তাকওয়া অর্জনে পাপাচারমুক্ত সিয়াম সাধনা আবশ্যক

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ০২ ২০২০, ২০:৩০

।। মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী ।।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছে রোজা, যেমন বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আলবাকারা : ১৮৩)

সুবহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ বলা হয়। শব্দ দু’টি সমার্থক। ‘সিয়াম’ বহুবচন, ‘সাওম’ একবচন। কোরআন কারিমে উভয় শব্দের ব্যবহার রয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ‘সিয়াম’ শব্দ (বহুবচন) চয়ন করেছেন। মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন- পানাহার এবং স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি হাত, পা, চক্ষু কান, নাক, জিহ্বা, ঠোট, অন্তর ও মস্তিষ্ক তথা শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে যাবতীয় পাপকাজ থেকে মুক্ত রেখে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে, তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন করতে হবে। এ অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বুঝানোর লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালা ‘সিয়াম’ শব্দ (বহুবচন) ব্যবহার করেছেন।

রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনও প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি)

চিন্তা করুন, রোজাদার অবস্থায় যে মিথ্যা বলে ও মন্দ কাজ করে, তাকে কত কঠোর ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।

রাসুল সা. আরও বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সাওম আমার জন্য; আমি নিজে এর প্রতিদান দেবো। সাওম ঢালস্বরূপ, তোমাদের কেউ যেন সাওম পালনকালে অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে, যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি সায়িম (রোজাদার)। (বুখারি)

দেখুন, হাদীসে রোজাকে ঢাল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ঢাল বলা হয়, যোদ্ধা নিজের সুরক্ষার জন্য যা ব্যবহার করে। হাদীস থেকে একথা স্পষ্ট যে, রোজাদারের জন্য রোজা হতে হবে ঢালস্বরূপ, তথা সুরক্ষাকারী; যা তাকে সকল কদার্যতা ও গোনাহ’র কাজ থেকে সুরক্ষা দেবে। পরবর্তী অংশে শুধুমাত্র ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়নি বরং আরও অগ্রসর হয়ে বলা হয়েছে, কেউ গালি দিলে বা ঝগড়া করতে উদ্যত হলে, রোজাদার নিজেকে সংযত রাখবে এবং বলবে, আমি রোজাদার।

আয়াত এবং হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, শুধু উপবাস নয় বরং অন্তর ও দেহের সকল ক্লেদ-কলুষতা এবং পাপাচারমুক্ত সিয়াম সাধনাই রোজাদার ব্যক্তিকে তাকওয়া অর্জনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

বস্তুত, মহান আল্লাহ আমাদের জন্য সিয়াম সাধনায় দু’টি বৈধ বিষয়কে সাময়িকভাবে অবৈধ করে কাজ দু’টি থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি, তাঁর সকল বিধিনিষেধ মেনে চলার তথা- তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। যাতে করে এ আলোকে আমরা আমাদের সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করি এবং নিজেকে একজন সফল মুমিন হিসেবে গড়ে তুলি।