। আমরা কি মিথ্যার বিপক্ষে দাঁড়াই? বঙ্গবন্ধু মানুষের কথা বলতেন। মানুষের জন্য ত্যাগের রাজনীতি করেছেন জনমভর। তিনি সাম্য, উদার ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতি করেছেন। আমরা তাই করি?
বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের বিকাশ ও উদ্ভাসের জন্য বারবার কারাগারে বন্দী হয়েছেন। মানুষের অধিকারের জন্য রাজপথ হতে রাজমহলে বারবার মিছিল মিটিং সবি করেছেন। আমরা এসব করি?
বঙ্গবন্ধু রক্তচক্ষু ও মৃত্যুচক্ষু উপেক্ষা করে সত্য বলার সৎসাহস রাখতেন। আমরা এই সাহসী উচ্চারণ করি?


বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও দর্শন “কারাগারের রোজনামচা” ও “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”তে বিস্তারিত বিধৃত। সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদার কথা বারংবার এসেছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন, আকাঙ্খা ও দর্শনের সবি এই দুই পুস্তকে সংরক্ষিত। তার অনুশীলন করা আমাদের কর্তব্য। আমরা তা করি?
কোন পদ বা ক্ষমতা নয়, বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা যাচাই করা উচিত জীবনাদর্শ দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে অপরাধ করলে, বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হয়। এই অপমান যারা করে, তারা গাদ্দার। বঙ্গবন্ধু বাঙালির সবচেয়ে বড় ব্র্যাণ্ড। তাই তাঁর নামে বেশি ভেজালও করা হয়। আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। বঙ্গবন্ধুর ছবি, লোগো ও ইমেজ ব্যবহার করে কেউ যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন বিরোধী কাজ না করে।

অপরাধ করে চলতে হলে, অন্তত বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করা হতে বিরত থাকুন। তাঁর সুমহান নামের অপব্যবহার না করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। আর, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আপনি ধারণ করলে, কোন পরিচয় বা খ্যাতি নিষ্প্রয়োজন। আপনি প্রকৃত মুজিব প্রেমিক।

বাংলাদেশের এই জাদুকর মহানায়ক ও তাঁর পরিজনকে আল্লাহ মাফ করে জান্নাতের বাসিন্দা করুন! এই দুআ করছি।