নিজের সম্পর্কে যা যা প্রকাশ করলো বর্ণবাদী খুনি ট্যারেন্ট

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ১৬ ২০১৯, ১৯:৫৬

আবির আবরার:
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে গুলি চালিয়ে প্রার্থনারত মানুষদের হত্যাকারী ‘উগ্র ডানপন্থি’ ব্রেন্টন ট্যারেন্ট একজন ‘চরম মুসলিমবিরোধী’ ব্যক্তি। আদালতে কড়া বাঁধা হাতেও বর্ণবাদের প্রতীক দেখালো নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের খ্রিস্টান জঙ্গী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট ৷

শুক্রবার দুটি মসজিদে গুলি চালিয়ে ৪৯জন মানুষ হত্যার অভিযোগে সন্ত্রাসী ট্যারেন্টকে আদালতে নিয়ে যায় দুজন পুলিশ সদস্য ৷ এসময় তার দেহে ছিল বন্দিদের পোশাক, হাতকড়ায় বাঁধা ছিল হাত।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট দেখিয়েছে, হাতকড়ার মধ্যে আঙুল দিয়ে ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের’ বর্ণবাদী প্রতীক দেখাচ্ছিলেন ট্যারেন্ট।

মানুষের মধ্যে শেতাঙ্গরা শ্রেষ্ঠ- এটা যারা মনে করেন, তারা আঙুলের মাধ্যমে বিশেষ চিহ্ন তৈরি করে প্রতীক হিসেবে তার প্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন।

এক্ষেত্রে বৃদ্ধা ও তর্জনি আঙুল বৃত্তাকারে একসঙ্গে যুক্ত করলে তা ‘P’ এর আকৃতি নেয়, যা দিয়ে Power বা শক্তি বোঝানো হয়। আর বাকি তিনটি আঙুল তখন ‘W’ এর রূপ নেয়, যা দিয়ে বোঝানো হয় White বা সাদা।

২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় সন্ত্রাসী ট্যারেন্ট বন্দি হওয়ার পরও তার বর্ণবাদী মনোভাব এভাবে তুলে ধরেন।

শুক্রবার আল নূর মসজিদের দিকে যাওয়ার পথে তার গাড়িতে যে গান বাজছিল তা থেকেও তার মধ্যে থাকা উগ্র ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদ এবং মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। হামলার আগে ট্যারেন্টের গাড়িতে বাজছিল যুদ্ধাপরাধী কারাদজিচের স্তুতিগাথা ৷

হেলমেটে থাকা ক্যামেরার মাধ্যমে ট্যারেন্ট আল নূর মসজিদে হামলা করতে যাওয়া থেকে শুরু করে পুরো হামলা ফেইসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন।

১৭ মিনিটের ওই ভিডিওতে ট্যারেন্ট যখন গাড়ি চালিয়ে আল নূর মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন তখন তার গাড়িতে একটি সার্বীয় লোকগান বাজছিল। ওই গানে সাবেক বসনীয় সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচ ও তার সেনাদের প্রশংসা করা হচ্ছিল। সেইসঙ্গে গানের কথায় বসনিয়া যুদ্ধের সময় ক্রোয়েশীয় ও বসনীয় মুসলমানের অসম্মান করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাক্যও ছিল।

নব্বইয়ের দশকে বসনীয় যুদ্ধের সময় প্রায় আট হাজার মুসলমান পুরুষ ও বালককে হত্যার অভিযোগ দোষী সাব্যস্ত হন কারাদজিচ; যা স্রেব্রেনিৎসার গণহত্যার নামে পরিচিত।

১৯৯৫ এর ১১ জুলাই কারাদজিচের পরিকল্পনাতেই বসনীয় সার্ব সেনাবাহিনী স্রেব্রেনিৎসার শহরে ওই হত্যাযজ্ঞ চালায়।

হগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সাবেক বসনীয় সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচ।

২০১৬ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে কারাদজিচকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

বসনিয়ার যুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বসনীয় মুসলমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মূল ভুখণ্ডে এত বড় হত্যাযজ্ঞ আর ঘটেনি।

আল নূর মসজিদে হামলার পর ট্যারেন্ট নিজের গাড়িতে ফিরে আসেন; তখন তার গাড়িতে বিকট শব্দে ইংরেজি রক ব্যান্ড ‘দ্য ক্রেজি ওয়ার্ল্ড অব আর্থার ব্রাউন’র ‘ফায়ার’ গানটি বাজছিল.. ‘আই অ্যাম দ্য গড অব হেলফায়ার’…।

হত্যাযজ্ঞের পুরো ঘটনা ফেইসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন ট্যারেন্টন, ইন্টারনেটে ছড়িয়েছেন বর্ণবাদী, অভিবাসী বিদ্বেষী, উগ্রপন্থি বার্তা।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলা চালানোর আগে ট্যারেন্ট তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ৭৩ পৃষ্ঠার একটি কথিত ‘ম্যানিফেস্টো’ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি নিজেকে বর্ণনা করেছেন ভাষায়, সংস্কৃতিতে, রাজনৈতিক বিশ্বাস আর দর্শনে, আত্মপরিচয়ে এবং বংশপরিচয়ে একজন ইউরোপীয় হিসেবে।

ট্যারেন্ট তার তথাকথিত ‘ম্যানিফেস্টোতে’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

হামলার উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে নিজের অভিবাসনবিরোধী ও মুসলিমবিরোধী অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন ট্যারেন্ট। এক জায়গায় তিনি নিজেকে ‘এথনোন্যাশনালিস্ট এবং ফ্যাসিস্ট’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।