দূষণের কবলে বেহাল জুড়ী নদী!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ০৬ ২০২০, ২২:১৭

জহিরুল ইসলাম সরকার, জুড়ী প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী নদীতে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। দূষিত হচ্ছে পানি। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচি। নদী যেন এখন ময়লার ভাগাড়। নদীর তীরের হাট-বাজার ও মানববর্জ্য প্রকাশ্যেই ফেলা হচ্ছে নদীতে। ক্লিনিকের বর্জ্য দেদারসে ফেলছে নদীতে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা জুড়ী নদীর কামিনীগঞ্জ বাজারের পার্শ্ববর্তী ও কন্টিনালা ব্রীজের নদীর অংশবিশেষ এলাকা।

স্থানীয়রা জানান, হাট-বাজারের উচ্ছিষ্ঠ ময়লা-আবর্জনা, হোটেলের যাবতীয় পঁচা, বাসি খাবার সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদী রূপ নিয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। গভীর রাতে এসব ময়লা নদীতে ফেলা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে নদীর পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে নদীর জীব বৈচিত্র্য। এসব ময়লার কারণে নদীর পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত পানির জন্য আশেপাশের মানুষ অতিষ্ঠ।

সরকার জুড়ী নদী রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীর পরিবেশ রক্ষায় কাজ করলেও নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলার বিষয়ে কারো কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এতে এ নদীটির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে ৩০ নভেম্বর উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এক সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এম.পি, জুড়ী নদীর পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেন।

জুড়ী উপজেলা ফাউন্ডেশনের সভাপতি কামরুল হোসেন পলাশ বলেন, এক সময় জুড়ী নদীর পানিতে মানুষ গোসল করতেন হরহামেশা এবং অনেকে আবার পানি ফুটিয়ে পান করতেন। এখন পান করা তো দূরের কথা পানি দূষিত হওয়ার ফলে জুড়ী নদীর পানি মানুষের কোন কাজে আসছে না।নদী দূষণ রোধে আমাদের ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

জাফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য ও বেলাগাঁও গ্রামের কন্টিনালার বাসিন্দা কামরুজ্জামান বলেন, জুড়ী নদীর কন্টিনালা ব্রীজ থেকে প্রকাশ্যে ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলার কারণে নদী এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।তাই নদী রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন।

সরেজমিনে, জুড়ী নদীর কামিনীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন জায়গায় নদীর অংশে ময়লা আবর্জনা স্তুপ দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে জুড়ী নদীর কন্টিনালা ব্রীজ থেকে প্রতিরাতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন হোটেল ও হাসপাতালের বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে।জুড়ী নদীর কন্টিনালা নামক ব্রীজের নিচে সরেজমিনে গিয়ে হোটেলের পঁচা-বাসি খাবার, ব্যবহার করা পলিথিন, দইয়ের প্লাস্টিকের পাত্র, মিষ্টির কার্টুন,ডিমের খোসা, প্লাস্টিক বোতল সহ বিভিন্ন বর্জ্য নদীর মাঝিমাঝি পড়ে থাকতে দেখা যায়।কন্টিনালা ব্রীজ থেকে জুড়ী নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানালেও এর প্রতিকারে কেউ এগিয়ে আসছে না।

জুড়ী নদীর পানি সরাসরি এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে গিয়ে পড়ে।এই নদীতে অবাদে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। এখনই যদি জুড়ী নদীকে ময়লা-আবর্জনার হাত থেকে রক্ষা করা না যায় তাহলে জুড়ী নদী সহ বাংলাদেশের প্রাণ হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম তারা মিয়া বলেন, প্রয়োজনে জুড়ী উপজেলার সুশীল সমাজ নদী বাঁচাও আন্দোলনের মাধ্যমে নদীরক্ষার জন্য নানা সচেতনমূলক কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে। নদীমাতৃক এ দেশ রক্ষায় নদীরক্ষার বিকল্প নাই।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস বলেন, কোন অবস্থাতেই ময়লা নদীতে ফেলতে দেয়া হবে না। নদী রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন মহোদয়ের নির্দেশনা রয়েছে।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন বলেন, নদীরক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।