জোট গঠনে বিএনপিকে তিন শর্ত ড. কামালের

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১৯ ২০১৮, ১৯:৪২

বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে আপত্তি নেই বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের। তবে এ ঐক্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি।

প্রথম শর্ত- জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপিকে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী থাকলে তিনি সেই জোটে থাকবেন না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। ।

দ্বিতীয় শর্ত- জোটগতভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করা যাবে না। বিএনপি নিজেদের মতো করে তাদের দলের প্রধানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার থাকতে পারে, প্রয়োজনে আইনি লড়াইও অব্যাহত রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনকে জড়ানো যাবে না।

তৃতীয় শর্ত- জোটগতভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া যাবে না। বিএনপি চাইলে দলগতভাবে তারেক রহমানের প্রসঙ্গটি সামনে আনতে পারে। কিন্তু এর সঙ্গে জোটের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।

এসবের পাশাপাশি কোন কোন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জোট হতে পারে এ বিষয়টিও পরিষ্কার করেছেন তিনি। এর অংশ হিসেবে গণফোরামের পক্ষ থেকে সাত দফা লিখিত প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে।

জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর সরকারবিরোধী জোট গঠনে সায় দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার রক্ষায় সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনে আপত্তি নেই তার। তবে বিএনপিকে শর্তগুলো মেনে চলতে হবে।

জানা যায়, গণফোরামের পক্ষ থেকে বিএনপির তিন শীর্ষ নেতাকে সাত দফা লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে সংবিধানকে সমুন্নত রেখেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।

ক্ষমতায় এসে স্থানীয় সরকারসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী ও ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে বাইরে রাখা, নির্বাচন কমিশনকে আরও স্বাধীন এবং শক্তিশালী করা, না ভোটের বিধান যুক্ত করাসহ নির্বাচনী ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার করতে হবে। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা, সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার বিধান যুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা, স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, বিনা বিচারে হত্যা বন্ধ করতে হবে। মন্ত্রী-এমপি-আমলাসহ সবার সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে হবে। প্রশাসন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় প্রভাবের বাইরে রাখা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সাত দফা প্রস্তাবনা দিয়েছি। এর বিপরীতে বিএনপির পক্ষ থেকেও তাদের মতামত পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে শিগগির আলোচনায় বসব আমরা। আলোচনার টেবিলে বাকি বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যেসব ভুল করছে আমরা চাই সেসব ভুল ভবিষ্যতে আর না হোক। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে বর্তমান সরকারের মতোই যদি আচরণ করে, তাহলে লাভ হবে না। জনগণও হতাশ হবে। ভবিষ্যতে আর লুটপাট হবে না, ব্যাংক ডাকাতি হবে না, অর্থ পাচার ঠেকানো হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে, ভিন্ন মতের ওপর দমন-পীড়ন হবে না, গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হবে না- বিএনপিকেও এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। এসব বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেই বৃহত্তর জোট হবে।