দ্য স্ট্রাগল উইদিন ইসলাম

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ১০ ২০১৯, ০৯:৩৪

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

মুসলিম উম্মাহ আজ খেলাফত বিহীন। ৫৭ টি জাতি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে আছে এই উম্মাহ। বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্র তার একটি।

বাংলাদেশের নাগরিকবৃন্দ মোটা দাগে সেক্যুলার ও মুসলিম গোষ্ঠীতে বিভক্ত। সেক্যুলার গোষ্ঠীটি যেমন সমসত্তা বিশিষ্ট বা হোমোজেনাস নয়, মুসলিম গোষ্ঠীটিও তেমনিভাবে সমসত্তা বিশিষ্ট বা হোমোজেনাস নয়, বরঞ্চ অসমসত্তা বিশিষ্ট বা হেটারোজেনাস। সেক্যুলার গোষ্ঠীটিতে রয়েছে বিভিন্ন শেডের বা বর্ণের উপস্থিতি। যেমন এদের একটি অংশ মনে করে সেক্যুলার হওয়া মানে হল জনপরিসরে কোনো বিশেষ ধর্মের উপস্থিতি না রেখে সব ধর্মের সমান উপস্থিতি থাকবে। এরা সেক্যুলারিজমকে অনুবাদ করেছে ধর্মনিরপেক্ষতা বলে। কিন্তু সেক্যুলারদের আরেকটি অংশ আছে যারা মনে করে সেক্যুলার হওয়া মানে ধর্মকে জনপরিসর থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ করে ফেলা এবং আলটিমেটলি ইহজাগতিকতার চর্চার দিকে এগিয়ে যাওয়া। এদের চরমপন্থি অংশটি এমনকি ইহজাগতিকতা থেকে নাস্তিক্যবাদের দিকেও এগিয়ে যেতে উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে মুসলিম গোষ্ঠীটি মোটাদাগে তিনটি উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এই দেশে। যেমন একটি মুসলিম উপগোষ্ঠী নিজেদের আইডেনটিটি নির্মাণে ইসলামের যে বয়ানটিকে সামনে নিয়ে আসে তা সুফি বয়ান বলে পরিচিতি পেয়েছে। এই বয়ান পীর মুর্শিদের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনার উপরে ফোকাস করে। ইসলামের শরিয়া ভিত্তিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রকাশ এই সুফি বয়ানে প্রায় অনুপস্থিত বলা যায়। আর মুসলিম যে উপগোষ্ঠীটি মাদ্রাসা ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষার ভেতর দিয়ে একটি প্রশিক্ষিত উলেমা শ্রেণি তৈরি করে জাতীয় দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে করে তারা কওমি ধারা হিশাবে পরিচিতি পেয়েছে। এই ধারাটি মূলত ধর্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক স্তরেই নিজেদেরকে আপাতত সীমিত রেখেছে, মোটা দাগে রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রিক কোনো উচ্চাভিলাষ এদের আছে বলে এখনো মনে হয় না। তবে তৃতীয় আরেকটি মুসলিম উপগোষ্ঠী রয়ে গেছে যেটি মূলত আধুনিক শিক্ষার অঙ্গণ থেকে গড়ে উঠলেও পর্যাপ্ত সম্পূরক ধর্মীয় শিক্ষা ও দীক্ষার সমন্বয়ে একটি সর্বাত্মকবাদী ও সম্পূর্ণ মতাদর্শ হিসেবে এর অনুসারীদের কাছে একটি জীবনাদর্শ ও বিশ্ববীক্ষা উপহার দেয়। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বরঞ্চ এর রয়েছে শরীয়া ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রুপকল্প ও কর্মসূচি।

আপনি যখন বাংলাদেশে আপনার একটি অবস্থান তৈরি করতে চাইবেন তখন এই বিভিন্ন ডিসকোর্সগুলি আপনার সামনে চয়েস হিসেবে হাজির হবে। সেইসাথে আপনি এটাও খেয়াল করবেন যে, সেক্যুলার ও মুসলিম ডিসকোর্সের একটি নিরন্তর লড়াই এখানে চলছে বেশ কিছু কাল ধরে। এটি এদেশের প্রধান মতাদর্শিক লড়াই। তবে এটা ভাবলে ভুল হবে যে, এই ডিসকোর্সগুলির মধ্যে কোনো ইনটারনাল কনফ্লিক্ট বা দ্বন্দ্ব নেই। সেক্যুলার উপগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যেমন একটি অভ্যন্তরীণ লড়াই আছে — ধর্মনিরপেক্ষ বয়ান ও ইহজাগতিক/নাস্তিক বয়ানের মধ্যে, তেমনি মুসলিম উপগোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও একটি পারস্পরিক প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহজেই লক্ষণীয়। সুফি, কওমি সুন্নী ও সিয়াসি সুন্নী — মোটা দাগে এই তিন ধারার অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পাচ্ছে বাংলাদেশের স্ট্রাগল উইদিন ইসলাম।

এই উপগোষ্ঠীগুলো আলাদা আলাদাভাবে হয়তো নিজেকে অন্যগুলোর উপরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে প্রবলতম হয়ে ঊঠতে চায়। তাতে সমাজে সংঘর্ষ ও হিংসা-বিদ্বেষ দেখা দেয় প্রায়শই। সমাজ পর্যবেক্ষক হিশাবে এটি খুবই একটি ইনটারেস্টিং প্রপঞ্চ যে কিভাবে এই উপগোষ্ঠীগুলো এদের মধ্যে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তি করে। সেটা কি সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট — এই নির্মম ও নিষ্ঠুর প্রাকৃতিক নিয়মে সাধিত হবে? না কি কোনো একটি বহুত্ববাদী ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানমূলক জনপরিসরে সবার সমান্তরাল উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে? সেটা সময়-ই বলে দেবে।