নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবী ঐক্যফ্রন্টের

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ২৫ ২০১৮, ১৬:২২

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

আজ মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঐক্যফ্রন্টের জরুরি বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর।

এ সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চারদিন আগে নতুন সিইসি নিয়োগ দিতে রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি করেছেন বলে জানান ফখরুল। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে সিইসির আচরণের সমালোচনা করেন তিনি বলেন, ‘দেশে নির্বাচন নয়, হোলি খেলা হচ্ছে।’

এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজধানীর কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার চৌরাস্তায় নির্বাচনী গণসংযোগের সময় হামলায় আহত বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আজ রাতে ওই হামলার পর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রক্তমাখা পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়েই সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির এই প্রার্থী।

সন্ত্রাসীদের হামলায় রক্তাক্ত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পাশে বসিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রক্তাক্ত। এই হচ্ছে ২০১৮ সালের নির্বাচনের নমুনা। এই নির্লজ্জ্ব, অযোগ্য, অকার্যকর নির্বাচন কমিশনকে জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আজকে তারা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা অবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই। এটা অবিলম্বে চাই। তা না হলে কোনো মতেই এ নির্বাচনের ন্যুনতম পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।’

অবিলম্বে বলতে কী বুঝাচ্ছেন-এমন প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে চাই।’

লিখিত বক্তব্য ফ্রন্টের মুখপাত্র ফখরুল বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে এমন একজন মেরুদণ্ডহীন পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তির নেতৃত্ব থেকে নির্বাচন কমিশনকে মুক্ত করার অনিবার্য প্রয়োজন বলে মনে করি। আমরা অবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করছি এবং যথার্থই একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট দাবি জানাচ্ছি।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে আমাদেরকে বলতে হচ্ছে যে, ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃনন্দের যুক্তিগ্রাহ্য ও প্রমাণ সিদ্ধ বিষয়গুলো অগ্রাহ্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ক্ষমতাসীন দলের নেতার ভাষায় অভিযোগগুলো অস্বীকার করে পক্ষপাত দুষ্ট ও অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দিলে ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ শুধু ক্ষুব্ধ নন, বিস্মিত ও হতাশ হয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এমন অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিতে পারে-তা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। এই ঘটনা স্পষ্টতই প্রমাণ হয়েছে যে, এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাকে ক্ষমতাসীন সরকারের অতি বাধ্যগত একজন কর্মচারির চেয়ে আর বেশি কিছু নন। তার নিকট থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন তো দূরের কথা নিরপেক্ষ আচরণ পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখানে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, হোলি খেলা হচ্ছে। প্রত্যেকটি জায়গায় এভাবে আক্রমণ করে আমাদের নেতাকর্মী-প্রার্থী সকলকে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। মহিলা পর্যন্ত বাদ পড়ছে না।’

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্রের বিবৃতি পড়ে শোনান।

আজ সন্ধ্যা ৭টায় গুলশানে জরুরি বৈঠকে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। মির্জা ফখরুলসহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ শীর্ষ নেতারা।