নফল হজ্ব না করে সেই টাকা গরিবদের দান করা উত্তম : আল্লামা তাকি উসমানী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ২৮ ২০১৯, ১৯:৪১

আল্লামা তাকি উসমানী

হজ্ব ফরজ হওয়ার পর প্রথম বছরেই তা আদায় করা উচিত ৷ অনেকে হজ্ব ফরজ হওয়ার পর বিভিন্ন টাল বাহানা করে দেরি করে থাকে। মেয়ের বিয়ে দিয়ে যাব। বাড়ি করে যাব এভাবে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করায়। কিন্তু মেয়ের বিয়ের আগ পর্যন্ত আপনি জীবিত থাকবেন, বাড়ি করার আগ পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন এর নিশ্চয়তা আপনাকে কে দেবে?

অনেকে মনে করে হজ্ব তো বয়স্ক লোকদের কাজ। অনেকে অপেক্ষায় থাকে, বয়স পড়ে এলে হজ্বে যাবে। তারপর ভালো হয়ে চলবে। এই চিন্তা একেবারে ভুল। মৃত্যু থেকে মানুষ কিভাবে নিশ্চিন্ত হতে পারে?

আসল কথা, হজ্ব জওয়ান লোকদের ইবাদত। হজ্বের প্রতিটি কাজ অনেক কষ্টের কাজ। যদি বয়স পড়ে যায়, তাহলে হজ্বের কাজগুলো সুন্দরভাবে করা যায় না।

আমাদের অভিজ্ঞতা, আরও বহু মানুষের অভিজ্ঞতা হল, হজ্বের ক্ষেত্রে অর্থ খরচ করে কেউ অভাবে পড়েনি। হজ্ব করার কারণে কেউ দারিদ্র্যের শিকার হয় না।

বয়ানে হযরত নফল হজ্বের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপর উৎসাহিত করেন। হযরত বলেন, হজ্ব জীবনে একবার ফরজ হয়। এ ফরজ আদায়ের পর দ্বিতীয়বার হজ্ব করা ফরজ থাকে না, নফল হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক বছর হজ্বে যাওয়ার উপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বরং প্রত্যেক বছর গেলে যেহেতু ভিড় বেশী হয় এবং এতে অন্য আরও যারা জীবনের প্রথমবার হজ্বে যাচ্ছেন তাদের কষ্ট হয়, তাদের কষ্ট লাঘবের নিয়তে কেউ যদি প্রত্যেক বছর হজ্ব করা থেকে বিরত থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ আরও বেশী ছওয়াব পাওয়া যাবে।

তাছাড়া যে সকল মুসলিম বিত্তশালী এমন দেশে বসবাস করেন যেখানে মানুষ অর্থের অভাবে কষ্ট করে, ঠিকমত খেতে পায় না, চিকিৎসা পায় না, লক্ষ লক্ষ লোক বেকার পড়ে থাকে, সে সকল দেশের বিত্তশালীদের জন্যে প্রতি বছর নফল হজ্বের চেয়ে বেশী সওয়াবের কাজ মানুষকে সহযোগিতা করা। গৃহহীনদের ঘরের ব্যবস্থা করা। ক্ষুধার্তদের খাবারের ব্যবস্থা করা। বেকারদের কাজের ব্যবস্থা করা। গরীবদের উপকার হয় এমন কাজ করা।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. প্রতি বছর হজ্ব করতেন। একবার আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. হজ্বে যাচ্ছিলেন। পথে দেখতে পেলেন, আবর্জনার ভাগাড় থেকে একটা বাচ্চা একটা মরা মুরগি নিয়ে যাচ্ছে। শিশুটি বলল, তাদের ঘরে খাওয়ার কিছু নেই। তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁর এবং তার সঙ্গীদের হজ্বের খরচ দিয়ে ওই এলাকার লোকদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিলেন।

একদিকে হজ্বের এত সওয়াব, নফল হজ্বেরও অনেক সওয়াব। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি প্রতি বছর নফল হজ্ব করার পরিবর্তে সেই খরচ দিয়ে অভাবীদের অভাব দূর করার চেষ্টা করা হয় তাহলে কত মানুষের কত কষ্ট দূর হতে পারে। এসব বিষয়ে আমাদেরকে ভারসাম্য ও মধ্যপন্থার পরিচয় দিতে হবে। এটাই শরীয়তের চাহিদা। ইসলাম প্রতিটি জিনিসকে তার জায়গা মত রাখতে চায়।

নফল হজ্বের বিষয়ে আমি যে কথা বললাম, কিছু লোক ফরজ হজ্বের বিষয়ে এ কথা বলে এবং আপত্তি করে যে, কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। এসব টাকা যদি মুসলিম বিশ্বের দরিদ্রদের মাঝে খরচ করা হয়, তাহলে কত মানুষের কষ্ট লাঘব হয়।

তাদের এ কথা চরম সীমালঙ্ঘন। জীবনে একবার ফরজ হওয়া হজ্বের ক্ষেত্রে এ কথা বলা শরীয়তের খেলাফ। হ্যাঁ, দরিদ্র দেশের বিত্তশালীদের জন্যে প্রত্যেক বছর নফল হজ্ব করার চেয়ে মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করার ছওয়াব আরও বেশী।

  • গত ১৯ জুলাই ২০১৯ করাচী বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার পূর্বে বয়ান করেন শায়খুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তাকি উসমানী। বয়ানে তিনি
    হজ্ব ফরজ হওয়ার পর প্রথম বছরেই তা আদায় করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

অনুবাদ: এনাম হাসান জুনাইদ
সম্পাদনা: ইলিয়াস সারোয়ার