তা লে বা নের ভবিষ্যৎ-সরকার: বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কী ভূমিকা হতে পারে?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ১৯ ২০২১, ১৫:৪২

আবুল কালাম আজাদ: আশা করা যায় আফগানে ছাত্ররা মোটামুটি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকবে। তো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলো তাদের সমর্থন দেবে বা স্বীকৃতি দেবে?

১. আমেরিকা স্বীকৃতি দেবে; তবে একটু দেরিতে। কিন্তু শত্রুতা ছাড়বে না। চেষ্টা করবে তাদের নেতাদের হত্যা করতে, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে। আর প্রোপাগান্ডা-মেশিন সমানতালে চালাবে, যাতে ইসলামকে আরও বেশি বিতর্কিত করা যায়। কারণ, তাদের উদ্দেশ্য ছাত্ররা নয়; উদ্দেশ্য ইসলাম।

২. ইউরোপীয়রা সহজে স্বীকৃতি দেবে না। তবে কোনো কোনো রাষ্ট্র দিতে পারে। এমনকি আমেরিকা স্বীকৃতি দিলেও তাদের কিছু রাষ্ট্র সহজে স্বীকৃতি দেবে না। যেমন, ফ্রান্স।

৩. চীন, রাশিয়া স্বীকৃতি দিতে বাধ্য। সঙ্গে টেনে আনবে তাদের ব্লকের আরও কিছু রাষ্ট্রকে। কারণ অনেক। সংক্ষেপে বলা যাবে না। তবে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, ছাত্ররা যদি চীন-রাশিয়ার ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করে, তাদের করার কিছুই নেই। তাই বাধ্য হয়ে তারা সুসম্পর্ক রেখে কাজ আদায় করতে চাইবে। বিনিয়োগের ব্যাপার তো আছেই।

৪. ভারতের স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যেই দেশের ৮০% মানুষের টয়লেটব্যবস্থা নেই, সেই দেশ আফগানে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই বিনিয়োগ নিয়ে তারা এখন উভয় সংকটে। তো বিনিয়োগ বাঁচাতে, আফগানে পাকিস্তানের প্রভাব যতটুকু সম্ভব কমিয়ে রাখতে, কাশমিরকে নিরাপদ রাখতে ছাত্রদের সঙ্গে তাদের মিশতেই হবে। আর যদি না মিশে, ছাত্রদের এক পয়সারও ক্ষতি নেই। এটা যেমন ছাত্ররা বুঝে, ভারতও জানে। ছাত্ররা যদি কাশমিরের আন্দোলনে বাতাস দেয়, মোদির পাল ছিঁড়ে যাবে।

৫. পাকিস্তান, তুরস্ক, আজারবাইজান, বাংলাদেশসহ আরও কিছু মুসলিম রাষ্ট্র পাশাপাশি সময়ে স্বীকৃতি দেবে। এই স্বীকৃতির পেছনে যেমন উম্মাহর চিন্তা কাজ করবে, তেমনি আরও অনেক হিসাবনিকাশ কাজ করবে। তুরস্ক এই অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াতে চায়। পাকিস্তান নিজেদের ওপর আপতিত দীর্ঘদিনের ইস্যু শরণার্থীসহ আরও অনেক বিষয়ে একটু সোজা হয়ে দাঁড়াতে চায়। আর ভারতকে কোণঠাসা করে রাখতে পাকিস্তান এবং তুরস্ক যা করার করবেই। এটা যেমন বিগত দিনগুলোতে করে এসেছে, আগামীতেও করবে। তুরস্ক আধুনিক কিছু প্রযুক্তিও ছাত্রদের সরবরাহ করবে, যেভাবে আজারবাইজানকে করেছিল।

৬. ইরানের ঘাড়ে ছাত্ররা নিশ্বাস ফেলছে। ছাত্রদের এই নিশ্বাসের কারণে ইরান তার দেশের অভ্যন্তরে সুন্নিবিরোধী দমনপীড়ন কিছুটা হলেও এখন কমাবে। আর তারা চাইলেও এখন ভারতকে পাশে পাচ্ছে না। আবার ভারতের মতো প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক রাখবে, এই তাকিয়াগোষ্ঠী এত বোকা নয়। অর্থনৈতিকভাবে ইরান একেবারে ভঙ্গুর রাষ্ট্র। আবার অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা চরম মাত্রায় বিরাজ করছে দেশটিতে। এই অবস্থায় তারা চাইবে না ছাত্ররা তাদের ওপর খেপে গিয়ে নতুন কোনো ফ্রন্টে তাদের টেনে আনুক। আর ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রদের পতনের সময় তাদের ভূমিকা নিশ্চয় ছাত্ররা ভুলেনি; এটা তারাও জানে। সুতরাং ওই ভুল পথে শিয়া ইরানিরা আর পা বাড়াবে বলে মনে হয় না।

উপসংহার : আফগানের ছাত্ররা তুরস্ক, পাকিস্তান, আজারবাইজানের সহযোগিতায় শিগগিরই একটা শক্তিশালী নিয়মিত সামরিক বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে। প্রয়োজনীয় সব অস্ত্রশস্ত্র জোগান দেবে এরাই। প্রশিক্ষণও এই রাষ্ট্রগুলো দেবে। অর্থনৈতিক জোগান দেবে চীন-রাশিয়া। আধুনিক কিছু অস্ত্রশস্ত্র চীন দেবে। এমনকি চীন প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটাবে। রাশিয়া, চীন আর কাতার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূর হবে।

এখানে কাতার ছাড়া আরবের আর কোনো রাষ্ট্রের আলোচনা করিনি। কারণ, খুব শিগগিরই তারা কেউ স্বীকৃতি দেবে বলে মনে হয় না। তবে আরব থেকে প্রচুর দান আসবে। ভেতরে ভেতরে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু বিনিয়োগও হতে পারে।

যাইহোক, ছাত্র এবং বিশ্বের নানা শক্তি, গোষ্ঠী আর রাষ্ট্রের বিগত কয়েক বছরের কার্যক্রমের ওপর পর্যালোচনা করে আমি এই ফল বের করেছি। এটা আমার একান্ত পর্যালোচনা। একমত হওয়া জরুরি না।

১৯ আগস্ট ২০২১