তাবলীগ সমস্যার স্থায়ী সমাধান কোন পথে?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ১০ ২০১৯, ০৯:১৭

ইলিয়াস সারোয়ার: বেশ কয়েক বছর যাবত তাবলীগ জামাতে চলছে উদ্বেগজনক অস্থিরতা ৷ আজন্ম শান্তিপ্রিয় এই জামাতে দেখা দিয়েছে চরম অশান্তি ৷ বিতর্কিত এক ব্যক্তিকে আমির মানা না মানা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে দুটি গ্রুপ ৷ এক পক্ষে দ্বীনদরদী সচেতন উলামায়ে কেরাম আর অন্য পক্ষে দ্বীনের দাঈ খ্যাত জেনারেল শিক্ষিত তাবলীগী সাথী ৷ এই দুই দলের মতপার্থক্য একপর্যায়ে রূপ নিয়েছে সহিংসতায় ৷ যার সর্বশেষ সাক্ষী ১লা ডিসেম্বর ‘১৮ টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ দখলের হামলায় ৩জন নিহত ও ৫হাজার উলামা, তুলাবা ও তাবলীগী সাথি আহত হওয়ার ঘটনা ৷

অভিজ্ঞমহল মনে করেন, এ সংকট সহজেই কাটার নয় ৷ কেননা তাবলীগী সাথিদের নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের অনেকের আচরণই এখন আর তাবলীগী ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় ৷ পূর্বের ন্যায় আলেমদের সম্মান করতে দেখা যায় না তাদের ৷ নিজেদের মতের সঙ্গে না মিললেই পাকিস্তানপন্থী, স্বাধীনতাবিরোধী বলে আলেমগণের অযৌক্তিক সমালোচনা করতে দেখা যায় মিডিয়াতেও ৷ ‘মানার মধ্যেই কামিয়াবি’ বাণীটির আমলকে গণ্ডিবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে ৷ আলেমগণের দিকনির্দেশনা না মেনে ইঞ্জিনিয়ারদের কথাকেই মানার প্রবণতা তৈরি হয়েছে ৷ আলেমগণের প্রতি চাপা বিদ্বেষ ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়েও ৷

অথচ মান্য করা চাই অালেমগণের কথাই ৷ কেননা ইসলামের চাহিদা পরিপূর্ণরূপে তাঁরাই বুঝেন ৷ তাঁরা দিন-রাত কুরআন-সুন্নাহ অধ্যয়নে জীবন কাটান ৷ শরীয়ত কী চায় তা তাঁদের চেয়ে ভাল আর কে বুঝতে পারে! এটা কি সাধারণ তাবলীগী সাথিরা বুঝেন না? তবু কেন তৈরি হলো আলেমগণের প্রতি বৈরি মনোভাব? কীভাবে দূর করা যায় এ সংকট?

এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে আলেমগণের উদ্যোগেই ৷ সাধারণ তাবলীগী সাথিদের সঙ্গে জোড়-মিল-মুহাব্বত তৈরি করতে হবে ৷ মেলামেশা বৃদ্ধি করতে হবে তাদের সঙ্গে ৷ জুড়তে হবে তাবলীগের রুটিন কাজের সঙ্গেও ৷

এছাড়াও তাবলীগ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাইলে সবচে’ গুরুত্ত্বপূর্ণ যে উদ্যোগটি নেওয়া প্রয়োজন তা হলো, দেশের সব উচ্চ ও মাধ্যমিক মাদরাসার অন্তত ১জন শিক্ষক সবসময় চিল্লায় থাকতে হবে ৷ একজন চিল্লা দিয়ে এলে অন্যজন চিল্লার জন্য বের হয়ে যাবে ৷ চলে যাওয়া শিক্ষকের দায়িত্ব অন্য শিক্ষকগণ পালন করবে ৷ আর চিল্লার খরচ ও শিক্ষের মাসিক বেতন মাদরাসা বহন করবে ৷

কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে এ কাজটি প্রথমে বেফাকের আহ্বানে বাস্তবায়িত হতে পারে ৷ অন্য বোর্ডগুলোও পারে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে ৷ এতে কাজটি বেগবান ও ফলপ্রসু হবে ৷

এমন কার্যক্রম চালু হলে সারা বছর জুড়ে কাকরাইল থেকে বের হওয়া প্রায় সব জামাত আলেমদের সোহবত পাবে ৷ আলেমদের নিয়মিত পেলে আশা করি তারা পথ হারাবে না ৷ তাবলীগ চলবে নবীগণের ওয়ারিশ আলেমগণের তত্ত্বাবধানে ৷

লেখক: শিক্ষক, কবি ও কলামিস্ট ৷