নোয়াখালীতে গার্মেন্ট কর্মীকে গণধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ১১ ২০১৯, ১৪:১৩

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের গণধর্ষণের রেশ কাটতে না কাটতেই জেলার সদর উপজেলায় এবার এক গার্মেন্ট কর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হল। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বুধবার রাতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহতের নাম পারভিন আক্তার (১৮)। বিয়ের প্রস্তাব আসায় কৃষক পিতা জহিরুল হকের ডাকে সাড়া দিয়ে পারভিন কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের কর্মস্থল থেকে বাড়ি আসেন। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে একটি ঘর নির্মাণের পরই একই বাড়ির আনোয়ার হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

ঘর নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে এর আগে পারভিনের পরিবারের সদস্যদের মারধরও করে আনোয়ার হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। জহিরুলের বাড়ির জায়গার ওপর দীর্ঘদিন ধরেই আনোয়ারের নজর ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের পূর্ব শুল্লকিয়া গ্রামে বুধবার সন্ধ্যা রাতে নিহত পারভিন আক্তারের মা নজিবা খাতুন তিন ভাইবোনকে ঘরে রেখে পাশেই তার এক আত্মীয়র বাড়িতে যান। রাত ৮টার দিকে পারভিন আক্তার প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে এলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আনোয়ার হোসেনের ভাগ্নে সন্ত্রাসী ছালাহ উদ্দিন, সাদ্দাম, শহিদ, সোহাগ, আজাদসহ ৫-৬ জন অস্ত্রের মুখে তাকে তুলে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে মুখে স্কচটেপ বেঁধে দলবেঁধে তাকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার পায়ের রগ কেটে দেয়া ছাড়াও পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা গা ঢাকা দেয়। মেয়েটির গলায়ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

রাতেই নজিবা খাতুন বাড়ি ফিরে এসে পারভিনের খোঁজ করতে শুরু করেন। জানতে পারেন পারভিন বের হওয়ার পর আর ফেরেননি। পরে নজিবা খাতুন তার এক আত্মীয়কে (নিহতের চাচা সেলিম) নিয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে জঙ্গলের মধ্যে পেটে ছুরিবিদ্ধ নগ্ন অবস্থায় পারভিনকে পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় নজিবা খাতুন চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং পারভিনের লাশ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার পারভিনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বৃস্পতিবার দুপুরে তরুণীর লাশ দাফন করা হয়।

নিহত তরুণীর পিতা জহিরুল হক ও তার চাচা মো. সেলিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে তার ভাগ্নেসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে গলা ও পায়ের রগ কেটে খুন করছে। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেনসহ অপর ঘাতকদের আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। আমি ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।

সুধারাম মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পারভিনকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এলাকাবাসী জানান, জহিরুল হকের সঙ্গে একই বাড়ির আনোয়ার হোসেনের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল আগে থেকেই। সে তার বোনের সঙ্গে চট্টগ্রামে গার্মেন্টে কাজ করত। সপ্তাহ তিনেক আগে জহিরুল বাড়িতে নতুন ঘর তুলতে গেলে আনোয়ার হোসেন ও তার ভাগ্নেরা বাধা দেয়। এ নিয়ে তারা নজিবা খাতুনকে পিটিয়ে রক্তাক্তও করে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকে আনোয়ারকে জরিমানাও করা হয়েছে।