ঢাকায় ওলামা ও তাবলিগি সাথীদের জোড় : গৃহীত ছয় সিদ্ধান্ত

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ২৮ ২০১৮, ১১:১৬

একুশে জার্নাল ডেস্কঃ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগি সাথীদের ঐতিহাসিক জোড় অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া জোড়ে সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক আলেম উলামা ও তাবলিগি সাথী উপস্থিত হন। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারি মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফি দা. বা.।

এর আগে গতকাল রাত থেকেই সারাদেশ থেকে উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগের সাথীরা মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় আসতে শুরু করেন। আজ (শনিবার) ভোর না হতেই মোহাম্মদপুরের রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। সকাল সাতটার আগেই ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। তারপর রাস্তার আশপাশে বসতে শুরু করেন তাবলিগি সাথীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকলে রাস্তাগুলো অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। তাবলিগি লোকজন রাস্তায় মাঝপথেই বসতে শুরু করেন। দশটা-এগারোটার সময় দেখা যায়— মাঠের চারপাশে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত কেবল মানুষ আর মানুষ। সফেদ আল্লাহওয়ালাদের মজমা। আয়োজন কমিটি মাইক ব্যবস্থা করেছে চারপাশের এককিলো পর্যন্ত। প্রতিটি পয়েন্টে প্রসাশনের লোকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। আগত লোকদের মাঝে স্থানীয় এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কমিশনার তারেকুজ্জামান রাজিবের পক্ষ থেকে ব্যাপক পরিমাণ খাবার পানি বিতরণ করা হয়।

জোড়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আল্লামা আশরাফ আলী দা. বা.। মাওলানা মাহফুজুল হকের পরিচালনায় সারাদেশ থেকে আসা শীর্ষ আলেম ও তাবলিগের সাথীরা আলোচনা করেন। শেষ দিকে আজকের জোড় থেকে ছয়টি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মাওলানা মাহফুজুল হক দা. বা.।

সিদ্ধান্তগুলো হলো-
১. জমহুর উলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন, তিনটি মৌলিক কারণে— (ক) কোরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, (খ) তাবলিগের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তাবলিগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে— যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয়প্রতিপন্ন করা, (গ) পূর্ববর্তী তিন হজরতজি (হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ.) এর উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।

২. মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর রেখে যাওয়া শুরায়ী নেযামকে উপক্ষো করে নিজেই নিজেকে আমীর দাবি করেছেন; যা শরিয়ত বিরোধী। তাই তার কোনোরূপ সিদ্ধান্ত-ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা যাবে না।

৩. দারুল উলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নেযামুদ্দিনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরূপভাবে নেযামুদ্দিন থেকে আগত কোনো জামাতকে বাংলাদেশের কোনো জেলায়/থানায়/ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।

৪. হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর বাতানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তী এই তিন হজরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল, টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সকল মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।

৫. কাকরাইল মসজিদের যে সমস্ত শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকিদা অনুসরণের হলফনামা করেছেন— যা শরিয়ত পরিপন্থি— তারা শুরার সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব, তাদেরকে তাবলিগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

৬. ২০১৮-এর টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯-এর টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ— প্রথম পর্ব ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারি এর সাথে আজকের মজমা ঐকমত্য পোষণ করছে।

সবেশেষ আল্লামা আহমদ শফি দা. বা. এর বিশেষ নসিহত ও দোয়ার মাধ্যমে ওযাহাতি জোড়ের সমাপ্তি ঘটে।