নির্দেশনা মানছে না হাসপাতাল: বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে রোগী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১০ ২০২০, ২০:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাকালীন সময়ে কোন রোগে আক্রান্ত হওয়া বা মৃত্যু বরণ করা মহাপাপ। সরকারি হোক বা বেসরকারি- যে কোনো হাসপাতালে করোনা সন্দেহভাজন রোগী এলে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানাতে হবে। গত ৩০ এপ্রিল এরকম একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে কোনো মুমূর্ষু রোগী কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বলে যদি সন্দেহ হয়, কোনো কারণে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে রোগীকে অপেক্ষমাণ রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের চারটি নম্বরের যে কোনোটিতে ফোন করে ওই রোগীর চিকিৎসা বা ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে হবে।

সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, করোনার লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোগী ও তাদের স্বজনের কাছ থেকে এমন বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ নির্দেশনা জারি করে। বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই নির্দেশনার পরও হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো ওই নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ছয়টি হাসপাতালে সারাদিন ঘুরেও ভর্তি হতে পারেননি শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রেবেকা সুলতানা চৌধুরী। করোনা ভাইরাস নেই- এমন নথি দেখাতে না পারাসহ নানা অজুহাতে ওই নারীকে কোনো হাসপাতালেই ভর্তি রাখা হয়নি। করোনা পরীক্ষার জন্য সরকারি তিনটি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য বাতায়নের ৩৩৩ নম্বরে স্বজনরা বারবার ফোন দিলেও সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত ৯ ঘণ্টা ধরে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল ৫টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়। স্বজনরা জানান, অসুস্থ হওয়ার পর রোগী নিয়ে তারা বিআরবি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, বারডেম হাসপাতাল, আয়েশা মেমোরিয়াল, যা বর্তমানে ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পরীক্ষার জন্য মুগদা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও গিয়েছিলেন। কোনো হাসপাতালই রোগীকে ভর্তি করেনি। করোনার পরীক্ষাও করাতে পারেননি তারা।

বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার মারা গেছেন কিডনির জটিলতায়, শ্বাসকষ্টে। তার দরকার ছিলো আইসিইউ’র চিকিৎসা। তাকে নিয়ে ঢাকার অন্তত ৮টি হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন তার কন্যা সুস্মিতা আইচ।

সুস্মিতা আইচ কেবল চিকিৎসকই নন, সরকারের পক্ষ থেকে যে হটলাইন নম্বর স্বাস্থ্য সেবা দেয় সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় নিয়মিত ডায়ালাইসিসের পর শ্বাসকষ্টের মধ্যে গৌতম আইচকে ল্যাব এইড হাসপাতাল কন্যার হাতে তুলে দেয়াকেই ‘দায়িত্ব’ মনে করেছে।

সেখান থেকে ডাক্তার সুস্মিতা আইচ গেছেন ইউনাইটেড হাসপাতালে, মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, স্কয়ার হাসপাতালে, আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে, মিরপুর রিজেন্ট হাসপাতাল – কিন্ত কোথাও গৌতম আইচকে ভর্তি করানো যায়নি। যে হাসপাতালে ডাক্তার সুস্মিতা চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সেই আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালেও তাঁর পিতার জায়গা হয়নি।

শেষ পর্যন্ত অসহায়ের মতো বাড়িতে বসেছিলেন। পরিচিত ব্যক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার রাতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালটি করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্যে নির্ধারিত হাসপাতাল। কিন্ত সেখানে অনেক অনুরোধের পরেও তার পরীক্ষা হয়নি।

“যে বেডে তাকে রাখা হয়েছিল কোনো সরকারি ডাক্তার সেখানে যায়নি। তারা আমাকে ওষুধ বুঝিয়ে দেয়, আমিই ওষুধ খাওয়াচ্ছি, আমার ভাই অক্সিজেন দিচ্ছে” – বলেছেন সুস্মিতা। দু’দিন ধরে তার একটা পরীক্ষা করা যায়নি তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কিনা।

শনিবার গৌতম আইচ মারা গেছেন। এমনকি তার মৃত্যুর পরেও তাঁর পরীক্ষা হয়নি। কন্যা, চিকিৎসক অনুরোধ করেছেন এখনও পরীক্ষা করুন। তাও হয়নি। এই হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল।

এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে জারি করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই নির্দেশনা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্নিষ্ট হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, তারা ওই রোগীর চিকিৎসা কিংবা ভর্তির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইনে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা? ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, ওই রোগীকে তাদের হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। রোগীর স্বজনরা হৃদরোগজনিত সমস্যার কথা বলার পর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর আরও দুই চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ইসিজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়। এতে তার হৃদরোগসহ অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা খুঁঁজে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাকে করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে গণ্য করে তাকে নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। এরপরই স্বজনরা রোগী নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইনে জানানোর নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত নন বলে জানান প্রীতি চক্রবর্তী।

হার্ট ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহজাদী ডলী বলেন, ওই রোগী বিআরবি হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতেন। তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে রেফার করা হয়। চিকিৎসকরা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পান, রোগীর কিডনিজনিত সমস্যার পাশাপাশি বহুবিধ রোগ রয়েছে। কিন্তু হার্ট ফাউন্ডেশনে কিডনি ডায়ালাইসিসহ ওইসব রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় ভর্তি করা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার বিষয়ে তারাও অবহিত নন বলে জানান।

বারডেম হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. জাফর আহমেদ লতিফ বলেন, সম্প্রতি করোনা সংক্রমিত এক রোগী তাদের হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। এতে আরও চারজন রোগী, কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। পরে আইসিইউ লকডাউন করে দেওয়া হয়। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, করোনা নেগেটিভ ছাড়া কাউকে ভর্তি করা হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগী ভর্তি সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে ডা. জাফর আহমেদ লতিফ বলেন, শুধু নির্দেশনা দিলেই তো হয় না, সেটি কার্যকরের বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িত থাকে। হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না- এই নির্দেশনা দেওয়ার আগে সব হাসপাতালে মানসম্মত পিপিই ও মাস্ক সরবরাহ করা প্রয়োজন ছিল। আবার রোগীর লক্ষণ-উপসর্গ দেখে চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইনে ফোন করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা নেবেন, এটিই বা কেমন কথা? এমবিবিএস পাস করা একজন চিকিৎসক কি বুঝবেন না রোগীর জন্য কী করতে হবে? বারডেম কেন, কোনো সরকারি হাসপাতাল কি ওই নির্দেশনা মানছে? কারণ, করোনা পজিটিভ রোগীরাও তথ্য লুকিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এটি সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর ঝুঁকি তৈরি করছে। সুতরাং বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শাহ গোলাম নবী তুহিন বলেন, করোনা পরীক্ষার নমুনা নিয়ে তার রেজাল্ট দিতে নূন্যতম ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এ অবস্থায় করোনা সন্দেহভাজন ওই রোগীকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি করাও সঠিক হতো না। কারণ, তিনি করোনা পজিটিভ না হলে হাসপাতালে ভর্তির কারণে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারতেন। তা ছাড়া ওই রোগীর হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। মুগদায় হৃদরোগ সেবার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসকরাও সবাই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত। এ অবস্থায় তাকে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি।

এ ধরনের রোগী হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে পৃথক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ডা. শাহ গোলাম নবী বলেন, করোনা সন্দেহভাজন রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে পৃথক আইসোলেশন হাসপাতাল চালু করা যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে রোগী যেখানে ভর্তি হবে। এরপর পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হলে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে এবং করোনা নেগেটিভ হলে রোগের ধরন অনুযায়ী অন্য হাসপাতালে ভর্তি হবেন। এতে রোগীর হয়রানি কমবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, ওই নির্দেশনার অর্থ এই নয় যে, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতেই হবে। আমরা বলেছি, রোগী করোনা সন্দেহভাজন হলে তাকে একটি কর্নারে বসিয়ে রেখে হটলাইনে ফোন করতে হবে। তারপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে, কোন হাসপাতালে ওই রোগী ভর্তি করা যায়। করোনা সন্দেহভাজন হলে তাকে আইসোলেশন ইউনিট আছে, এমন হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। করোনা মনে না হলে তাকে রোগের ধরন অনুযায়ী অন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। এতে করে রোগীকে ঘোরাঘুরি করে হয়রানি হতে হবে না। সুতরাং ওই নির্দেশনার উদ্দেশ্য স্পষ্ট। যেসব হাসপাতাল নির্দেশনা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

রোগী ভর্তি নিয়ে হয়রানি :হাসপাতালে রোগী ভর্তির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশনা জারির পরপরই ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে করোনা সন্দেহভাজন তিন রোগীর বিষয়ে হটলাইনে যোগাযোগ করা হয়। যোগাযোগকারী ওই কর্মকর্তা জানান, করোনা সন্দেহভাজন তিন রোগী শিশু হাসপাতালে আসার পর তাদের একটি কর্নারে বসিয়ে রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কন্ট্রোল রুমের হটলাইনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, ওই নির্দেশনার বিষয়ে তারা অবহিত নন। এরপর ওই কর্মকর্তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারাও নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত নন বলে জানান। এরপর নিজেরাই পুরান ঢাকার মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও মিরপুর লালকুটি হাসপাতালে যোগাযোগ করে ওই তিন রোগীকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।

করোনার উপসর্গ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভোরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার আসলাম রহমানের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তিনি নমুনা পরীক্ষা করেন। বুধবার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু বৃহস্পতিবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু লক্ষণ-উপসর্গ দেখে করোনা সন্দেহ হওয়ায় ওই হাসপাতাল তাকে ভর্তি করেনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এভাবেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। চিকিৎসা না পেয়ে অন্য রোগে আক্রান্তদের কেউ মারা যাচ্ছেন, কেউ ভোগান্তিতে পড়ছেন।

ভোগান্তি দূর করতে নতুন পরিকল্পনা :রোগীর ভোগান্তি দূর করতে একটি নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশি চিকিৎসক, যারা বিদেশে আছেন, তারা নতুন একটি পদ্ধতির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে আমাদের পাঠিয়েছেন। সেটি হলো- প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে তিনটি জোনে ভাগ করা হবে। কোভিড, নন-কভিড ও সন্দেহভাজন কোভিড জোন। করোনা সন্দেহভাজন রোগীরা সন্দেহভাজন জোনে অবস্থান করবেন। নমুনা পরীক্ষার পর পজিটিভ হলে কোভিড ইউনিটে তাকে ভর্তি করা হবে। আর করোনা নেগেটিভ হলে নন-কোভিড ইউনিটে ভর্তি করা হবে।

মহাপরিচালক জানান, এই পদ্ধতিটি নিয়ে তারা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত পাওয়া গেছে। ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, বিস্তারিত না জেনে মন্তব্য করা কঠিন। প্রতিটি হাসপাতাল তিনটি জোনে ভাগ করা হলেও পরস্পরের সংস্পর্শে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে কী পরিকল্পনা নেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। একসঙ্গে সব চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এভাবে যুক্ত হয়ে চিকিৎসায় নিয়োজিত হলে সংক্রমণ যদি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন কী হবে? তখন তো নূন্যতম চিকিৎসা দেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুতরাং, যা করার ভেবেচিন্তে করতে হবে।

করোনা কালীন সময়ে চিকিৎসা সেবার মাঠ পর্যায়ের কিছু চিত্র:

বাসায় মৃত ৬৪.৭৪ ভাগ চিকিৎসা পাননি, হাসপাতাল থেকে ফিরে মারা যান ১২.৮২ ভাগ, ১.২৮ ভাগকে করোনা আতঙ্কে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি, ৩.৯০ ভাগ মরে পড়ে ছিলেন পথে ঘাটে ।

দেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশেরই চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা হয়নি। ৮ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৮৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৫৬ জন বাসায় অথবা কর্মস্থলে মারা গেছেন। তাদের ৬৪.৭৪ ভাগই একরকম বিনাচিকিৎসা বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আগেই মারা গেছেন। উপসর্গে মৃতদের মধ্যে ১৪.১০ ভাগ স্থানীয় চিকিৎসক, পল্লিচিকিৎসক, হোমিওপ্যাথিক, কবিরাজ এমনকি তান্ত্রিকের কাছে যান। ১২.৮২ ভাগ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান এবং সেখান থেকে চিকিৎসা-পরামর্শ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর তাদের মৃত্যু হয়। ৭.০৫ ভাগ হোম বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে মৃত্যুবরণ করেন। আর ১.২৮ ভাগ একাধিক হাসপাতালে গেছেন, তবে করোনা আতঙ্কে তাদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে। ৩.৯০ ভাগ রাস্তার ধারে, মসজিদে, বাজারে, উপকূলে, চা বাগানে, বাসার সামনে বা হাসপাতালের বাইরে মরে পড়ে ছিলেন।’

“কোভিড-১৯ উপসর্গে মৃত্যুসমূহ ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই ফুটে উঠেছে।